You dont have javascript enabled! Please enable it! হবিগঞ্জের সেই রাজাকার জনকণ্ঠের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে যে কারণে - সংগ্রামের নোটবুক

হবিগঞ্জের সেই রাজাকার জনকণ্ঠের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে যে কারণে

জনকণ্ঠ রিপাের্ট ॥ পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার মাত্র কয়েক মাস পর সে রাষ্ট্রটির প্রতিষ্ঠাতা মােহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকায় এসে এক জনসভায় ঘােষণা দেন পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে “একমাত্র উর্দু”। পাকিস্তানী শাসকগােষ্ঠীর এটাই ছিল মনােভাব। যাকে সম্পূর্ণরূপে গোয়ার্তুমি এবং মূঢ়তা ছাড়া আর কিছুই বলার ছিল না। এভাবে পাকিস্তান চেয়েছিল মাতৃভাষা বাংলা কেড়ে নিতে। একইভাবে আজকের এই স্বাধীন দেশে হবিগঞ্জের প্রত্যন্ত এলাকায় লুকিয়ে থাকা ভীতসন্ত্রস্ত রাজাকার ও তার দোসররা মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাসহ ‘৭১-এর ঘাতকদের বিরুদ্ধে সােচ্চার ও প্রগতিশীলদের সংবাদপত্র দৈনিক জনকণ্ঠের সাহসী কলম ও কণ্ঠস্বর কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করছে। মাধবপুর উপজেলার নােয়াপাড়ার কুখ্যাত রাজাকার কমান্ডার সৈয়দ মােহাম্মদ কায়সারের ‘৭১এর কুকীর্তি, সেই রাজাকার’ সিরিজে তুলে ধরায় মুক্তিযােদ্ধা-জনতা মঞ্চ’ হবিগঞ্জের পক্ষ থেকে অভিনন্দন ও ভূয়সী প্রশংসাসহ রাজাকারদের মুখােশ উন্মােচন অব্যাহত রাখার দাবি জানানাের পর একটি রিপাের্ট মঙ্গলবার দৈনিক জনকণ্ঠে প্রকাশিত হওয়ার মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই হবিগঞ্জ সংবাদদাতা রফিকুল হাসান তুহিনকে আবারও অবাঞ্ছিত ঘােষণা করা হয়েছে।

অথচ হবিগঞ্জের একটি পত্রিকার সম্পাদক, যিনি এক সময়ের কর্নেল ফারুক-রশিদের সহচর ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় ফ্রীডম পার্টির কোঅর্ডিনেটর ছিলেন সেই নােমান চৌধুরীর সংবাদপত্র সাপ্তাহিক দৃষ্টিকোণ’ মাত্র কয়েক দিন পূর্বে মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করার জন্য প্রকাশ্যে দুঃখ প্রকাশ করেছিল। এ অবস্থায় প্রেসক্লাবের বর্তমান ভূমিকা ও অতীতের প্রেসক্লাবের নাম ভাঙ্গিয়ে দৃষ্টিকোণের অতি উৎসাহী কার্যকলাপকে অত্যন্ত বাড়াবাড়ি ও অনধিকার চর্চা এবং প্রগতিশীল শক্তির ওপর এক নগ্ন আঘাত হিসাবে ইঙ্গিত বহন করছে বলে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি মনে। করছে। এ ছাড়া মঙ্গলবার রাতে মহান একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের লক্ষ্যে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হবিগঞ্জের প্রগতিমনা মানুষ যখন প্রস্তুতি। নিচ্ছিল ঠিক সেই রাতে হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সিদ্ধান্ত সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে। মঙ্গলবার রাতে হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়।

মনসুর উদ্দিন আহমদ। ইকবালের সভাপতিত্বে এই সভায় আরও দুটি বিষয়ের ওপর আলােচনা শেষে দৈনিক জনকণ্ঠের হবিগঞ্জ সংবাদদাতা তুহিনকে সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের সম্পর্কে কটুক্তি করার এক অভিযােগ এনে অবাঞ্ছিত করা হয়। কিন্তু এর পিছনে গত ১০ ফেব্রুয়ারি দৈনিক জনকণ্ঠের রিপাের্টে হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবকে রাজাকার কায়সার ৩০ হাজার টাকার চেক দিয়েছে এ খবর জনসম্মুখে প্রকাশিত হওয়ার কারণেই এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়ার। মূল রহস্য বলে জানা গেছে। এ ছাড়াও অতীতে দৈনিক জনকণ্ঠে মৌলবাদ ও জামায়াত। শিবির সম্পর্কে হবিগঞ্জের কয়েকটি রিপাের্ট প্রকাশিত হওয়ায় একশ্রেণীর লােক মর্মাহত হন। ভবিষ্যতে এ ধরনের সাহসী লেখা বন্ধ করার লক্ষ্যেই ষড়যন্ত্র চালানাের এ নেপথ্য কারণ। তবুও ৮/১০ সদস্যের উপস্থিতিতে সহসাই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, জনকণ্ঠের হবিগঞ্জ সংবাদদাতা রফিকুল হাসান তুহিনকে অবাঞ্ছিত ঘােষণা করা হলাে। জনকণ্ঠের সংবাদদাতা তুহিন এ প্রেসক্লাবের কোন সদস্য না হওয়া সত্ত্বেও বার বার এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তির কারণ কী?

জনকণ্ঠ ॥ ২৩-০২-২০০১

সূত্র : সেই রাজাকার – জনকন্ঠে প্রকাশিত রিপোর্টের সংকলন