You dont have javascript enabled! Please enable it! বিজয়ের তিন মাস আগেও যশােরে পিস কমিটির সদস্যরা দুষ্কৃতকারী প্রতিরােধের শপথ নেয় - সংগ্রামের নোটবুক

বিজয়ের তিন মাস আগেও যশােরে পিস কমিটির সদস্যরা দুষ্কৃতকারী প্রতিরােধের শপথ নেয়

জনকণ্ঠ রিপাের্ট ॥ ১৯৭১ সালে জাতি যখন স্বাধীনতার জন্য মরণপণ সশস্ত্র যুদ্ধে লিপ্ত দখলদার পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে, তখন পাকিদের মদদে এগিয়ে এসেছিল এ দেশেরই কিছু কুসন্তান, যারা পাকিস্তানীদের চেয়ে বেশি পাকিস্তানী ছিল। এরা প্রথমে গঠন করেছিল শান্তি কমিটি’। পরে পাকিস্তানীদের দোসর হিসাবে সৃষ্টি হয়েছিল রাজাকার, আলবদর, আলশামসসহ বিভিন্ন প্যারা মিলিটারি বাহিনী। পিস কমিটির এবং রাজাকার, আলবদর, আলশামস সদস্যদের নৃশংসতার নির্মমতা এখনও জাতির স্মৃতিতে বিভীষিকা হয়ে আছে। এই পিস কমিটিসহ বিভিন্ন সহযােগী সংগঠন পরিচালনার জন্য এক বাঙালী উর্ধতন পুলিশ কর্মকর্তার অধীনে খােলা হয়েছিল একটি বিশেষ দফতর। স্বাধীনতার পর সে দফতর থেকে উদ্ধারকৃত বিভিন্ন দলিলপত্রে শান্তি কমিটি, রাজাকার, আলবদর ও আলশামসসহ কিছু সংগঠনের সদস্যদের নাম ও তৎপরতা জানা যায়। উদ্ধারকৃত দলিলগুলাের কিছু আমাদের হাতে এসেছে। তারই ভিত্তিতে রচিত নিচের প্রতিবেদন ও দালালদের তালিকা। যশাের শহর পিস কমিটি একাত্তরে যশাের শহর পিস কমিটির সদস্যদের তালিকা পাওয়া গেছে।

২৫ সদস্যের দালালদের এ কমিটির তালিকাটি কমিটির চেয়ারম্যান মােঃ কামরুদ্দিন বিএ দ্বারা স্বাক্ষরিত। প্রাপ্ত কয়েকটি দলিলের মধ্যে একটি হচ্ছে শহর কমিটি গঠনের। এতে দেখা যায়, মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের তিন মাস আগেও যশােরে পিস কমিটির সদস্যরা ‘দুষ্কৃতকারী’ প্রতিরােধের শপথ নেয়। তাদের পাকিস্তানী প্রভুদের খুশি করতে এই স্বাধীনতাবিরােধীরা ছিল ব্যাপকভাবে তৎপর । বৈঠকের পর বৈঠক, কমিটির পর কমিটি গঠনের তােড়জোড় চলছিল – যশাের শহরে। একটি দলিলে শহরের নয়া উপশহরেও একটি পিস কমিটি গঠন করা হয়েছিল বলে জানা যায়। এ অঞ্চলটি এনএস টাউন নামে পরিচিত। এ দলিলটিতে উক্ত কমিটির ১৫ সদস্যের নামও রয়েছে। আরেকটি দলিলে দেখা যায়, শহরের বেজপাড়া-শংকরপুর ইউনিয়নের ১২টি ওয়ার্ডের। ১০টিতে পিস কমিটি গঠিত হয়। এ কমিটিগুলােতে মােট সদস্যসংখ্যা ছিল ১৭৩। এতে স্বাক্ষর করে ইউনিয়ন কমিটির সেক্রেটারি মােঃ সলিমউল্লাহ খান। এতে বােঝা যায়। ইউনিয়ন পর্যায়েও কমিটি গঠিত হয়েছিল। ১১ নং ঘােপ ও পুরাতন কসবা ইউনিয়নেও একটি কমিটি গঠিত হয়েছিল। এ কমিটি এক সভায় “দুষ্কৃতকারীদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা”র সঙ্কল্প নিয়ে এক প্রস্তাব নিয়েছিল। প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, সদস্যরা সশস্ত্র বাহিনীকে যে কোন সময় সহায়তা করার জন্য প্রস্তুত থাকবে। শান্তি কমিটির সদস্যদের মধ্যে নাজিমুদ্দিন আল-আজাদ স্বৈরাচারী এরশাদের প্রতিমন্ত্রী ও বেগম আয়েশা সরদার সংসদ সদস্যও হয়েছিল। প্রাপ্ত দলিলগুলােতে শহর কমিটির চেয়ারম্যানের অনুমােদন রয়েছে। এতে প্রতীয়মান হয় যে, আগস্ট মাসে যশাের শহরে শান্তি কমিটিগুলাে খুবই সক্রিয় ছিল। শহর কমিটি গঠনের দলিলটিতে দেখা যায়, এটি টাইপ হয়েছে ১০ আগস্ট, ১৯৭১। কিন্তু শহর পিস কমিটির চেয়ারম্যান এতে স্বাক্ষর করেছে ২৭ আগস্ট। দলিলগুলাের অনুলিপি দেয়া হয়েছে যশােরের উপ-সহকারী সামরিক আইন প্রশাসক, ডিসি, এসপি, ওসি কোতােয়ালি, জেলা শান্তি কমিটিকে। শহর কমিটিকে সংক্ষেপে বলা হতাে “টিপিসি”- অর্থাৎ টাউন পিস কমিটি। নিচে কমিটিগুলাের তালিকা দেয়া হলাে

