You dont have javascript enabled! Please enable it!

তাজউদ্দীন সাহেব বঙ্গবন্ধুর ভালটাই সবসময় চাইতেন। বঙ্গবন্ধুর বিন্দুমাত্র ক্ষতি বা খারাপ তিনি চাচ্ছেন এটা আমার কোন দিনই মনে হয়নি। তাঁর কার্যকলাপেও দেখিনি। বঙ্গবন্ধুর ভাল চেয়েই বিশ্বাস করে হয়ত তিনি কিছু বলেছেন, কিন্তু কেউ হয়ত উল্টো কথা বঙ্গবন্ধুর কাছে গিয়ে বুঝিয়ে এসেছেন। সেই সময়ের সমস্ত ঘটনা দেখে আমার যেটুকু ধারণা, শেখ মণি তাজউদ্দীন সাহেবের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এই বিষয়ে আমি প্রমাণ করতে পারব না, কারণ আমার সাথে শেখ মণির কোন সম্পর্ক ছিল না, সে আদৌ কিছু বলেছে কিনা তাও জানি না, কিন্তু এটা আমার একটা ধারণা, হয়ত আমার ভুলও হতে পারে যে, কান-কথা বলায় মােশতাকের চাইতে শেখ মণির ভূমিকা বেশি ছিল। এছাড়াও অন্য কেউ, কোন মন্ত্রীও থাকতে পারেন। ‘৭৩-এর শুরু থেকে এই টেনশনটা শুরু হয় যে, তাজউদ্দীন সাহেব মনে

করতেন প্রায় সময়ই আর তাঁর কথা শােনা হয় না। বঙ্গবন্ধুর যেন তাঁর প্রতি আগ্রহ কম। এই ভুল বােঝাবুঝিতে তাঁদের কী হল তা তাে আমরা দেখেছি, কিন্তু বাংলাদেশের জন্য তা হল সবচাইতে বড় ট্র্যাজেডি। আমার মনে আছে, যে দিন বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে ফিরে এলেন ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি তারিখে, সে দিনের সেই বিশাল জনসমুদ্রে তাঁর সাথে আমি সরাসরি দেখা করতে পারিনি। তাই ১২ তারিখে বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা করতে আমি ধানমন্ডির ১৮ নম্বর রােডের যে বাড়িতে মুক্তিযুদ্ধের সময় বেগম মুজিব ছিলেন সে বাড়িতে গেলাম। বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা হলে শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর তিনি বললেন, ‘আগামীকাল সকাল দশটার সময় আসেন। আপনার সাথে জরুরী কথা আছে। আমি পরদিন সকাল দশটায় গিয়ে দেখি তাজউদ্দীন সাহেব, নজরুল সাহেবসহ তিন-চারজন মন্ত্রী সেখানে আছেন। এছাড়া অন্যান্য মানুষজন তাে আছেই। বঙ্গবন্ধু তার বেডরুমে বসে বিভিন্নজনকে বিভিন্ন পদে নিয়ােগ দিচ্ছেন। অর্থাৎ তিনি বাংলাদেশ সরকার গঠন করছেন। আমাকে দেখেই বললেন, প্রফেসর সাহেব, বসেন। আপনি আজ থেকে প্ল্যানিং কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান। প্ল্যানিং কমিশনের কী কার্যক্রম হবে কে মেম্বার হবে এই সব লিখে পরশু দিন সেক্রেটারিয়েটে নিয়ে আসেন। এক কথায় বঙ্গবন্ধু প্ল্যানিং কমিশনের সিদ্ধান্ত দিয়ে দিলেন। আমার স্পষ্ট মনে আছে, একটু পরেই বঙ্গবন্ধু মতিউল ইসলামকে ডাকলেন। তারপর তাজউদ্দীন সাহেবের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘তাজউদ্দীন, মতিউল ইসলাম তােমার অর্থ সচিব। ও খুব ভাল মানুষ। আমি চিনি তাকে, তােমার জন্য খুব ভাল হবে।’ তাজউদ্দীন সাহেব হাঁ করে বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে থাকলেন। তাঁর সাথে আলাপ করা হয়নি, কিছুই বলা হয়নি, হঠাৎ করেই এই নিয়ােগ দেয়া হল। বেচারা তাজউদ্দীন সাহেব জানতেন পর্যন্ত না যে এই মানুষটি কে! তাজউদ্দীন সাহেবের সাথে আমার সম্পর্ক ছিল বন্ধুর মত। আমরা অনেক কথাবার্তা বলতাম। আমি বুঝতাম তিনি এই বিষয়টি কোন দিনও ভােলেননি। এছাড়াও আর একটি বিষয় ছিল, মতিউল ইসলাম সাহেবের সাথে বঙ্গবন্ধু সরাসরি যােগাযােগ রাখতেন—যা তাজউদ্দীন সাহেবের মত সিনিয়র এবং গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীর পক্ষে মেনে নেওয়াটা খুব সহজ ছিল না। আমি বুঝতাম হি ইজ ভেরি আনহ্যাপি, কিন্তু তিনি কোন দিনই পরিষ্কার করে কিছু বলেননি বা এই বিষয়ে অভিযােগ আকারেও কিছু বলতেন না। বঙ্গবন্ধুর প্রতি তাজউদ্দীন সাহেবের প্রশ্নাতীত এবং অতুলনীয় ভালবাসা ছিল, যে কারণে বুঝতে পারতাম বঙ্গবন্ধুর প্রতি প্রচণ্ড অভিমান ছিল তাঁর। তিনি কিন্তু এই ব্যাপারে ঘুণাক্ষরেও মতিউল ইসলামকে কোন রকম দোষারােপ বা তার বিরুদ্ধে কোন অভিযােগ করেননি। তাঁর অভিমানটা ছিল বঙ্গবন্ধুর উপর। তাজউদ্দীন সাহেব মনে করতেন, বঙ্গবন্ধুর উচিত মন্ত্রীকে বাদ দিয়ে সরাসরি সচিবের সাথে দেখা করার বিষয়টিকে উৎসাহিত না করা। তাজউদ্দীন সাহেব আসলেই যে একজন ব্যতিক্রমধর্মী মানুষ ছিলেন তার একটি উদাহরণ দেই। মতিউল ইসলাম সাহেব অনেক সময় বিভিন্ন ইস্যুতে তার নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করতেন যা আমাদের মতামতের চাইতে ভিন্ন হত। হি ওয়াজ আ প্রাইভেট সেক্টর ম্যান, আর আমরা সমাজতন্ত্র করতে চাচ্ছি, কাজেই মৌলিক পার্থক্য ছিল। কিন্তু তাজউদ্দীন সাহেব দ্বিমত হলেও সব সময় আগ্রহ সহকারে মতিউল ইসলামের মতামত শুনতেন, জিজ্ঞাসা করতেন। মতামত প্রকাশের ক্ষেত্রে কখনই তাকে বাধা দিতেন না, রাগ করতেন না, বা এমন ধরনের কোন আচরণই করতেন না। মতিউল ইসলাম সাহেব অত্যন্ত সৎ এবং ভাল মানুষ। তিনি কারাে বিরুদ্ধে অগােচরে কোন কথা বলতেন না। যা বলতেন সরাসরি, এই গুণটি ছিল তাঁর। আমি দেখেছি এসব কারণেই তাজউদ্দীন সাহেব তাকে কিছু দিনের মধ্যেই পছন্দ করতে শুরু করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধবিরােধী তৎপরতায় জোরালাে সমর্থন এবং ভূমিকার কারণে তাজউদ্দীন সাহেব আমেরিকার প্রতি ভয়ানকভাবে সন্দিহান ছিলেন। তার এই আচরণ খুবই স্বাভাবিক, কারণ আমরা প্রাণপণে স্বাধীনতা সংগ্রাম করছি আর ওই দিকে আমেরিকা আমাদের বিরুদ্ধে