You dont have javascript enabled! Please enable it!

গােপালগঞ্জ

কাশিয়ানীর সলেমানের হাত থেকে তার আত্মীয়স্বজনরাও রেহাই পায়নি

মােজাম্মেল হােসেন মুন্না, গােপালগঞ্জ থেকে ॥ একাত্তরের ঘাতক রাজাকার, গােপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী থানার পিস কমিটির চেয়ারম্যান ডাক্তার সলেমান সরদার এলাকায় এখনও একটি আতঙ্কিত নাম। মুক্তিযুদ্ধকালে তার হিংস্র ছােবলে অনেকেই হারিয়েছেন তাদের আত্মীয়স্বজন, সহায়-সম্পত্তি ও ঘরবাড়ি। তার বিরুদ্ধে রয়েছে নারী ধর্ষণের বহু অভিযােগ। ‘৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালের লুট করা সহায়-সম্পত্তি দিয়ে গড়ে তুলেছে এই বিত্তবৈভব। উগ্র মৌলবাদী সংগঠন হরকত-উল-জিহাদের সে কাশিয়ানী থানা সভাপতি। তার দাপটে এখন ঐ এলাকার জনগণ সন্ত্রস্ত। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এই কুখ্যাত রাজাকারের স্বাধীনতাবিরােধী কর্মকাণ্ড এলাকার জনগণ এখনও ভুলতে পারেননি; বিশেষত তার অত্যাচার ও নির্যাতনের শিকার হয়ে যারা সর্বস্বান্ত হয়েছেন। যুদ্ধকালে সলেমান ডাক্তারের ছিল দোর্দণ্ড প্রতাপ। পাকি হানাদারবাহিনীর সহযােগী হিসাবে সে শুধু এলাকার মুক্তিকামী মানুষদের হত্যা করার নেতৃত্বই দেয়নি, অনেক মাবােনকে ধরে নিয়ে পাকিবাহিনীর হাতে তুলে দিয়ে তাদের মনােরঞ্জনেরও ব্যবস্থা করে। বলে অভিযােগ রয়েছে। কাশিয়ানীর ভাটিয়াপাড়ায় পাক হানাদারবাহিনী ঘাঁটি গাড়ার পর থেকে সে তাদের সাথে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তােলে। সলেমান ডাক্তার তার সহযােগী জেলা জামায়াত নেতা এমদাদুল হকের ভাগ্নে রামদিয়ার জামায়াত নেতা সিদ্দিকুর রউফ, লুথু মিয়া, আইয়ুব মিয়া, মনি মিয়া, খেয়াল উদ্দিন প্রমুখ স্বাধীনতাবিরােধীদের নিয়ে গড়ে তােলে রাজাকারবাহিনী। সলেমান ডাক্তারের নেতৃত্বে রামদিয়া বাজার অগ্নিসংযােগ ও লুটপাট করে তছনছ করা হয়। খুন করা হয় বাহিরবাগের সিরাজ, হবি।

সরদার, পরানপুরের সালাম শেখ, সীতারামপুরের মকবুল হােসেন, ছাত্রলীগ নেতা খিজির হায়াৎ লিজুর পিতা কাদের মােল্লা, অমূল্য চক্রবর্তী, নগরবাসী, ফালা মিয়া, বিজন ঘােষ, ফজর শেখ, অনিল, সানাউল্লাহ কাজীসহ অসংখ্য লােককে। ধর্ষণ করা হয় অগণিত যুবতী নারী ও গৃহবধূকে। এই রাজাকারবাহিনী লােকজনকে নির্যাতন চালিয়ে অর্ধমৃত অবস্থায় আগুনে ও চলন্ত ট্রেনের সামনে ফেলে দিয়ে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ত। সলেমান ডাক্তারের হাত থেকে তার নিজের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজনও রেহাই পায়নি। নিজের আপন ফুপুকে এই নরপশু পাকি হানাদারবাহিনীর হাতে তুলে দিতে কুণ্ঠাবােধ করেনি। পাকিবাহিনীর অত্যাচারে সত্তরাের্ধ বৃদ্ধার হাত ভেঙ্গে যায়। মােট কথা, যেই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কথা বলেছে, তার কথার অবাধ্য হয়েছে, সেই তার নির্মম প্রতিহিংসার শিকার হয়েছে। সাধুহাটির ডাক্তার কাইয়ুম ছিলেন রামদিয়া এলাকার মুক্তিযােদ্ধা সংগ্রাম পরিষদের চেয়ারম্যান। তিনি সলেমান ডাক্তারের এসব অপকর্ম প্রতিরােধ করার চেষ্টা করলে রামাদয়া বাজারে তার দোকান পুড়িয়ে দেয়া হয়। ডাক্তার কাইয়ুমের সাথে এ প্রতিবেদকের কথা হলে রাজাকার সলেমান ডাক্তারের এসব কুকীর্তির কথা বেরিয়ে আসে। তার অভিযােগে জানা যায়, রাজাকার সলেমান ডাক্তারের অন্যতম সহযােগী মনি মিয়ার। ছেলে এনায়েত হােসেন ও ভাই মিন্টু এলাকায় এখন প্রভাব বিস্তার করে আছে। স্বাধীনতার পর ডাক্তার সলেমান ও তার সহযােগীরা গা-ঢাকা দিয়েই ছিল। এর আগে সাধারণ ক্ষমা ঘােষণার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত সলেমান ডাক্তার জেলে ছিল।

‘৭৫-এর পটপরিবর্তন ও জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা নেয়ার পর যুব কমপ্লেক্সের মধ্যদিয়ে এরা পুনরায় এলাকার রাজনীতিতে অনুপ্রবেশ করে। ধীরে ধীরে গড়ে তােলে তাদের মৌলবাদী রাজনীতির আখড়া। ‘৮৬ সালের দিকে আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় এরা। তাদের অবস্থানকে আরও সুদৃঢ় করে তােলে। বর্তমানে তারা রামদিয়ায় মাদ্রাসাভিত্তিক বিভিন্ন কার্যকলাপের মধ্যদিয়ে তাদের পাকিস্তানপন্থী কার্যকলাপ ক্রমান্বয়ে বিস্তার করছে। এলাকার স্বাধীনতাকামী জনগণ ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা তাদের কর্মকাণ্ডে ভীতসন্ত্রস্ত।

জনকণ্ঠ ॥ ১৯-০১-২০০১

সূত্র : সেই রাজাকার – জনকন্ঠে প্রকাশিত রিপোর্টের সংকলন

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!