শহর কমিটি

১. চেয়ারম্যান মােঃ কামরুদ্দিন বিএ, চৌরাস্তা, ২. ভাইস-চেয়ারম্যান মােঃ শরীফ, রেলগেট, ৩, সেক্রেটারি- ডাঃ মাসুদুর রহমান, ঐ, ৪. এ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জয়নাল আবেদীন, স্মিথ রােড, ৫, এ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি- ওয়ালী আহমদ, এনএস। টাউন, ৬. প্রােপাগান্ডা সেক্রেটারি- সগীর আহমদ, রেলগেট, ৭. অফিস সেক্রেটারিনাজিমুদ্দিন আল-আজাদ, যশাের। ৮. সদস্য মােহাম্মদ হাসান, মিলন ট্রান্সপাের্ট, ৯, মির্জা মােহাম্মদ আলী, বিকে রােড, ১০. মাহবুব সাব্বানী, ঘােপ, ১১. নূর মােহাম্মদ, ঘােপ, ১২. কামরুজ্জামান, ঘােপ, ১৩. শেখ হাসান আলী, বারান্দিপাড়া, ১৪. সােলায়মান হাসান, লােন অফিসপাড়া, ১৫. মােঃ নাজিরুদ্দিন, এ্যাডভােকেট, ঐ, ১৬. আজিজুর রব খান, এ্যাডভােকেট, ঐ, ১৭. রেজাউল হক, এ্যাডভােকেট, বারান্দিপাড়া, ১৮. এসএম ইলিয়াস, বেজপাড়া, ১৯. মুনশী মােঃ ইয়াকুব, ঐ, ২০. হাফেজ বদরুজ্জামান, ইসলামিয়া স্কুল রােড, ২১. খন্দকার জহুরুল হক, যশাের, ২২, শামসুর রহমান (খােকা মিয়া), ঐ, ২৩, বেগম আয়েশা সরদার, ঐ, ২৪, ওয়ালিউল হক, বারান্দিপাড়া, ২৫. খন্দকার মনােয়ার হােসেন, এ্যাডভােকেট, যশাের।

এনএস টাউন কমিটি

এ কমিটিটি ছিল ১৫ সদস্যের। তালিকায় স্বাক্ষর রয়েছে কমিটির কনভেনরের। তবে এতে কবে কমিটি গঠিত হয় সে তারিখটি নেই। কিন্তু শহর কমিটির চেয়ারম্যান এর অনুমােদন দেয় ২৭ আগস্ট। কমিটির তালিকা ঃ কনভেনর ওয়ালী আহমদ (এ দালালটি শহর কমিটির এ্যাসিস্ট্যান্ট। সেক্রেটারি)। সদস্যবৃন্দ- নাসির আহমদ, নিসার আহমদ, জালালউদ্দিন আকবর, ফিরােজ সিদ্দিক, নজর হুসেন, সুলতান আহমদ, শামিমউদ্দিন, নিজামুল হক, উমর খান, আমিনুল আহসান, হাসান ইমাম, ইউনুস মল্লিক, আমিনুল্লাহ ও আমজাদ হােসেন।

