You dont have javascript enabled! Please enable it!

ফেনী

ফেনীর আবুল হােসেনের ঘাতক তজু রাজাকার এখন ঢাকার ধনাঢ্য ব্যক্তিদের একজন

ওছমান হারুন মাহমুদ, ফেনী থেকে ॥ রাজাকাররা আবুল হােসেনকে গুলি করে তারই। দোকানে আগুন দিয়ে সেই আগুনে পুড়িয়ে মেরেছে। সেই ঘাতক তজু রাজাকার টাকা আর প্রভাব খাটিয়ে রয়ে গেছে ধরাছোঁয়া এমনকি আইন-আদালতের বাইরে। আনাহারেঅর্ধাহারে রােদেপুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে দিন কাটাচ্ছে শহীদ আবুল হােসেনের বিধবা স্ত্রী মােমেনা বেগম। শহীদ আবুল হােসেনের বাড়ি ফেনী সদর থানার ধলিয়া গ্রামে। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থল ধলিয়ার ফকিরহাট বাজার। ‘৭১-এর অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময় । ফকিরহাট বাজারের চা দোকানী আবুল হােসেন। নিজ মালিকী ঘরেই চা দোকান করত। সন্ধ্যায় সেই চা দোকানে স্থানীয় মুক্তিকামী জনগণ সমবেত হতাে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অনুষ্ঠান শুনতে। দালালের মারফত এই সংবাদ এসে যায় ফেনী শহরের রাজাকার ক্যাম্পে। স্বাধীনতাকামী মানুষদের স্তব্ধ করে দিতে সেই গ্রামের বাজারে শহর থেকে হায়েনার দল পাঠানাে হলাে। অল্প অল্প বৃষ্টি হচ্ছিল। মেঘমেদুর আকাশে বিদ্যুত চমকাচ্ছিল। সময় সকাল ১১টা। স্থানীয় দালাল সিদ্দিক মিয়া চা দোকানী আবুল হােসেনকে শনাক্ত করে দেয় শহরের রাজাকার কমান্ডার তােফাজ্জেল হােসেন তজু ও তার দলবলের কাছে। দিনের আলােয় বাজারে সবার সামনে। তজু রাজাকার আবুল হােসেনকে নির্মমভাবে পিটিয়ে গুলি করে রাস্তার পাশে ফেলে রাখে। এরপর আবুল হােসেনের চা দোকানে আগুন লাগানাে হয়। দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। সেই জ্বলন্ত আগুনে তজু রাজাকার আবুল হােসেনকে নিক্ষেপ করে। সন্ধ্যায় আগুন নিভে গেলে দেখা যায় আবুল হােসেনের আগুনে পােড়া কঙ্কাল বেঁকে পড়ে আছে ছাইয়ের  গাদায়।

এই নির্মম হত্যাযজ্ঞ দূরে দাড়িয়ে দেখেছে আবুল হােসেনের ভাগ্নে নবী, মিন্টু ও বাজারের দোকানী আবু তাহের নুর আহম্মদ মিয়া। উত্তর ধলিয়ার ফকিরহাটের মৃত হাজী। ইব্রাহিমের ছেলে আবুল হােসেন। তজু রাজাকারের হাত থেকে বড় ভাই আবুল হােসেনকে রক্ষা করার চেষ্টা করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয় ছােট ভাই কালু মিয়া । কালু মিয়া। সেই ক্ষতচিহ্ন নিয়ে আজও বেঁচে আছে। আবুল হােসেনের বিধবা স্ত্রী মােমেনা বেগম ২ মেয়ে ফিরােজা ও জরিনাকে নিয়ে মানবেতরভাবে কাটিয়ে দিয়েছে এতগুলাে বছর। আত্মীয়স্বজনের সহায়তায় ফিরােজা ও জরিনার বিয়ে হয়েছে। বর্তমানে শহীদের স্ত্রী অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন স্বামীর ভিটায়। বাজারের সেই দোকানের জায়গাটা একটি মহল ষড়যন্ত্র করে দখল নিতে চাইছে। কেউ এই জমি রক্ষার্থে শহীদের স্ত্রীকে সাহা করতে এগিয়ে আসছে না। এই লােমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী শহীদ আবুল হােসেনের ভাগ্নে নবী ও মিন্টু জনকণ্ঠকে বলেন, ঘাতকরা আবুল হােসেনের আগুনে পােড়া কঙ্কাল ২দিন কবর দিতে দেয়নি। ঘাতকরা ঘােষণা দিয়ে এসেছিল এই কঙ্কাল শিয়াল কুকুর দিয়ে যেন খাওয়ানাে হয়। পরে স্থানীয় মানুষ গােপনে কঙ্কালটি কবর দেয়। প্রত্যক্ষদর্শী নবী ও মিন্টু শহরের বারাহীপুরের অধিবাসী যুদ্ধের সময় মামারবাড়ি ধলিয়াতে আশ্রয় নিয়েছিল। তারা তার মামার ঘাতক তজু রাজাকারকে চিনতে পেরেছিল। শহরের পাশের গ্রাম মজলিশপুরের মৃত আশ্রাফ আলীর ছেলে তােফাজ্জেল হােসেন তজুই হচ্ছে তজু রাজাকার। এই হত্যার ব্যাপারে স্বাধীনতার পর ফেনী থানায় জিডি হয়েছিল। অসহায়ের পক্ষে কেউ তদ্বির করেনি বিধায় জিডির পরবর্তী কার্যক্রম আর এগােয়নি। টাকা আর প্রভাব খাটিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয় আইনের স্বাভাবিক গতি। সেই ঘাতক তজু রাজাকার এখন ঢাকার ধনাঢ্য ব্যক্তিদের একজন। অপরদিকে শহীদ আবুল হােসেনের বিধবা স্ত্রী মানবেতর দিন কাটাচ্ছে। শহীদ পরিবারের পক্ষ থেকে এই হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে নতুন করে মামলার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।

জনকণ্ঠ। ২৪-১২-২০০০

সূত্র : সেই রাজাকার – জনকন্ঠে প্রকাশিত রিপোর্টের সংকলন

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!