You dont have javascript enabled! Please enable it!

পটুয়াখালী

কলাপাড়ায় শহীদ মিনার ভাঙ্গার নেতৃত্ব দেয় তালেবুর

শওকত মিলটন মেজবাউদ্দিন মানু ॥ একাত্তরের এক ঘাতক এখন প্রতিষ্ঠিত রাজনীতিক। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ নেয়ায় বহু মানুষকে সে নির্যাতন করেছে। লুটপাট করতে লেলিয়ে দিয়েছে রাজাকার আর লুটেরাদের। মুক্তিযুদ্ধের পরে মুক্তিযােদ্ধাদের হাত থেকে বাঁচতে মেয়েদের মতাে শাড়ি পরে পালিয়েছিল। এমনকি চুরির অভিযােগেও তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল নিজ এলাকায়। তার নাম তালেবুর রহমান। একাত্তরে ছিল কলাপাড়া থানা শান্তি কমিটির সদস্য। এখন থানা বিএনপির আহ্বায়ক। কিন্তু খােদ বিএনপির নেতাকর্মীরাই তাকে প্রত্যাখ্যান করেছে। বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে বিএনপি এই  চিহ্নিত রাজাকারকে তাদের দলের আহ্বায়ক করেছে। তালেবুর রহমানের বয়স এখন আশি  মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে কিন্তু একাত্তরের জন্য তার কোন অনুশােচনা নেই। পটুয়াখালী জেলার বর্ধিষ্ণু জনপদ কলাপাড়া থানাতে তার বাড়ি। জমিজমার আয়ই তার আয়ের মূল উৎস। বরাবরই সুবিধাবাদী। সরাসরি রাজনীতি করেনি। তবে মুসলিম লীগের পাণ্ডা ছিল। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তালেবুর রহমান কলাপাড়া থানা শান্তি কমিটির সদস্য হয়। মিঠাগঞ্জ ইউনিয়নে তার বাড়ি। তার দাপটে মিঠাগঞ্জে ত্রাহি ত্রাহি রব ওঠে। তার বিরুদ্ধে লুটপাটের অভিযােগ রয়েছে।

১৯৭১ সালের ২৮ মে তালেবুর রহমানের নেতৃত্বে রাজাকারগােষ্ঠী কলাপাড়ায় শহীদ মিনার ভেঙ্গে ফেলে। পল্লী চিকিৎসক জহিরুল ইসলামকে ধরে থানায় নিয়ে নির্মম নির্যাতন চালায়। জহিরুল ইসলামের অপরাধ ছিল শহীদ মিনার ভাঙ্গার প্রতিবাদ করার। জহিরুল ইসলামকে পাকিস্তানী হায়ওয়ানদের হাতে তুলে দেয় তালেবুর । কিন্তু সে পাগলের ভান করে প্রাণে বেঁচে যায়। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জিত হলে রাজাকার তালেবুর প্রাণে বাঁচতে দু’বছর মেয়ে সেজে থাকে। মেয়েদের মতাে শাড়ি পরে আত্মগােপন করে মুক্তিযােদ্ধাদের হাত থেকে প্রাণ রক্ষা করে। জিয়াউর রহমানের জমানায় তালেবুর রহমান আবার গা-ঝাড়া দিয়ে ওঠে। যােগ দেয় বিএনপিতে। কিন্তু বিএনপির মুক্তিযােদ্ধা সমর্থকদের চাপে সে একঘরে হয়ে থাকে। ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর তালেবুর রহমানের সাহস আরেক দফা বেড়ে যায়। ঐ বছরেরই বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু হলের সরকারী অনুষ্ঠানে তাকে মঞ্চে বসানাে হয়। তাৎক্ষণিকভাবে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তির তীব্র প্রতিবাদের মুখে তালেবুর রহমানকে মঞ্চ থেকে সরিয়ে নেয়া হয়। এই রাজাকার চানটুপি সমর্থক মুসলমান। এদের পরিবার একদিন আগে রােজা শুরু করে, একদিন আগে ঈদ পালন করে। এ রাজাকারকে এখন থানা বিএনপির আহ্বায়ক করা হয়েছে। খােদ বিএনপির নেতাকর্মীরা কলাপাড়া সরগরম করে তুলেছে এই রাজাকারকে অপসারণের দাবিতে মুক্তিযােদ্ধা মােয়াজ্জেম হােসেনের নেতৃত্বাধীন বিএনপির নেতাকর্মীরা এ আন্দোলন চালাচ্ছে। জাতীয়তাবাদী মুক্তিযােদ্ধা দলের থানা আহ্বায়ক জালাল উদ্দিন তালুকদার তার অপসারণের দাবিতে দলীয় চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে টেলিগ্রামও করেছেন।

জনকণ্ঠ ॥ ১৪-০১-২০০১

সূত্র : সেই রাজাকার – জনকন্ঠে প্রকাশিত রিপোর্টের সংকলন

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!