বেজপাড়া-শংকরপুর ইউনিয়ন

১ নং ওয়ার্ড চেয়ারম্যান শামসুর রহমান; ভাইস চেয়ারম্যান ও মােজাফফর হােসেন। ও মােঃ ইয়াসিন; সেক্রেটরি ঃ আলহাজ মেসবাহউদ্দিন আহমদ; জয়েন্ট সেক্রেটারি ? মােঃ আলী মির্জা; সদস্য ঃ সুলতান আহমদ, নিশাতউল্লাহ, মনােয়ার হােসেন, নাসির খান, আনােয়ার হােসেন, আবদুস সাত্তার ও শাহাদত হােসেন। ২ নং ওয়ার্ড চেয়ারম্যান ও ডাঃ এমএ লতিফ; ভাইস চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুর রহমান, খন্দকার জহুরুল হক ও মােঃ ইয়াসিন; সেক্রেটারি ঃ মােঃ হানিফ (কল্যাণ); জয়েন্ট সেক্রেটারি ঃ ইয়াকুব হােসেন ও সাদিক হােসেন; এ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ঃ মােঃ সুলায়মান; সদস্য ঃ ডাঃ মাসুদুর রহমান, মােঃ হানিফ, আহমদ খান, মােঃ শরীফ, এমএ হােসেন, লিয়াকত হােসেন, খােরশেদ আলম, এমএ মজিদ, আফসারউদ্দিন আহমদ, মােঃ ভূটান, মােঃ ইউসুফ, এ আজিম, সৈয়দ খান, মােঃ ইলিয়াস ও মােঃ মেসের আলী । ৩ নং ওয়ার্ড চেয়ারম্যান ও হারেস উদ্দিন আহমদ; ভাইস চেয়ারম্যান ঃ খােরশেদ আহমদ তরফদার; সেক্রেটারি ঃ মােঃ ইসরাইল; জয়েন্ট সেক্রেটারি ? এএসএম আবদুর রশিদ; এ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ঃ মােঃ হানিফ খান; সদস্য ঃ খলিলুর রহমান, সফিউদ্দিন আহমদ, আবদুল আজিজ মােল্লা, শেখ শহিদুল হক, মােঃ আসাদুজ্জামান, এসএম জাহিদ, মুসতানজির বিল্লাহ, মােঃ ইসলাম, শেখ বেলায়েত আলী, হােসেন কাওসার, মাে: হােসেন, নাসিরুদ্দিন ও আতিয়ার রহমান। ৪নং ওয়ার্ড – চেয়ারম্যান: মাে: আজম খান; ভাইস চেয়ারম্যান ও আলহাজ সানাউল্লাহ; সেক্রেটারি ও কাজী জামাল আহমদ; জয়েন্ট সেক্রেটারি ঃ মােঃ ইউসুফ, মীর জহুরুল হক ও আবদুর রউফ।

