You dont have javascript enabled! Please enable it!

আওয়ামীলীগের সিনিয়র নেতাদের বশীভূত করতে মোশতাক কী করেছে?

তারপর আবার আমরা গাড়িতে করে বঙ্গভবনে খন্দকার মোশতাকের শপথ অনুষ্ঠানে ফিরে এলাম। সাভার থেকে বঙ্গভবনে ফেরার পথে জানতে পারলাম বঙ্গবন্ধুর পুরো কেবিনেট থেকে পার্টির চার জন সিনিয়র মন্ত্রী/ সদস্যকে খন্দকার মোশতাক নিজের পজিশন পোক্ত করার জন্য আলাদা করেছেন এবং এরেস্ট করিয়েছেন। তারা হলেন জনাব সৈয়দ নজরুল ইসলাম, জনাব তাজউদ্দীন আহমেদ, জনাব মনসুর আলী এবং জনাব কামরুজ্জামান। এই চারজনের সবাই পার্টির র‍্যাংকিং এ খন্দকার মোশতাকের উপরে ছিলো। বাকি সবাইকে খন্দকার মোশতাকের কেবিনেটে যোগদান করতে বলা হল। এই চারজন সিনিয়র মন্ত্রী এবং জনাব আব্দুস সামাদ আজাদকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রটেক্টিভ কাস্টডিতে রাখা হল। আব্দুস সামাদ আজাদ খন্দকার মোশতাকের চেয়ে জুনিয়র হলেও তার ভিক্টিম হবার কারণটা হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের সময় খন্দকার মোশতাককে সরিয়ে তাকে ফরেন মিনিস্টার করা হয়েছিলো।

কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানোর আগে সিনিয়র নেতাদেরকে বঙ্গভবনে আনা হয়েছিলো। বঙ্গভবনে থাকা অবস্থায় খন্দকার মোশতাক তাদেরকে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সরকারের বদনাম করতে বলেছিলো। কিন্তু এইসব আত্মমর্যাদাসম্পন্ন নেতারা সেটা প্রত্যাখ্যান করে। খন্দকার মোশতাক তাদেরকে তার কেবিনেটে যোগ দিতে বললেও তারা অস্বীকৃতি জানায়। স্বভাবতই একজন জুনিয়র কলিগের অধস্তন হিসেবে কাজ করতে তাদের সন্মানে লাগার কথা। জনাব মন্সুর আলী ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তাকে আরও দুই দিন ধরে বোঝানো হলেও খন্দকার মোশতাক তার থেকে কথা আদায় করতে ব্যার্থ হয়। সে (মন্সুর) তার উপরের চাপ প্রত্যাখ্যান করে এবং একটি নির্দিস্ট পয়েন্টে স্থিরপ্রতিজ্ঞ থাকে যে, ভালো বা খারাপ যাই হোক না কেন সেও (মন্সুর) আগের সরকারের সমস্ত দায়ভারের অংশীদার। শুধু নেতাকে দোষারোপ করা নীতিগতভাবে ভুল। সে (মন্সুর) নিশ্চিত করে যে, আমাদের সবারই সত্যকে মেনে নেবার সৎসাহস থাকা উচিৎ। সে (মন্সুর) খন্দকার মোশতাককে এটাও মনে করিয়ে দেয় যে মোশতাক নিজেও বঙ্গবন্ধুর কেবিনেটের একজন সদস্য। এরকম কথাও শোনা যায় যে খন্দকার মোশতাক জনাব মন্সুর আলীকে প্রধানমন্ত্রী হবার প্রস্তাবও দিয়েছিলেন।

কেবিনেটের শপথ গ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ হতে হতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। এসময় ফরেন মিনিস্টার ড কামাল হোসেন দেশের বাইরে অবস্থান করছিলেন। কাস্টডিতে থাকা ঐ চারজন নেতা এবং দেশের বাইরে যারা আছে তারা বাদে বঙ্গবন্ধুর কেবিনেটের সবাইকেই খন্দকার মোশতাক তার কেবিনেটে নিয়ে নেয়। শপথ অনুষ্ঠানে সিভিল ও মিলিটারি অফিসারদের বাইরেও অনেক ডিপ্লোম্যাট দাওয়াত পেয়ে এসেছিলেন। জেনারেল জিয়া এবং ব্রিগেডিয়ার খালেদও উপস্থিত ছিলো। সাধারণত বিশিষ্টজনদের স্ত্রীদেরকেও দাওয়াত দেয়া হয়। কিন্তু সেদিনের অনুষ্ঠানটা স্ত্রীদের জন্য মোটেই অনুকূলে ছিলোনা। তবে তারপরেও, মিলিটারি অফিসারদের মধ্যে শুধুমাত্র মেজর রশিদের স্ত্রী সেখানে উপস্থিত ছিলো যাকে খুব একটিভ এবং সপ্রতিভ মনে হচ্ছিলো।

Translated by – সংগ্রামের নোটবুক
Reference: 15th August A National Tragedy Major Gen K M Safiullah BU PSC

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!