You dont have javascript enabled! Please enable it!

সেই রাজাকার’ নিয়ে কুমিল্লায় জোর আলােচনা তিন পাকি সহযােগী এখন আওয়ামী লীগ নেতা

কুমিল্লা, ২৬ মার্চ, নিজস্ব সংবাদদাতা ॥ কুমিল্লার সর্বত্র একটাই আলােচনা সেই রাজাকার’। জেলার অফিস-আদালত, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, চা দোকান, রাজনৈতিক অঙ্গন, পাড়া-মহল্লা যেখানেই আড্ডা বসে সেখানেই কোন না কোনভাবে আলােচনায় আসছে ‘সেই রাজাকার’, চলছে বিতর্ক। আলােচনা-বিতর্কে অংশ নিচ্ছে সর্বোচ্চ থেকে সর্বনিম্ন পর্যায়ের মানুষও। গত শুক্রবার দৈনিক জনকণ্ঠে চান্দিনার মাধাইয়ার কুখ্যাত রাজাকার খালেক আড়তদারের কুকীর্তি প্রকাশিত হওয়ার পর সেখানে তােলপাড় অব্যাহত। রয়েছে। ফটোকপির দোকানগুলােতে এখন সে রিপাের্টটি ২-৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সেখানকার অফিস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, চা দোকান, আউড়ায় আলােচনা হচ্ছে সেই রাজাকারকে নিয়ে। তাকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছে। অপরদিকে কুমিল্লা শহরে এখন সবচেয়ে বেশি আলােচনা হচ্ছে শামসুল হক মােল্লা, মওলানা আবদুল ওয়াদুদ ও নূরুল হক সানু-এই তিন রাজাকারকে নিয়ে। এই তিন জন এখন জেলা আওয়ামী লীগ নেতা (কার্যকরী কমিটির সদস্য)। কুমিল্লার কয়েক মুক্তিযােদ্ধা জানান, কুমিল্লা চেম্বারের সাবেক সভাপতি শামসুল হক মােল্লার বাসা ছিল পাকি সেনা অফিসারদের আড্ডাখানা। জলসা হতাে তার বাসায়। অনেক মেয়েকে দিয়ে পাকি সেনা অফিসারদের মনােরঞ্জন করানাে হতাে। সে ছিল পিস কমিটির সদস্য। লাকসামের মওলানা আবদুল ওয়াদুদ ছিল অনেক হত্যা ও লুটপাটের নায়ক। লাকসামে সে ‘রাজাকার ওদুদ মওলানা’ নামে পরিচিত। আর দুর্গাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নূরুল হক সানু ওরফে সানু মিয়া ছিল পাকি সেনাদের রসদ সরবরাহকারী।

পাকি জীপে করে চলাফেরা করত সে জনকণ্ঠ এই তিন রাজাকারকে নিয়ে প্রতিবেদন না লিখলেও তাদের কথা এখন। কুমিল্লাবাসীর মুখে মুখে। এসব রাজাকার নিজেদের অনেকটা গুটিয়ে রেখেছে। তাদের কাছে জনকণ্ঠ একটি আতঙ্কের নাম। চান্দিনার সংসদ সদস্য অধ্যাপক আলী আশ্রাফ টেলিফোনে এ প্রতিনিধিকে জানান, ‘জনকণ্ঠে যে রিপাের্ট প্রকাশিত হয়েছে তা সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ। তিনি জনকণ্ঠ ও প্রতিবেদককে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘এই রাজাকার যখন দেখেছে আমি নির্বাচনে  জিতে যাচ্ছি তখন সে ফ্রীডম পাটি থেকে আওয়ামী লীগে যােগ দিয়েছে। আবার আমাকে ব্যবহার করে ব্যাংক ঋণের বিপুল পরিমাণ টাকা মওকুফ না করতে পেরে ক্ষোভে বিএনপিতে যােগ দিয়েছে। চান্দিনার একটি কলেজের অধ্যাপক জানান, রিপাের্টটি প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে তােলপাড় অব্যাহত রয়েছে।

সর্বত্র একটাই আলােচনা হচ্ছে সেই রাজাকার। এই সাহসী প্রতিবেদন প্রকাশ করায় জনকণ্ঠের প্রশংসা করছে সবাই। অন্যদিকে কুমিল্লা জেলার সর্বত্র আলােচনায় স্থান করে নিয়েছে সেই রাজাকার’ প্রতিবেদন। কেউ বলছে, ‘৩০ বছর পর জনকণ্ঠ কেন রাজাকারদের নিয়ে প্রতিবেদন লিখছে?’ কেউ বলছে, যারা এ দেশের বিরােধিতা করেছে তারাই আজ দেশের মাথা। তাদের চিহ্নিত করা সময়ােপযােগী’। ৩০ বছরে যে কাজ অন্যরা করতে পারেনি তা করেছে জনকণ্ঠ।’ কোন কোন মুক্তিযােদ্ধা বলছেন, রাজাকারদের চিহ্নিত করার পদক্ষেপ নিয়ে জনকণ্ঠ আমাদের ঋণী করেছে। আবার হতাশ অনেকে বলছে, “লিখে কি হবে, তাদের বিচার তাে ৩০ বছরে হয়নি, আর হবেও না’! কেউ বলছে, উন্নয়নশীল দেশসমূহে যুদ্ধাপরাধের বিচার তেমন একটা হয় না। আইনের ফাক দিয়ে পার পেয়ে যায়। তবুও ক্ষতি কি, ৩০ বছর পর রাজাকাররা চিহ্নিত হচ্ছে। এটাই বড় পাওয়া। আবার কেউ বলছে, “স্বাধীনতাবিরােধীদের আওয়ামী লীগই বাঁচিয়ে দিয়েছে। নির্বাচন সামনে তাই এসব লেখা হচ্ছে।’ জনকণ্ঠ। ২৭-০৩-২০০১

সূত্র : সেই রাজাকার – জনকন্ঠে প্রকাশিত রিপোর্টের সংকলন

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!