You dont have javascript enabled! Please enable it!

গাে.আযমের শ্যালক নওগার ‘খক্কো মৌলভী খুন ধর্ষণ লুটের এক হােতা

জনকণ্ঠ রিপাের্ট ॥ হত্যা, লুট, অগ্নিসংযােগ ও ধর্ষণের হােতা স্বাধীনতাবিরােধী জামায়াতের সাবেক আমির গােলাম আযমের শ্যালক ‘৭১-এর আলবদর বাহিনীর নওগাঁর আঞ্চলিক প্রধান মােনায়েম-কাম-আকরাম ওরফে খক্কো মৌলভী নওগাঁ জেলা জামায়াতের নেপথ্যের নীতিনির্ধারক। তার নেতৃত্বে রাজাকার-আলবদর বাহিনীর সদস্যরা এলাকায় হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট ও অগ্নিসংযােগ চালিয়েছে নির্বিচারে। তারা পার-নওগাঁ তাজ সিনেমা হলের ভিতর ২৫/৩০ জন মুক্তিকামী বাঙালী সন্তানকে হত্যা করে হলের পিছনে মঞ্চের মধ্যখানে অবস্থিত কূপের ভিতর ফেলে দিয়েছিল। পরবর্তীতে যেসব মুক্তিযােদ্ধা কূপের ভিতর থেকে লাশগুলাে। উদ্ধার করে কবরস্থ করেছিলেন, এ তথ্য মিলেছে সেসব মুক্তিযােদ্ধার কাছ থেকেই। নওগাঁ শহরের চকদেব মহল্লায় এই মােনায়েম-কাম-আকরাম ওরফে খক্কো মৌলভীর দ্বিতল বাসভবন। তার ভগ্নিপতি গাে-আযম এবং নিজামী গং নওগাঁয় এলে ঠাই মিলে তার বাসায়। বাসার পিছনেই সরকারী গােরস্তান। ‘৭১-এ এই গােরস্তানেও তারা চালিয়েছিল হত্যাযজ্ঞ। বিভিন্ন গ্রাম থেকে ধরে আনা ২৫/৩০ মুক্তিপাগল মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল এখানে। সে সময় এ অঞ্চলে রাজাকারপ্রধান ছিল বদলগাছী উপজেলার বালুভরা ইউনিয়নের মহদীপুর গ্রামের তাহের উদ্দিন প্রফেসর । খক্কো মৌলভীও পাকি আমলে নওগাঁ ডিগ্রী কলেজে শরীরচর্চা শিক্ষক ছিল।

এই দুই শিক্ষক আলবদরপ্রধান ও রাজাকারপ্রধানের দাপটে মানুষজন গ্রাম ছেড়ে পালাত। এদের হিংস্রতার কথা নওগাঁর সব মুক্তিযােদ্ধা ছাড়াও প্রবীণরা একবাক্যে স্বীকার করেন। ‘৯৬ সালে তাহের রাজাকার মারা যায়। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সে ঢাকা, কুমিল্লা ও নােয়াখালী এলাকায় কলেজে শিক্ষকতা করত। নওগাঁর মহাদেবপুরে ছিল আলবদর বাহিনীর হেড অফিস। এরা বিভিন্ন গ্রাম থেকে বাঙালী নারীদের ধরে এনে পাকি সেনাদের মনােরঞ্জনের জন্য উপহার দিত। স্বাধীনতার পর দু’জনেই পালিয়েছিল এলাকা থেকে। সাধারণ ক্ষমার পরও তারা দুজন বাড়িতে ফিরতে সাহস পায়নি। আকরাম ফিরে এসে বগুড়ার নশরতপুর এলাকায় আস্তানা গাড়লেও তাহের প্রফেসর এলাকায় আসেনি। ‘৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর দুলাভাই গাে-আযমের বদৌলতে জামায়াতে ইসলামীতে আকরাম ওরফে খক্কো মৌলভীর গুরুত্ব বেড়ে যায়। তাকে নিযুক্ত করা হয় জেলা জামায়াতের সাংগঠনিক পরিচালক ও নীতিনির্ধারক পদে। যদিও ধূর্ত আকরাম জেলা জামায়াতের কার্যকরী কমিটির কোন পদে নেই; তার পরও তার সাংগঠনিক তৎপরতা এখনও বিদ্যমান। সে সময় দুলাভাই গাে-আযমের সুপারিশেই জিয়াউর রহমান সরকার তাকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনে চাকরি দেয়। আলবদরপ্রধান আকরাম গােটা ইসলামিক ফাউন্ডেশনকেই জামায়াতের ঘাটিতে পরিণত করতে সহায়তা করে। পরবর্তীতে আকরাম চাকরিচ্যুত হয়েছে। মােনায়েম-কাম-আকরাম বর্তমানে শহরের তুলাপট্টিতে একটি গার্মেন্টস দোকানের কর্মচারী। একই সঙ্গে জামায়াতের নেপথ্যের পরিচালক।

জনকণ্ঠ ॥ ১৩-০২-২০০১

সূত্র : সেই রাজাকার – জনকন্ঠে প্রকাশিত রিপোর্টের সংকলন

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!