সেই রাজাকার একরামুলের খবরে রংপুর তােলপাড়
রংপুর, ২১ ফেব্রুয়ারি, নিজস্ব সংবাদদাতা ॥ রাজাকারের ডিস্ট্রিক্ট কমান্ডার রংপুরের ঘাতক একরামুল এখন বিএনপি নেতা পুলিশের দালাল ॥ ভয়ে কেউ মুখ খােলে না’ শীর্ষক সেই রাজাকার কাহিনী ২০ ফেব্রুয়ারির জনকণ্ঠে ছাপা হবার পর গত মঙ্গলবার ও বুধবার রংপুরের সকল মহলে আলােচনার ঝড় উঠেছে। তােলপাড় শুরু হয়েছে। অপরাপর রাজাকার, মুক্তিযােদ্ধা ও পরাম ইউনিয়নবাসী ছাড়াও সমগ্র রংপুর জেলাবাসীর মাঝে। বিশেষ করে অপর রাজাকাররা ভীত ও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে এ কারণে যে, আগামীতে যদি তাদের কুকীর্তি প্রকাশ হয়ে পড়ে! এদিকে কুখ্যাত এই ঘাতক একরামুলের গ্রেফতার ও বিচার দাবিতে তার এলাকাবাসী। ছাড়াও শহরের নারী সমাজ ও বিভিন্ন সংগঠন মিছিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচী হাতে নিচ্ছে। একরামুলের এই কুকীর্তি প্রকাশ হবার সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার কারণে মঙ্গলবার সকাল ১০টার মধ্যেই জনকণ্ঠের প্রায় ৩ হাজার কপি শেষ হয়ে যায়। হকাররা কোথাও। কোথাও ১২ থেকে ১৫ টাকা করে একেকটি জনকণ্ঠ বিক্রি করে। পরবর্তীতে তাও ফুরিয়ে গেলে ফটোকপিও বিক্রি হয় ৫ টাকায়। শহরের এক পত্রিকা বিপণির মালিক মুক্তিযােদ্ধা সিরাজুল ইসলাম জানালেন, রংপুরের নির্ধারিত কোটা ছাড়াও তিনি মঙ্গলবার সৈয়দপুর থেকেও জনকণ্ঠ এনে পাঠকদের সরবরাহ করেন। মঙ্গলবার সেই রাজাকার’ কলামে সংবাদটি প্রকাশের পর শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত সর্বত্রই জনকণ্ঠ ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। জেলা প্রশাসন থেকে শুরু করে সকল স্তরের মানুষই এই প্রতিবেদকসহ জনকণ্ঠ কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দিত করেন।
কেউ কেউ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রাজাকার একরামুলের কুকীর্তি এত সংক্ষিপ্তাকারে কেন? কেন ‘৭১ পরবর্তী তার নারী পাচার ও কাজের মেয়েকে অন্তঃসত্ত্বা করার বিষয়গুলাে তুলে ধরা হয়নি? শহরের প্রেসক্লাব এলাকা, কোর্ট চতুর, পায়রা চতুর, বাজারসমূহ, পশুরাম ইউনিয়নের আমতলী, বুড়িরহাট, হারাটি স্কুলের মােড়, কুড়াইলহাট, জলছত্রহাট, চওরাহাট, বালাকোয়ার, কুফরুল, আমাশু, খটখটিয়া, তপােধন, সাহেবগঞ্জ, গজঘণ্টা প্রতিটি এলাকার চায়ের দোকান, মােড়ে মােড়ে একরামুলের সেই রাজাকার রিপাের্টের ফটোকপি দেয়ালে সাটিয়ে দেয়া হয়েছে। খটখটিয়া এলাকাবাসী জানায়, ‘৯৭ সালে একরামুল জ্ঞান চন্দের মেয়ে গীতারানী ও নওশাদের মেয়ে নূরজাহানকে অপহরণ করে ভারতের মাদ্রাজে নিয়ে যায়। সেখান থেকে বহু কৌশলে পালিয়ে আসে গীতারানী এবং একরামুলের কাহিনী প্রকাশ করে। এ ছাড়া আমাণ্ড এলাকার জনৈক সুবলের মেয়েকে অন্তঃসত্ত্বা করে সেসব কাহিনীও পত্রিকায় আসা উচিত ছিল। এলাকার কয়েক শহীদ পরিবার রিপাের্ট পড়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। এদিকে রিপাের্ট প্রকাশের পর মঙ্গলবার রাজাকার কমান্ডার একরামুলকে আদালত চত্বরে আইনজীবীদের সঙ্গে শলাপরামর্শ করতে দেখা গেছে।
জনকণ্ঠ। ২২-০২-২০০১
সূত্র : সেই রাজাকার – জনকন্ঠে প্রকাশিত রিপোর্টের সংকলন