সেই রাজাকার চবি শিক্ষক অবশেষে সাসপেন্ড
তৌহিদ ইবনে ফরিদ, চবি থেকে ॥ দৈনিক জনকণ্ঠের ‘সেই রাজাকার’ কলামে প্রকাশিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মােঃ রেজাউল করিমকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। নিষিদ্ধ করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তার আগমন। একই সাথে তার বিরুদ্ধে চূড়ান্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গঠন করা হয়েছে তিন সদস্যের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি তদন্ত কমিটি। মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৬৮তম সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে মাগুরায় স্বাধীনতাবিরােধী ভূমিকা পালন এবং তার আত্মস্বীকৃতিমূলক বক্তব্যের কারণে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট রেজাউল করিমকে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেয়। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধবিরােধী ভূমিকার কারণে এই প্রথম কোন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের ৩৬৮তম সভা শুরু হয়। সভা শুরুর পর থেকেই রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে ছাত্র-শিক্ষকসহ বিভিন্ন সংগঠন প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠে। এ সভায় প্রায় ৪০টি এজেন্ডা থাকলেও রেজাউল করিমের এজেন্ডা নিয়েই পুরাে সভায় পর্যালােচনা চলে বলে এক সিন্ডিকেট সদস্য জানান। পূর্ব ঘােষিত কর্মসূচী অনুযায়ী মুক্তিযােদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সদর ইউনিট কমান্ড, ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন ও বঙ্গবন্ধু পরিষদ শুরু থেকেই সিন্ডিকেট সভা ঘেরাও করে রাখে। একে একে এসব সংগঠনের পক্ষ থেকে। রেজাউল করিমের শাস্তির দাবিতে উপাচার্য অধ্যাপক ফজলী হােসেনের কাছে পেশ করা হয় স্মারকলিপি । বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত সিন্ডিকেট সভা চলাকালীন বিভিন্ন সংগঠন।
ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ কর্মসূচী অব্যাহত রাখে। দৈনিক জনকণ্ঠে প্রকাশিত সংবাদসহ বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে স্বাধীনতাবিরােধী ভূমিকার কারণে রেজাউল। করিমের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে সিন্ডিকেট সম্মতি গ্রহণ করে। সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্তসহ ক্যাম্পাসে তার আগমন নিষিদ্ধ করা হয়। চূড়ান্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে রিপাের্ট জমা। দিতে বলা হয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট সদস্য ইকবাল সােবহান চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে গঠিত এ কমিটির অন্য দু’জন সদস্য হচ্ছেন যথাক্রমে ড. ইউসুফ শরীফ আহমদ খান ও এসএম ফজলুল হক। দক্ষিণ জেলা মুক্তিযােদ্ধা সংসদ রেজাউল করিমের শাস্তি ছাড়াও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। মুক্তিযােদ্ধা ভর্তিকোটা বৃদ্ধির দাবি জানায়। ঘেরাও চলাকালে আয়ােজিত বিক্ষোভসমাবেশে বক্তব্য রাখেন সংসদের কমান্ডার মােহাম্মদ ইদ্রিস, ডেপুটি কমান্ডার প্রদ্যোত কুমার পাল, ডা, সালেহ আহম্মদ, রুস্তম আলী প্রমুখ। রেজাউল করিমের শাস্তির দাবিতে ছাত্রলীগ সারাদিন ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নাসির হায়দার বাবুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন। ছাত্রলীগ নেতা আলী মর্তুজা, নাজিমুদ্দিন শিমুল, আজাদ, শহিদুল ইসলাম বাহার প্রমুখ । উল্লেখ্য, গত ১১ এপ্রিল জনকণ্ঠের সেই রাজাকার কলামে প্রকাশিত সংবাদে রেজাউল করিম রিজুর স্বাধীনতাবিরােধী ভূমিকা ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বমহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। পরদিনই ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সকল। একাডেমিক দায়িত্ব থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয় বিভাগীয় সভায় । ছাত্রলীগ ও বঙ্গবন্ধু পরিষদ তাকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘােষণা করে।
জনকণ্ঠ ॥ ১৮-০৪-২০০১
সূত্র : সেই রাজাকার – জনকন্ঠে প্রকাশিত রিপোর্টের সংকলন