You dont have javascript enabled! Please enable it! ঘাতকরাও প্রতিবাদ করে - সংগ্রামের নোটবুক

ঘাতকরাও প্রতিবাদ করে

স্টাফ রিপাের্টার ॥ ওরাও এখন প্রতিবাদ করে। দেশবিখ্যাত চিহ্নিত রাজাকারদের নিয়ে জনকণ্ঠে প্রকাশিত সিরিজ প্রতিবেদন ছাপা হচ্ছে সেই রাজাকার’ শিরােনামে। প্রতিবেদনটি যখন দেশজুড়ে বিশেষত নতুন প্রজন্মের মধ্যে চাঞ্চল্যকর প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে তখন সেই চিহ্নিত ব্যক্তিরাই দাবি করে বলছে, তারা নাকি রাজাকার ছিল না। একাত্তরে। তাহলে একাত্তরের হানাদার, ধর্ষণকারী পাকি বাহিনীর সঙ্গে তাদের সেই সখ্যের সম্পর্ককে কি বলা চলে? প্রশ্নটি সঙ্গত কারণেই এসে যায়। কারণ যে রাজাকার, যুদ্ধাপরাধী সে সারা জীবনেই রাজাকার। মৃত্যুর পরেও রাজাকার। ২১ ডিসেম্বর জনকণ্ঠে ছাপা হয়েছিল মুক্তিযােদ্ধা হত্যাকারী আব্দুল আলীম এখন জনপ্রতিনিধি’ শিরােনামের রিপাের্ট। আব্দুল আলীম রিপাের্টের প্রতিবাদ করে বলেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে দালাল আইনে তৎকালীন মােকদ্দমাটি নাকি দায়ের হয়েছিল রাজনৈতিক কারণে নিজের যােগ্যতার প্রমাণ (!) হিসাবে বলেছেন, তিনি ১৯৭৫ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হন।

এরপর বিভিন্ন নির্বাচনেও জিতেছেন। জিয়াউর রহমান সরকারের হাতে পুনর্বাসিত রেলমন্ত্রী আব্দুল আলীম অবশ্য প্রতিবাদপত্রে তিনি যে একাত্তরে জয়পুরহাটে শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন, তাঁর নেতৃত্বে সৃষ্ট গণকবর বধ্যভূমি যে ৮ বছর আগে আবিষ্কৃত হয়েছে সেসব বিষয়ে কোন উচ্চবাচ্য করার চেষ্টা করেননি। একাত্তরের চিহ্নিত ঘাতক বদর বাহিনীর নেতা জামায়াতের কামারুজ্জামান সম্পর্কে “সেই রাজাকার’ প্রতিবেদনটি ছাপা হয়েছিল ২২ ডিসেম্বর। তাঁর পক্ষে প্রতিবাদপত্রটি পাঠিয়েছেন আরেক স্বাধীনতাবিরােধী রাজাকার আব্দুল কাদের মােল্লা। কামারুজ্জামান প্রতিবাদে দাবি করে বলেছেন, তিনি শেরপুরের পাকি মেজর রিয়াজের প্রডাকশন’ নন। শেরপুরের বধ্যভূমিতে তার কোন অবদান নেই। তিনি তখন শেরপুরেই ছিলেন না ইত্যাদি ইত্যাদি। কামারুজ্জামান অবশ্য বলতে পারেননি যে, তার একাত্তরের ঘূণিত ভূমিকা সম্পর্কে গােটা শেরপুরবাসী আজ মিথ্যা বলছেন। দাবি করে বলছেন, রিপাের্টটি ডাহা অসত্য, বানােয়াট। তাহলে কি কামারুজ্জামান মুক্তিযােদ্ধা ছিলেন একাত্তরে? এটা অবশ্য দাবি করার সাহস তার নেই। কেন নেই তা তিনিই ভাল জানেন। কামারুজ্জামান বলেছেন, রাজনৈতিকভাবে মােকাবিলায় ব্যর্থ হয়ে’ ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণেই তার বিরুদ্ধে শেরপুর থেকে এসব অপপ্রচার চালানাে হচ্ছে। আদতে শেরপুরে তিনি মােটেই রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ কেউ নন। সেখানকার রাজনীতিতে নির্বাচনে কখনও তিনি ফ্যাক্টরও হতে পারেননি।

জনকণ্ঠ ২৫-১২-২০০০

সূত্র : সেই রাজাকার – জনকন্ঠে প্রকাশিত রিপোর্টের সংকলন