কুমিল্লার সেই রাজাকার ওয়াদুদ মওলানা আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত
আবুল কাশেম হৃদয়, কুমিল্লা থেকে ॥ কুমিল্লার লাকসামের সেই রাজাকার মওলানা আবদুল ওয়াদুদকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ‘৭১-এর কুখ্যাত এই রাজাকার ছিল লাকসাম উপজেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য। গত ২৭ মার্চ দৈনিক জনকণ্ঠে ‘সেই রাজাকার নিয়ে জোর আলােচনা | তিন পাকি। সহযােগী এখন আওয়ামী লীগ নেতা’ শীর্ষক এক রিপাের্টে আবদুল ওয়াদুদসহ শামসুল হক মােল্লা ও নূরুল হক সানুর ‘৭১-এর ভূমিকা তুলে ধরা হয়েছিল। এই রিপাের্ট প্রকাশের পর কুমিল্লাসহ সর্বত্র ব্যাপক তােলপাড় সৃষ্টি হয়। রিপাের্টটি প্রকাশের প্রায় এক মাস পর লাকসাম উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী পরিষদের এক সভায় সর্বসম্মতিক্রমে পরিষদের আইন বিষয়ক সম্পাদক রাজাকার ওয়াদুদ মওলানাকে। বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও স্থানীয় সংসদ সদস্য তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি এ্যাডভােকেট আবুল বাসার জনকণ্ঠে প্রকাশিত রিপাের্ট তুলে ধরে তাকে বহিষ্কার করার দাবি জানান।
উপস্থিত অনেকে ওয়াদুদ মওলানার রাজাকার ভূমিকার বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন তাঁরা জনকণ্ঠের রিপাের্ট সঠিক ও তথ্যনির্ভর অবহিত করে তার সত্যতা যাচাই করেছেন বলে জানান। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে তাকে আইন বিষয়ক সম্পাদকের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। সভার রেজুলেশন ও বিষয়টি অবহিত করে জেলা আওয়ামী লীগকে চিঠি দেয়া হবে দু’এক দিনের মধ্যে। উপজেলা আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কারের পর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পদটি স্বাভাবিকভাবে বাতিল হয়ে যাবে বলে আওয়ামী লীগ নেতারা অভিমত ব্যক্ত করেন। অন্যদিকে তিন পাকি সহযােগীর অপর দু’জন কুমিল্লা চেম্বারের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান সদস্য শামসুল হক মােল্লা ও দুর্গাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল হক সানুকে জেলা আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কারের দাবির প্রেক্ষিতে তাদের বহিষ্কারের বিষয়টি জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে আলােচিত হচ্ছে। জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সভা যেদিন অনুষ্ঠিত হবে সেদিন তাদের বহিষ্কার করা হতে পারে বলে জেলা আওয়ামী লীগের অনেক নেতা জানিয়েছেন। উল্লেখ্য, এই তিন পাকি সহযােগীর মধ্যে শামসুল হক মােল্লা সংবাদ সম্মেলন করে রাজাকার ছিল না বলে দাবি করার পর কুমিল্লার অসংখ্য মুক্তিযােদ্ধা বিবৃতি দিয়ে তার ‘৭১-এর ভূমিকা তুলে ধরেন। এমনকি একজন বীর প্রতীক তার পক্ষে সাফাই গাওয়ায় মুক্তিযােদ্ধারা তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বহিস্কৃত ওয়াদুদ মওলানার বিরুদ্ধে অনেক হত্যা ও লুটপাটের সহযােগী বলে অভিযােগ। রয়েছে। লাকসামে সে ‘রাজাকার ওয়াদুদ মওলানা’ নামে পরিচিত।
জনকন্ঠ ॥ ০৩-০৫-২০০১
সূত্র : সেই রাজাকার – জনকন্ঠে প্রকাশিত রিপোর্টের সংকলন