You dont have javascript enabled! Please enable it! কুমিল্লার বিশিষ্ট মুক্তিযােদ্ধাদের বিবৃতি ॥ জনকণ্ঠই সঠিক, এই পাকি সহযােগীদের আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করুন - সংগ্রামের নোটবুক

কুমিল্লার বিশিষ্ট মুক্তিযােদ্ধাদের বিবৃতি ॥ জনকণ্ঠই সঠিক, এই পাকি সহযােগীদের আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করুন

জনকণ্ঠ রিপাের্ট ॥ গত ২৭ মার্চ দৈনিক জনকণ্ঠের ‘সেই রাজাকার’ কলামে প্রকাশিত। তিন পাকি সহযােগী এখন আওয়ামী লীগ নেতা” শীর্ষক সংবাদটি সম্পূর্ণ সঠিক ও তথ্যভিত্তিক ছিল। কুমিল্লা জেলার বিশিষ্ট মুক্তিযােদ্ধারা বিবৃতির মাধ্যমে জানিয়েছেন যে, বস্তুনিষ্ঠ ওই সংবাদ প্রকাশিত হবার পর সংশ্লিষ্ট রাজাকাররা এখন নিজেদের মুক্তিযােদ্ধা প্রমাণের নানা অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। এ জন্য তারা স্বার্থান্বেষী মহলের প্রশ্রয়ে বানােয়াট গল্পও তৈরি করছে। উল্লেখ্য, জনকণ্ঠের ওই রিপাের্টে শামসুল হক মােল্লা, নূরুল হক সানু এবং ওয়াদুদ মওলানার পাকি বাহিনীর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কথা এসেছিল। এর প্রেক্ষিতে শামসুল হক মােল্লা ক’দিন আগে কুমিল্লায় এক সংবাদ সম্মেলন করে তার ‘রাজাকার’ থাকার কথা অস্বীকার করে। এমনকি উল্টো জনকণ্ঠের সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদকের বিরুদ্ধেই উত্থাপন করে বানােয়াট অভিযােগ।

এরপর গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ মুক্তিযােদ্ধা সংসদ কুমিল্লা জেলা কমান্ডের ১২ মুক্তিযােদ্ধা এক বিবৃতির মাধ্যমে জোর দিয়ে বলেছেন যে, শামসুল হক মােল্লা ১৯৭১ সালে রাজাকার ছিল। তার বাড়িতে পাকি সেনা কর্মকর্তারা যাতায়াত করত। এসব কারণে যুদ্ধ চলাকালে মুক্তিযােদ্ধারা শামসুল হক মােল্লার বাড়িতে বােমা নিক্ষেপের পরিকল্পনাও নেয়। বিবৃতি দানকারী মুক্তিযােদ্ধারা রাজাকার শামসুল হক মােল্লা ও তার অপর দুই সহযােগীকে স্বাধীনতা যুদ্ধে। নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়ে বলেন, সংবাদ সম্মেলন করে সে মিথ্যা ও বানােয়াট বক্তব্য দিয়েছে নিজের অপকর্ম ঢাকার জন্য। বিবৃতিদাতারা হলেন পশ্চিম জোড়াকানন ইউনিয়ন কমান্ডের কমান্ডার এমএ আউয়াল খান, ঠাকুরপাড়া ইউনিয়ন কমান্ডের কমান্ডার মিয়া মােঃ সেলিম হােসেন, কালিয়াজুরি ইউনিয়ন কমান্ডের কমান্ডার মােঃ শাহজাহান, বিশিষ্ট মুক্তিযােদ্ধা নজীর আহমেদ, জাহিদ হাসান, রেজাউর রহমান বুলবুল, আব্দুল মােমিন চৌধুরী, মােঃ ইমতিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, মােতাহের হােসেন বাবুল, সিরাজুল ইসলাম, আবুল কাশেম ও আব্দুছ ছালাম।

এদিকে কুমিল্লার আওয়ামী লীগ নেতা, বিশিষ্ট মুক্তিযােদ্ধা এবং প্রাক্তন পৌর চেয়ারম্যান আকম বাহাউদ্দিন বাহার পৃথক এক বিবৃতিতে জনকণ্ঠের ২৭ মার্চের রিপাের্টকে সম্পূর্ণ সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ উল্লেখ করে বলেন, ওই তিন স্বাধীনতাবিরােধীকে যারা আশ্রয় দিয়েছে এবং দিচ্ছে তারা ইতিহাস বিকৃত করছে। তাদের সম্পর্কে জনগণকে সতর্ক থাকতে হবে। তিনি আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি অক্ষুন্ন রাখার স্বার্থে ওই তিন ব্যক্তিকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কারের দাবি জানান। কুমিল্লা শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সফিকুল ইসলাম শিকদার পৃথক এক বিবৃতিতে বলেছেন, শামসুল হক মােল্লা, নূরুল হক সানু ও ওয়াদুদ মওলানা যে রাজাকার ছিল তাতে বিন্দুমাত্রও সন্দেহ নেই। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, রাজাকার হয়েও তারা আজ আওয়ামী লীগ নেতা। আমরা এই কলঙ্ক আর বয়ে বেড়াতে চাই না। তাই অবিলম্বে এই তিন পাকি সহযােগীকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কারের দাবি জানাই। ঢাকায় কুমিল্লার রাজাকারদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ ও সমাবেশ গ্রেফতার ও বিচার দাবি।

কুমিল্লার কুখ্যাত রাজাকার, আওয়ামী লীগের আশ্রিত শামসুল হক মােল্লা, ৩ নং দুর্গাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল হক সানু, মাধাইয়ার খালেক আড়তদার ও লাকসামের আদম শফিউল্লাকে অবিলম্বে গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে ঢাকাস্থ বৃহত্তর কুমিল্লা ছাত্র যুব ঐক্য পরিষদ ৩ এপ্রিল সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে এক বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে। সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি গাজী এমদাদের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন আশফাকুজ্জামান, রফিক সিকদার, আলী আজগর, মীর্জা আতিকুল্লাহ প্রমুখ। বক্তারা মুক্তিযােদ্ধার মিথ্যা পরিচয়ধারী’ উল্লিখিত স্বাধীনতাবিরােধীদের সামাজিকভাবে বয়কটের আহ্বান জানান। তারা জনকণ্ঠের ‘সেই রাজাকার’ কলামের ভূয়সী প্রশংসা করেন। সংগঠনের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানাে হয় এ তথ্য।

জনকণ্ঠ ॥ ০৫-০৪-২০০১

সূত্র : সেই রাজাকার – জনকন্ঠে প্রকাশিত রিপোর্টের সংকলন