You dont have javascript enabled! Please enable it! মঠবাড়িয়ার সূর্যমণি বধ্যভূমি হত্যাকাণ্ডের হােতা ইস্কান্দার মৃধা এখন বিএনপি নেতা - সংগ্রামের নোটবুক

মঠবাড়িয়ার সূর্যমণি বধ্যভূমি হত্যাকাণ্ডের হােতা ইস্কান্দার মৃধা এখন বিএনপি নেতা

মিজানুর রহমান মিজু, মঠবাড়িয়া থেকে ॥ একাত্তরে মঠবাড়িয়ায় স্বাধীনতাকামী ও সংখ্যালঘুদের হত্যা, নির্যাতন, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযােগের নেতৃত্বদানকারী রাজাকার কমান্ডার ইস্কান্দার আলী মৃধা এখন স্থানীয় উপজেলা বিএনপির একজন প্রভাবশালী নেতা। তার নাম শুনলে সংখ্যালঘু বয়স্ক মানুষ আজও আঁতকে ওঠেন এবং অনেকে তার  অমানুষিক নির্যাতনের কথা বর্ণনা করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এ রাজাকার সংখ্যালঘুদের ভয়ভীতি দেখিয়ে একবার জনপ্রতিনিধিও হয়েছিল। ‘৭১-এ মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ইস্কান্দার মৃধা মুক্তিযােদ্ধাদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি অভিযান চালিয়ে সফল হয় এবং পাক সেনাদের আস্থা অর্জন করে। ফলে পাক বাহিনী তাকে পিরােজপুরে প্রশিক্ষণ দিয়ে রাজাকারের কমান্ডারের দায়িত্ব দেয়। মঠবাড়িয়ার সংখ্যালঘু ও স্বাধীনতার সপক্ষের মানুষদের হত্যাসহ বিভিন্ন অপারেশনের দায়িত্ব বর্তায় তার ওপর। নির্মম নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞের প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণে ফুটে ওঠে এই নরঘাতক ও রক্তপিপাসুর চরিত্র ইস্কান্দারের বাহিনী সূর্যমণি বধ্যভূমিতে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল ২৫ জনকে এই বধ্যভূমিতে তাদের হাতে গুলি খেয়ে অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া জ্ঞানেন্দ্রনাথ মিত্র ও সন্তোষ মিত্রের স্মৃতিচারণে এই রাজাকারের বর্বরতার চিত্র ফুটে ওঠে। ১৯৭১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর (১৯ আশ্বিন) বুধবার রাত ১২টার সময় মুক্তিযােদ্ধাদের সহযােগিতা করার অপরাধে মঠবাড়িয়া উপজেলার আঙ্গুলকাটা গ্রামের সংখ্যালঘু ৭টি বাড়ি রাজাকার কমান্ডার ইস্কান্দার মৃধার নেতৃত্বে ৪০ থেকে ৫০ জনের একটি রাজাকারের দল ঘেরাও করে ঘুমন্ত নিরীহ ও নিরপরাধ ৩৭ জনকে চোখ ও হাত  বেধে নির্যাতন করতে করতে মঠবাড়িয়ায় নিয়ে আসে।

ইস্কান্দার মৃধার নির্দেশে ৭  জনকে মঠবাড়িয়া থানায় রাতভর নির্যাতন শেষে মােটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে পরের দিন ছেড়ে দেয়া হয়। বাকি ৩০ জনকে ঐদিন রাত ৪টায় থানার ৩ কিঃমিঃ পূর্বে সূর্যমণি। সুইসগেট সংলগ্ন বধ্যভূমিতে নিয়ে এসে অমানুষিক নির্যাতন করে। তাদের ৩০ জনকে। জোড়ায় জোড়ায় হাত, চোখ বেঁধে লাইনে দাড় করানাে হয়। রাজাকার কমান্ডার মৃধার নির্দেশে শুরু হয় তাদের ওপর গুলি করার প্রতিযােগিতা। ট্রিগারে টিপ দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে ২৫ জন গুলি খেয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান এবং ৫ জন গুলি খেয়েও অলৌকিকভাবে বেঁচে যান। এই ৭টি বাড়ি থেকে রাজাকাররা নগদ অর্থ, স্বর্ণালঙ্কার, মূল্যবান জিনিসপত্র  লুট করে নেয় এক প্রত্যক্ষদর্শী জানায়, ঐ সময় ইস্কান্দার বাহিনী ব্ৰজেন বালার মেয়ে বিভা (১৬)কে  গণধর্ষণ করে। স্থানীয় মঠবাড়িয়া মুক্তিযােদ্ধা কমান্ডার জানান, এর আগে ‘৭১-এ মে মাসের দিকে ইস্কান্দার আলী মৃধা ও সহযােগী নূর হােসেনের যৌথ নেতৃত্বে উপজেলার। সাপলেজা ইউনিয়নের সংখ্যালঘু বাড়ৈ বাড়িতে হামলা চালিয়ে রাইফেলের গুলি দিয়ে। নিশি বাড়ৈসহ ১৭ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করে ঐ বাড়ির ধনসম্পদ লুট করে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। মঠবাড়িয়া কেএম লতিফ ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক বীর মুক্তিযােদ্ধা জানান, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ইস্কান্দার আলী মৃধা সাপলেজা বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী গােপাল ডাক্তার, শ্যামলাল শাহ, শরৎ পালের দোকান লুট করে প্রায় কয়েক লাখ টাকা নিয়ে যায়। মুক্তিযােদ্ধারা জানান, ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হলেও এই রাজাকার সহজে পরাজয়  মেনে নিতে পারেনি। মঠবাড়িয়ায় বন্দুক উচিয়ে ১৬ ১৭ ডিসেম্বরেও ঘুরে বেড়ায়।  পরে ১৮ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণ করে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই রাজাকার বিভিন্ন দলে  ঢোকার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। এর পর স্বৈরাচারী এরশাদ ক্ষমতায় আসার পর জাতীয় । পার্টিতে যােগ দিয়ে রাজনৈতিকভাবে স্থান করে নেয়। জাতীয় পার্টির পতনের পর বিএনপি ক্ষমতায় এলে ভােল পাল্টিয়ে সে আবার বিএনপিতে যােগ দেয়। বিগত নির্বাচনে স্থানীয় টিকিকাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানও নির্বাচিত হয়। বর্তমানে এই রাজাকার কমান্ডার মঠবাড়িয়া উপজেলা বিএনপির কার্যকরী কমিটির প্রভাবশালী

জনকণ্ঠ ॥ ০৯-০২-২০০১

সূত্র : সেই রাজাকার – জনকন্ঠে প্রকাশিত রিপোর্টের সংকলন