সপ্তম নৌবহর পাঠিয়ে দিল। তারা আমাদের যুদ্ধকে সাবােটাজ করার জন্য খন্দকার মােশতাকের সঙ্গে গােপন যােগাযােগ করেছে। এসব সন্দেহ থেকেই তিনি বলেছিলেন, আমরা আমেরিকার সাহায্য নেব না। তাঁর মনােভাবটা অত্যন্ত কঠোর ছিল আমেরিকার ব্যাপারে, কিন্তু তিনি যখন রাষ্ট্র চালাতে গেলেন, আমি মনে করি তখন তিনি দেখলেন বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ আর আমার (তার) ব্যক্তিগত অনুভূতি তাে এক জিনিস নয়। মানবিক অনুভূতি দিয়ে রাষ্ট্র চালান যায় না। কাজেই তিনি তাঁর ভাবনা-চিন্তা রেকনসাইল করেছিলেন। এখানেই তাজউদ্দীন ছিলেন অন্য সবার চাইতে আলাদা, সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী মানুষ। ভীষণ গ্র্যাগম্যাটিক ছিলেন তিনি। ইন্টারেস্টিং একটা ঘটনা বলি। আমরা তখনও বিশ্বব্যাংকের সদস্য হইনি। ১৯৭২ সালের জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট রবার্টম্যাকনামারা ভারতে এসেছেন। সেখান থেকে খবর এল তিনি ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় আসবেন। এদিকে তাজউদ্দীন সাহেব তখন দিল্লীতে গিয়েছিলেন। আমরা আশা করছিলাম রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবে দু’জনেই যখন একই জায়গায় আছেন তখন নিশ্চয়ই দেখা-সাক্ষাৎ হবে। কিন্তু পরে আমার কিছু পরিচিত ভারতীয়দের কাছ থেকে খবর পেলাম দু’জনের দেখা হয়নি। ম্যাকনামারা দেখা করতে চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু তাজউদ্দীন সাহেব বলেছেন, আমি এখন ব্যস্ত। দিল্লীতে একটি সাউন্ড অ্যান্ড লাইট শাে হয়, সেখানে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বিশিষ্ট অতিথিদের জন্য অনুষ্ঠানের আয়ােজন করেছিলেন। সেখানে ম্যাকনামারা এবং তাজউদ্দীন সাহেবের আসন ব্যবস্থা এমনভাবে করা হয়েছিল যেন তারা পাশাপাশি বসতে পারেন। কিন্তু তাজউদ্দীন সাহেব তার সাথে তাে কথা বলেনইনি, এমনকি ঘুরেও তাকাননি। এদিকে আমি তাে ঢাকা থেকে জানতে পারছি না যে ওঁদের দু’জনের দেখা হচ্ছে।

তাই ভাবছি ব্যাপার কী ? সরাসরি বিশ্বব্যাংক ম্যাকনামার খবর পাঠাচ্ছে যে তিনি আসবেন, কিন্তু অর্থমন্ত্রীর মাধ্যমে কোন খবর আসছে না। অথচ তিনি সেখানে উপস্থিত আছেন। ব্যাংক আলাদা করে খবর পাঠাচ্ছে, অথচ তাজউদ্দীন সাহেব কোন খবর পাঠাচ্ছেন না, আমি বেশ উদ্বিগ্ন যেহেতু আমাকে সমস্ত কিছু ম্যানেজ করতে হবে। ম্যাকনামারা যে দিন ঢাকায় আসবেন তার আগের দিন তাজউদ্দীন সাহেব দিল্লী থেকে ঢাকায় ফিরলেন। দুপুরে বঙ্গবন্ধু, তাজউদ্দীন সাহেব এবং আমি একসাথে বসলাম ম্যাকনারাকে কে রিসিভ করবে, মিটিং কার কার সাথে হবে, ডিনার লাঞ্চ কোথায় হবে ইত্যাদি বিষয়গুলাে আলােচনা করে ঠিক করার জন্য। ম্যাকনামারা আমার পূর্বপরিচিত ছিলেন, সেইসূত্রে তিনি আমার সাথেও প্রাইভেট লাঞ্চ খেতে চান এমন খবর পাঠিয়েছিলেন। তাই এই প্রস্তাবসহ আমি মােটামুটিভাবে তৈরি করা প্রােগ্রাম সম্বন্ধে এক এক করে বিস্তারিত বললাম। আমি বললাম, ম্যাকনামারাকে রিসিভ করবেন বঙ্গবন্ধু।’ বঙ্গবন্ধু বললেন, তাজউদ্দীন, তুমি কী বল ? তাজউদ্দীন সাহেব বললেন, মুজিব ভাই, আপনার এয়ারপাের্ট যাবার কোন প্রশ্নই ওঠে না। আমি বললাম, আপনি আপত্তি করছেন, কিন্তু অন্য অনেক জায়গায় তাে এমনই হয়।’ তাজউদ্দীন সাহেব বললেন, ‘অন্য জায়গায় যা হয় এখানে সেটা চলবে না, চীফ অফ প্রটোকল যাবে। আমি বললাম, বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট যখন পাকিস্তানে যেতেন তখন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী কিংবা যিনি পরিকল্পনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান যিনি থাকতেন তিনি যেতেন। আর আপনি চীফ অফ প্রটোকল পাঠিয়ে দেবেন?’তাজউদ্দীন সাহেব বললেন, ‘ঠিক আছে, আপনি যখন বলছেন, তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর যাবে। আপনিও যাবেন না।’ বঙ্গবন্ধু সব শুনছিলেন। বললেন, ঠিক আছে, তাজউদ্দীন যা বলছে তাই করেন। তাজউদ্দীন সাহেবের সাথে আমার সম্পর্কটা খুব সুন্দর ছিল। তাই আমি ঠাট্টা করে বললাম, ঠিক আছে, রিসিভ করতে না হয় গেলাম না। কিন্তু লাঞ্চ খেতে দেবেন, না তাও দেবেন না ? তাজউদ্দীন সাহেব বললেন, না, আপনি লাঞ্চ খেতে পারবেন না। কেন ম্যাকনামারা আপনাকে গােপনে লাঞ্চ দেবে ? সবাই মিলে একটা পার্টি হতে পারে।’ পরদিন ম্যাকনামারা এলেন। প্রথম মিটিংয়ে বঙ্গবন্ধু, তাজউদ্দীন সাহেব, ম্যাকনামারা এবং আমি। প্রাথমিক আলােচনার পর বিস্তারিত আলােচনার জন্য ম্যাকনামারা, তাজউদ্দীন সাহেব এবং আমি যখন বসলাম তখন ম্যাকনামারা জানতে চাইলেন বাংলাদেশের জন্য কোথায় কী ধরনের সাহায্য দরকার। তাজউদ্দীন সাহেব বললেন, “আমাদের যা দরকার তা আপনি দিতে পারবেন কিনা আমার সন্দেহ আছে।’ ম্যাকনামারা বললেন, ‘মিস্টার মিনিস্টার, আপনি বলুন, আমরা চেষ্টা করব দিতে।’ তখন তাজউদ্দীন সাহেব বললেন, ‘মিস্টার ম্যাকনামারা, আমার গরু এবং দড়ি দরকার। যুদ্ধের সময় গরু সব হারিয়ে গেছে। এখানে ওখানে চলে গেছে, মরে গেছে। পাকিস্তান যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছে, চাষীরা এদিক সেদিক পালিয়ে গেছে, তখন গরু হারিয়ে গেছে। এখন যুদ্ধ শেষ, কিন্তু গরু নাই, তাই চাষ করবে কীভাবে? কাজেই আমাদের অগ্রাধিকার চাহিদা হল গরু।’ ম্যাকনামারার চোখ-মুখ লাল হয়ে যাচ্ছে। তাজউদ্দীন সাহেব বললেন, “আর আমাদের সমস্ত দড়ি তাে পাকিস্তানিরা নষ্ট করে ফেলেছে, এখন গরু পেলে গরু বাঁধতে দড়ি প্রয়ােজন। গরু এবং দড়ি প্রয়ােজন খুব তাড়াতাড়ি, না হলে সামনে জমিতে চাষ হবে না।’ আমার পরিষ্কার মনে আছে, আমি একবার জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাকাই, এদিকে ওদিকে তাকাই, তারপর বললাম, আমাদের এই প্রয়ােজনের পাশাপাশি আরাে অন্যান্য প্রয়ােজনও আছে।’ এই বলে কোনভাবে মিটিং শেষ করলাম। মিটিং শেষে আমি তাজউদ্দীন সাহেবকে বললাম, আপনি এমন কেন বললেন ? তিনি বললেন, ‘কেন, গরু ছাড়া কি চাষ হয় ?’ মহা চটে ছিলেন। বললেন, এই লােকটি তাে আমেরিকার ডিফেন্স সেক্রেটারি ছিলেন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে ধ্বংস করে দিতে চেয়েছে আমেরিকা। আমাদেরকে স্যাবােটাজ করেছে। শেষ পর্যন্ত সপ্তম নৌবহর পাঠিয়েছে আমাদেরকে ধ্বংস করে দিতে। আমি যুক্তি দিলাম, সপ্তম নৌবহর মার্কিন সরকার পাঠিয়েছিল, সে পাঠায় নাই। যাই হােক, ম্যাকনামারার মুখ লাল হল বটে কিন্তু পরে ফলাফল ভাল হয়েছিল। আজ আমি এই ঘটনা বলছি মুক্তিযুদ্ধের ২৭ বছর পর। জানি না সে দিন হয়ত তাজউদ্দীন সাহেবের জায়গায় আমি থাকলেও একই রকম ভাবতাম, কারণ আমরা জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করছি আর ওরা আমাদেরকে মেরে ফেলতে সবরকম সহযােগিতা করছে। আসলে তাজউদ্দীন সাহেব সাংঘাতিক দেশপ্রেমিক মানুষ ছিলেন। তিনি বুঝতেন আমরা বড় দেশকে কিছু করতে পারব না। সেই ক্ষমতা আমাদের নেই। কিন্তু আমাদের আত্মসম্মানবােধ আছে, আমরা কারাে দয়া চাই না, এই জিনিসটি তিনি বুঝিয়ে দিতে চেয়েছেন, আর কোন উদ্দেশ্য তার ছিল না। পরবর্তীতে আমি দেখেছি, তাঁর সাথে বিশ্বব্যাংকের বিভিন্ন মিটিংয়ে আমি গেছি, দেশের স্বার্থে তিনি সম্পূর্ণ ভিন্ন মানুষ। তাজউদ্দীন সাহেব অত্যন্ত নির্ভুলভাবে খুব অল্প কথায় সমস্ত বিষয় তুলে আনতে পারতেন। তাঁর এই বিশেষত্বটি ছিল। আমি আগেই বলেছি, তিনি অত্যন্ত বুদ্ধিমান ছিলেন এবং রাজনীতিবিদরা সাধারণত যে ধরনের কথাবার্তা বলেন তিনি তেমন বলতেন না। তাঁর এই পরিষ্কার এবং স্ট্রেট কথার ফলে সবাই তার প্রতি আকৃষ্ট হতেন এবং বাংলাদেশের পক্ষে সহজেই বিষয়গুলােকে নিয়ে আসা সম্ভব হত। এটা ঠিক, শুধু ম্যাকনামারাই নয়, যে কোন বিদেশী যারাই তাজউদ্দীন সাহেবের সাথে কথা বলেছেন তারা প্রত্যেকেই তার সম্পর্কে অগাধ শ্রদ্ধা পােষণ করেছেন। তার ক্যাপাসিটি সম্পর্কে কারাে কোন সন্দেহ ছিল না। আর একটা জিনিস ছিল তাঁর, যেখানে কোন ভুল হচ্ছে তিনি সেই ভুলটা স্বীকার করতেন। বুঝতে পারতেন সঙ্গে সঙ্গে।

নূরুল ইসলাম

তাজউদ্দীন আহমদ – আলোকের অনন্তধারা 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!