You dont have javascript enabled! Please enable it!

সৈয়দপুরের আজিজুল বাহিনীকে মানুষ জানত খাতামধুপুরের মিলিটারি হিসাবে

জনকণ্ঠ ॥ এমএ মান্নান, সৈয়দপুর থেকে। একাত্তরে সৈয়দপুরের স্বাধীনতাকামী ও সংখ্যালঘুদের হত্যা, নির্যাতন, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযােগের নেতৃত্বদানকারী রাজাকার আজিজুল ইসলাম চৌধুরী এখন (০৬-০৩-২০০১) সৈয়দপুর উপজেলার খাতামধুপুর ইউপি চেয়ারম্যান। এই আজিজুল পাকসেনা ও রাজাকার দিয়ে হত্যা করিয়েছে এ দেশের মুক্তিকামী মানুষ ও মুক্তিযােদ্ধাদের। আজকে তার দামী পােশাক খুললে শরীরে পাওয়া যাবে মুক্তিযােদ্ধাদের গুলির দাগ। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে আজিজুল চৌধুরী মুক্তিযােদ্ধাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযান চালিয়ে সফল হয় এবং সৈয়দপুর শহরের অবাঙালী নেতাদের সাথে হাত মিলিয়ে পাকসেনাদের আস্থা অর্জন করে। পাকসেনাদের সাথে সখ্যের কারণে তার হাতে চলে আসে অনেক অস্ত্র। আর সেই অস্ত্র, গােলাবারুদ নিয়ে খাতামধুপুর গ্রামের বাড়িতে তৈরি করে মিনি ক্যান্টনমেন্ট ও টর্চার সেল। গ্রাম ও আশপাশের শতাধিক যুবককে সে দলে টেনে প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তােলে দুর্ধর্ষ এক সশস্ত্র পাক দোসর রাজাকার বাহিনী। একাত্তরে খাতামধুপুরের চারপাশের ২০ গ্রাম জনপদের মানুষ এ ভয়ঙ্কর বাহিনীকে জানত খাতামধুপুর মিলিটারি’ হিসাবেই। আজিজুল চৌধুরীর নেতৃত্বে খাতামধুপুরের এই মিলিটারি বাহিনী এক এক করে লুটপাট, অগ্নিসংযােগ, খুন, ধর্ষণ চালায়। সৈয়দপুরের অবাঙালী নেতাদের সে নিয়ে যেত সৈয়দপুর শহরসহ কামারপুকুর, বােতলাগাড়ী, কাশিরাম বেলপুকুরসহ বিভিন্ন গ্রামে। পরে তার বাড়িতে বসে পরিকল্পনা করা হতাে বিভিন্ন অপকর্মের। একাত্তরে বিহারীপ্রধান শহর ও সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্টের গুরুত্ব বাড়ানাে এবং এখান থেকে গােটা উত্তরাঞ্চল নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে সৈয়দপুরে একটি বিমানবন্দর প্রতিষ্ঠা করার সিদ্ধান্ত নেয় পাকিরা। সে সময় এই রাজাকারের নেতৃত্বে প্রতিদিন গ্রাম থেকে ট্রাকভর্তি নিরীহ বাঙালীদের ধরে আনা হতাে বিমানবন্দরের কাজ করানাের জন্য। এ সময় তাদের ওপর চালানাে হতাে অমানুষিক নির্যাতন। বিজয়ের কিছুদিন আগে হাজারীহাট কালীমন্দিরের কাছে মুক্তিযােদ্ধা ও এই রাজাকার বাহিনীর সাথে গুলিবিনিময়ের সময় মুক্তিযােদ্ধাদের হাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয় রাজাকার আজিজুল ইসলাম। গুলি তার পায়ে লাগে । এ সময় তার সহযােগী রাজাকার জব্বার আমিনও গুলিবিদ্ধ হয়। পরবর্তীতে সৈয়দপুর শহরে চিকিৎসাধীন থেকে তারা জীবন রক্ষা করে। অভিযােগ রয়েছে ‘৭১-এ এই রাজাকার মুক্তিপাগল অনেক মানুষের রক্তে রাঙিয়েছে নিজের হাত। সেই আজিজুল ইসলাম চৌধুরী স্বাধীনতার ৩০ বছর পর (০৬-০৩-২০০১) খাতামধুপুর ইউপি চেয়ারম্যান অথচ এখনও তার বাহিনীর অত্যাচারের কথা মনে করলে এলাকার মানুষ শিউরে ওঠে। একাত্তরের এই কুখ্যাত রাজাকার আজিজুল ইসলাম চৌধুরী পাক বাহিনীর সাথে তার দল নিয়ে আত্মসমর্পণ করেছিল। পাক বাহিনীর সাথে এদের ঠাই হয়েছিল কারাগারে। পরবর্তীতে সাধারণ ক্ষমার আওতায় জেল থেকে বেরিয়ে আসে। সেই থেকে সে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির বিরুদ্ধে সক্রিয় আছে।

জনকণ্ঠ ॥ ০৬-০৩-২০০১

সূত্র : সেই রাজাকার – জনকন্ঠে প্রকাশিত রিপোর্টের সংকলন

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!