You dont have javascript enabled! Please enable it! নওয়াপাড়ার মেজো হুজুরের নির্দেশে অসংখ্য মানুষকে হত্যা করে ফেলে দেয়া হয়েছে ভৈরব নদে - সংগ্রামের নোটবুক

নওয়াপাড়ার মেজো হুজুরের নির্দেশে অসংখ্য মানুষকে হত্যা করে ফেলে দেয়া হয়েছে ভৈরব নদে

জনকণ্ঠ রিপাের্ট ॥ খাজা সাঈদ শাহ মেজো হুজুর যশােরের নওয়াপাড়ার পীর একাত্তরে “টিআই প্যারেড’-এ মুক্তিযােদ্ধা শনাক্ত করে অগণিত নিরীহ মানুষকে হত্যার হুকুম দিয়েছে। তার নির্দেশে স্বাধীনতার পক্ষের মানুষদের হত্যা করে ভৈরব নদে ফেলে দেয়া হয়েছে। অভয়নগর থানার পিস কমিটি ও রাজাকার বাহিনীর প্রধান ছিল মেজো হুজুর। ধর্মের নামে সে যে তাণ্ডব চালিয়েছে তা ইতিহাসে নেই। প্রভাবশালী পীর বংশের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস কারও নেই। কিন্তু জনকণ্ঠে সেই রাজাকার প্রতিবেদন প্রকাশ অব্যাহত থাকায় অনেকেই ব্যক্তিগতভাবে, চিঠির মাধ্যমে মেজো হুজুরের কুকীর্তি লেখার জন্য অনুরােধ করেছেন। সরবরাহ করেছেন একাত্তরে এই পীরের ফিরিস্তি। অনুসন্ধানে জানা যায়, মেজো হুজুরের বরাবরই পাকিবাহিনীর সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক ছিল। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে মেজো হুজুর স্থানীয় অপরাধীদের নিয়ে একটি কিলিং স্কোয়াড গড়ে তােলে। অভয়নগর থানা এলাকায় সে মানুষ হত্যার জন্য ২২ জল্লাদ রিক্রুট করে। এই জল্লাদরাই হুজুরের নির্দেশে মানুষের রক্তে ভৈরব নদের পানি লাল করেছে। এখনও মাছ ধরার সময় জালে উঠে আসে মানুষের হাড়-কঙ্কাল। সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, মেজো হুজুরের নির্দেশে রাজাকারবাহিনী অভয়নগর, নড়াইল, মনিরামপুর, ফুলতলা, ডুমুরিয়া, কেশবপুর এলাকা থেকে নিরীহ মানুষদের ধরে আনে।

পরে ভৈরব নদীর পাশের মাছ বাজার ও ওয়াপদার জেটিতে এদেরকে হত্যা করে নদীতে ফেলে দেয়া হয়। নওয়াপাড়ার পুরনাে বাসস্ট্যান্ডের পাশে আমজাদ মােল্লার বাড়ি ছিল মেজো হুজুরের টর্চার সেল। বর্তমানে সেখানে বিএনপির অফিস। স্থানীয় এলাকাবাসীরা জানান, এই টর্চার সেলে মেজো হুজুর যে নির্যাতন চালিয়েছে মানুষের ওপর তা বর্ণনা করা কারও পক্ষেই সম্ভব নয়। আরও জানা যায়, এই রাজাকার পাণ্ডার নির্দেশে গুয়ােখােলার আব্দুল বারিক, বুই কারার নজিবর, আলালকে হত্যা করা হয়। জল্লাদ মান্নান, সবদুল, ওহাব, কাজী এরাই মানুষ জবাই করে হুজুরের নির্দেশ পালন করেছে। মানুষ হত্যায় তাকে পাকিবাহিনী চ্যাম্পিয়ন ট্রফি হিসাবে একটি উইলি জীপ উপহার দেয়। এই জীপে ঘুরে একাত্তরে সে পুরাে অভয়নগরের মাটি কাঁপিয়েছে। ১৯৭০ সালে মেঝাে হুজুর নেজামী ইসলামীর ব্যানারে বই মার্কায় নির্বাচনে দাড়িয়ে পরাজিত হয়। স্বাধীনতার পর মেজো হুজুর পীর বাড়ির খাসমহলে আত্মগােপন করে থাকে। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর ফের সে লাইম লাইটে আসে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে মেজো হুজুর ফের খাসমহলে প্রবেশ করে। এরপর থেকে আর কেউ তার চেহারা দেখতে পায়নি। সংবাদকর্মী, মুক্তিযােদ্ধা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, ছাত্র, শিক্ষকসহ অভয়নগরের মানুষ মেজো হুজুরের একাত্তরের নৃশংসতা সম্পর্কে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কথা বলেছেন। তাদের ভাষ্য হচ্ছে, ধর্মের লেবাসধারী এই নরঘাতকের বিচার করা হােক। এ ব্যাপারে মেজো হুজুরের ভাষ্য নেয়ার জন্য কয়েক ‘ দফায় যােগাযােগ করা হলে পীর বাড়ি থেকে জানিয়ে দেয়া হয়, তিনি কারও সঙ্গে কথা বলেন না।

জনকণ্ঠ ॥ ০৭-০৪-২০০০

সূত্র : সেই রাজাকার – জনকন্ঠে প্রকাশিত রিপোর্টের সংকলন