You dont have javascript enabled! Please enable it! গােপালগঞ্জে বহু অপকর্মের হােতা আজাদ মৌলভী এখন ব্যবসায়ী - সংগ্রামের নোটবুক

গােপালগঞ্জে বহু অপকর্মের হােতা আজাদ মৌলভী এখন ব্যবসায়ী

মােজাম্মেল হােসেন মুন্না, গােপালগঞ্জ থেকে ॥ দবিরউদ্দিন আজাদ একাত্তরের এক চিহ্নিত রাজাকার। স্থানীয় হিন্দুদের ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া, খুন, লুটপাট ও নির্যাতন করাই ছিল তার কাজ। বর্তমানে সে জেলা শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কে একটি ওয়েল্ডিং কারখানার মালিক। এছাড়া তার আরও কয়েকটি ব্যবসা রয়েছে। বাংলাদেশ খাদেমুল ইসলাম জামায়াত, গােপালগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি ও গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসার নির্বাহী কমিটির সাধারণ সম্পাদক পরিচয়দানকারী এই দবিরউদ্দিন আজাদ ওরফে আজাদ মৌলভীর রয়েছে অনেক অপকীর্তির কাহিনী। ‘৭১-এর সেই রক্তঝরা দিনগুলাের কথা আজও ভুলতে পারেননি শহরের হীরাবাড়ি রােডের শচীন্দ্রনাথ বিশ্বাসের স্ত্রী দ্রৌপদী বিশ্বাস (৬৯)। তার স্বামীকে যখন রাজাকার আজাদ মৌলভী হানাদার পাকি সৈন্যদের হাতে ধরিয়ে দেয় তখন শচীন্দ্র স্ত্রী দ্রৌপদীকে বলে গিয়েছিলেন, “আগামীকাল আমি ফিরে আসব।” কিন্তু সেই আগামীকাল আর তার জীবনে আসেনি। স্বামী শচীন্দ্রনাথের ফিরে না আসার ব্যথা নিয়ে আজও তিনি বেঁচে আছেন। সেদিন ছিল ২৭ জ্যৈষ্ঠ । দিনের বেলায় এই আজাদ মৌলভীকে পাকি সৈন্যদের সঙ্গে নিয়ে আসতে দেখে শচীন্দ্রনাথ বিশ্বাস বাড়ির সবাইকে পালিয়ে যেতে বলে নিজে পাট ক্ষেত্রের মধ্যে লুকিয়ে থাকেন। তাঁর বড় ছেলের বউও সেই পাটক্ষেতে এসে লুকান। তবু তাদের রক্ষা হয়নি। তারা সবাই রাজাকারদের হাতে ধরা পড়ে যান। ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় রাজাকাররা তাদের বাড়ি-ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়।

এক পর্যায়ে বাড়ির সমস্ত মালামাল, টাকা-পয়সা, সােনাগয়না এমনকি গরু পর্যন্ত লুট করে নিয়ে যায়। রাজাকাররা। তার কয়েকদিন পর লােকমুখে শােনা যায়, শচীন্দ্রনাথ বিশ্বাসকে জীবিত অবস্থায়। মাটিতে পুঁতে হত্যা করা হয়েছে স্থানীয় মিনি ক্যান্টনমেন্ট এলাকার বধ্যভূমিতে। স্বাধীনতার ৩০ বছর পর আজও শচীন্দ্রনাথ বিশ্বাসের ছেলে সরােজ কুমার বিশ্বাস তাঁর বাবার চিহ্নিত হত্যাকারীর নাম মুখ ফুটে বলতে সাহস পান না। যদিও শহরের প্রায় সবাই জানে যে, শচীন্দ্রনাথ বিশ্বাসের হত্যাকারী এই রাজাকার আজাদ মৌলভী। রাজাকার আজাদ মৌলভী শচীন বিশ্বাসকে ধরে নিয়েই ক্ষান্ত হয়নি। তার দু’দিন বাদেই রাতের আঁধারে হামলা চালায় একই পাড়ার সুধিরথ বিশ্বাসের বাড়িতে। সুধিরথ বিশ্বাস ছিলেন একজন অবসরপ্রাপ্ত দারােগা। বাড়ি এসে তিনি স্থানীয় বীণাপাণি গার্লস স্কুলে চাকরি করতেন। এই আজাদ মৌলভীর নেতৃত্বেই ঐ রাতে তাকেও ধরে নিয়ে যাওয়া হয় সেই মিনি ক্যান্টনমেন্টে। এরপর আর তিনি ফিরে আসেননি। কিছুদিন পর তার পরিবারের লােকজন পরস্পর শুনতে পান যে, তালগাছের সঙ্গে হাত-পায়ে পেরেক ঠুকে সুধিরথ বিশ্বাসকে এই রাজাকার ও তার মুরব্বি পাকি সৈন্যরা নির্মমভাবে হত্যা করেছে। স্বাধীনতার পর এই আজাদ মৌলভী অনেকদিন গা-ঢাকা দিয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা ঘােষণার পর এলাকায় ফিরে এসে একাত্তরের লুণ্ঠিত অর্থ দিয়ে এলাকায় বিভিন্ন ব্যবসা করে আজ সে সমাজে প্রতিষ্ঠিত। প্রকাশের তারিখ জনকণ্ঠ: ২৭-০২-২০০১।

সূত্র : সেই রাজাকার – জনকন্ঠে প্রকাশিত রিপোর্টের সংকলন