৬ নং ওয়ার্ড চেয়ারম্যান ঃ মুজিবুর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান ঃ নিসার আহমদ; সেক্রেটারি ঃ মােঃ হাবিবুল্লাহ; জয়েন্ট সেক্রেটারি ৪ তারিফুদ্দিন বিশ্বাস; সদস্য ও ওয়ালী মােহাম্মদ, মােঃ ইয়াহিয়া, আবদুর রাজ্জাক (১), মােঃ সাব জান, আবদুল হামিদ, আবদুর রব, আবদুর রাজ্জাক (২), মােঃ ইয়াকুব, তবিবুর রহমান, কাজী মােফাজ্জল হােসেন ও মােঃ ইবরাহীম। ৭ নং ওয়ার্ড চেয়ারম্যান ও গােলাম রসুল; ভাইস চেয়ারম্যান জহির হােসেন; সেক্রেটারি ঃ খন্দকার নূরুজ্জামান; জয়েন্ট সেক্রেটারি ঃ মােঃ আনােয়ার জাহান ও হাশেম আলী; সদস্য ও সেরাজুদ্দিন, আবদুর রহিম, আবদুস শাকুর, আবদুস সাত্তার খান, আবদুল ওহাব, শেখ রহিম বখশ, কাজী সুলতান আহমদ, মকসুদুর রহমান, মহিউদ্দিন আহমদ ও প্রফেসর আবদুর রউফ। ৮ নং ওয়ার্ড চেয়ারম্যান ও মােঃ শফি; ভাইস চেয়ারম্যান শেখ বদরুদ্দোজা; সেক্রেটারি ঃ মােঃ আনসার উদ্দিন খান; এ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ঃ এসএম গিয়াস উদ্দিন; সদস্য ও মােঃ আব্দুল করিম বিশ্বাস, মােখলেছুর রহমান, শেখ আব্দুল গনি,নওশন আলী, খন্দকার মনােয়ার হােসেন, কাজী ফখরুল ইসলাম, আব্দুল মালেক, শওকত আলী, আব্দুর রউফ। ১০ নং ওয়ার্ড চেয়ারম্যান ও মিয়া আবুল কাশেম; ভাইস চেয়ারম্যান ঃ শামসুদ্দিন আহমদ; সেক্রেটারি ঃ মােঃ আবু মিয়া; জয়েন্ট সেক্রেটারি ঃ শেখ আমির আলী ও এসএম গিয়াসউদ্দিন; সদস্য ও ওয়াকিলউদ্দিন আহমদ, মােঃ তালেহ মােল্লাহ, হানিফ মােল্লা, এলাহী বখশ মােল্লা, আবদুল জলিল সরদার, এবরাহীম মােল্লা, জুরাল হক গাজি, ইজ্জত আলী মােল্লা, রাকাব্বর আলী শেখ, তফসির উদ্দিন আহমদ, আরশাদ আলী সরদার, সেকান্দার আলী, আবুল হােসেন শেখ, দলিল উদ্দিন আহমদ, মােঃ মকিম, শামসুর রহমান খান, জিব্রাইল, মাবুদ আলী, সােলায়মান, শাকায়েত আলী, আবদুল মােতালেব গাজি, জুলফিকার, বাবর আলী, আবদুল মান্নান, আবুল হােসেন, ইয়াসিন এরফদার ও কাজী শুকুর আলী। ১১ নং ওয়ার্ড চেয়ারম্যান ও শেখ মাহবুবুর রহমান; ভাইস চেয়ারম্যান ও আবদুস সামাদ; সেক্রেটারি ঃ শেখ হাফিজুল্লাহ; জয়েন্ট সেক্রেটারি ঃ এসএম ইয়াহিয়া ও শেখ আবদুস সামাদ; এ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ঃ মােঃ মতিহার রহমান; সদস্য ও সিরাজুদ্দিন, মাহবুবুর রহমান, আবদুর রহমান, মােহাম্মদ আলী, মােঃ জাফর আলী খান, নূর মােহাম্মদ খান, নুরুল হুদা, আবদুল মজিদ, হাজী গােলাম মােস্তফা ও শেখ লুতফর এহমান। ১২ নং ওয়ার্ড চেয়ারম্যান ঃ খান হাবিবুর রহমান খান; ভাইস চেয়ারম্যান ও মােঃ ইবরাহিম; সেক্রেটারি ও মীর আবদুস শুকুর; জয়েন্ট সেক্রেটারি ঃ শফিউদদীন আহমদ, শেখ শামসুল হক ও শেখ কোরবান আলী; এ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ও আবদুল গাফফার তরফদার; সদস্য ও আবদুল করিম, আব্বাস আলী লস্কর, শেখ সৈয়দ, শেখ কাদের বখশ, ফখরুদ্দিন, মােহাম্মদ শফি, শেখ আখতার হােসেন, মােঃ ইসাহাক, আবদু রাজ্জাক, শেখ আবদূল জলিল, শেখ খােরশেদ আলী ও মেসবাহ উদ্দিন আহমদ।

জনকন্ঠ॥ ১৮-০২-২০০১

সূত্র : সেই রাজাকার – জনকন্ঠে প্রকাশিত রিপোর্টের সংকলন