মুর্শিদাবাদ জেলার ১২৭ টি শিবিরে প্রশাসনিক অব্যবস্থা
মুর্শিদাবাদ, ২০ জুন (সংবাদদাতা)- মুর্শিদাবাদ জেলায় ফারাক্কা, লালবাগ থেকে শুরু করে কলাডাঙ্গা, ঘােষপাড়া, সাদিখার দেয়া, ভাদুড়িপাড়া, ডােমকল, ইসলামপুর, চেয়ারপাড়া, জলঙ্গী পর্যন্ত বিভিন্ন অঞ্চল জুড়ে রয়েছে ছােট বড় অন্ততঃ ১২৭ টি শিবির শরণার্থী সংখ্যা আড়াই লক্ষের কম নয় ।এই বিপুল সংখ্যক শরণার্থীর চাপে স্থানীয় অঞ্চলের নাগরিক স্বাস্থ্য-ব্যবস্থা ও প্রশাসন ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে। শিবির পরিচালনার ব্যবস্থায় কতগুলি মারাত্মক ত্রুটি বিচ্যুতির ফলে অবস্থা আরাে জটিল হয়ে পড়ে। ক্যাম্পগুলিতে সাধারণভাবে পানীয় জল সরবরাহ, স্যানিটেশন ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। এছাড়া মহামারীর সংক্রমণ প্রতিরােধ ব্যবস্থাও বিশেষ গড়েনি। একটা কথা পরিষ্কার জানানাে দরকার, আর যেখানেই হােক কলেরা প্রভৃতি সংক্রামক রােগ মুর্শিদাবাদ জেলায় এখনাে নিয়ন্ত্রিত হয়নি। জলঙ্গা শিবিরে প্রায় ২৫ শরণার্থী আছে। এখানে কলেরা মহামারী দেখা দিয়েছে। দশটি বেডের একটি ছােট্ট হাসপাতাল রয়েছে। সেটিও আবার নামেহ হাসপাতাল। না আছে প্রয়ােজনীয় ওষুধ-পত্তর, ভাল খাবার-দাবারের কথা তাে দূরের কথা। অথচ রােগীর চাপ এই হাসপাতালটিও সামলাতে পারছে না। কিছু কিছু স্বার্থান্বেষী মহল ও দলের পক্ষ থেকে আবরত চেষ্টা চলছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ক্ষুন্ন করার। দলমত নির্বিশেষে এখুনি এই ভেদবুদ্ধির বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ হওয়া দরকার নয়ত অবস্থা একদিন আয়ত্তের বাইরে চলে যেতে পারে। জলঙ্গী অঞ্চলের শিবিরগুলিতে কমিউনিস্ট পার্টির দরদীরা এই সাম্প্রদায়িক প্রবণতার মােকাবিলা করার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন। সীমান্ত জেলা হিসেবে এ ব্যাপারে এখনাে সজাগ সরকারী দৃষ্টি দেখা যাচ্ছে না। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির রাজ্য পরিষদের সম্পাদক শ্রীগােপাল ব্যানার্জির নির্দেশে শ্ৰী হেমন্ত কুমার মুখ্যোপাধ্যায় এবং মুর্শিদাবাদ জেলার যুবসংঘের সম্পাদক শ্রী রােজিৎ সিংহ শিবিরগুলাে পরিদর্শন করেন। তাদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার বিবরণ জেনে পার্টির জেলা সম্পাদক শ্রী সনৎ রাহা অব্যবস্থা দূর করার দাবি জানিয়ে জেলা শাসকের সঙ্গে দেখা করেন। কতৃপক্ষ অভিযােগ মেনে নিয়ে অবিলম্বে অবস্থার উন্নতি ঘটাবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
সূত্র: কালান্তর, ২২.৬.১৯৭১