You dont have javascript enabled! Please enable it!

যশােরের বাঘারপাড়ার জল্লাদ খালেক বঁটি দিয়ে মানুষ টুকরাে করত, কেটেছে গৃহবধূর স্তন

ফখরে আলম, যশাের থেকে কুখ্যাত রাজাকার আবদুল খালেক বটি দিয়ে মানুষ টুকরাে করেছে। অশ্লীল উল্লাসে কেটে নিয়েছে গৃহবধূর স্তন। অগণিত মানুষ হত্যার জল্লাদ -অস্পষ্ট-(শারের) বাঘারপাড়া থানার দৌলতপুর গ্রামের সেই রাজাকার আবদুল খালেক এখন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা। পর পর দু’বার রাজাকারী কায়দায় সে জনপ্রতিনিধিও নির্বাচিত হয়েছে। আবদুল খালেক বরাবরই দুর্ধর্ষ প্রকৃতির লােক ছিল। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে সে রাজাকারে নাম লিখিয়ে বাঘারপাড়া- রায়পুর রাজাকার ক্যাম্পের কমান্ডারের দায়িত্ব নেয়। এর পর সে তার বাহিনী নিয়ে পুরাে বাঘারপাড়া থানা ও সদর থানার একাংশে একাত্তর সালে সে নারকীয় তাণ্ডব চালায় যা এখনও প্রবীণ ব্যক্তিরা মনে করে শিউরে ওঠেন। অনেকে তার ছােড়া গুলির ক্ষত নিয়ে পঙ্গু হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। খালেকের নৃশংসতার কথা উঠলে এখনও গ্রামের পর গ্রাম কেঁপে ওঠে। মানুষের চোখ ক্ষোভেঘৃণায় রক্তজবার মতাে লাল হয়। খালেক রামকৃষ্ণপুর গ্রামের জগবন্ধু আর তার স্ত্রীকে যেভাবে হত্যা করেছে সে কাহিনীর বর্ণনা করা সম্ভব নয়। বাড়ির উঠানে জগবন্ধুর স্ত্রীর স্তন কেটে নিয়ে খালেক তার সঙ্গীদের নিয়ে উল্লাস করে। এর পর দু’জনকে হত্যা করে উলঙ্গ অবস্থায় একজনের দেহ অন্যজনের ওপর ফেলে রেখে পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ ধ্বনি দিয়ে চলে যায়। খালেকের এমন নৃশংসতার অসংখ্য ইতিহাস রয়েছে।

এই খালেকের নাম শুনলে এখনও যশাের সদর থানার মনােহরপুর গ্রামের সব কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যায়। কেননা খালেক এ গ্রামে ১ জন মহিলাসহ ৬ জনকে একাই নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। তার বর্বরতার সাক্ষী হয়ে গ্রামের অনেকে বিকলাঙ্গ হয়ে বেঁচে আছেন। সরেজমিনে মনােহরপুর গ্রাম ঘুরে সেদিনের গণহত্যাকাণ্ডের কাহিনী জানা গেছে। একাত্তরের ২৮ নবেম্বর খালেক তার সঙ্গী ৩০/৪০ জন রাজাকার নিয়ে মনােহরপুর গ্রামে চড়াও হয়। সকালে ভাত খাওয়ার সময় সে গুলি করে হত্যা করে মা ছহিরন নেছা (৫০), ছেলে। ফজলে করিম বিশ্বাস (৩৫), আর এক ছেলে রুস্তম আলী বিশ্বাস (৩০)কে। এ ছাড়া আরও হত্যা করে কৃষক আবদুল হক, কোবাদ আলী ও আবদুল জব্বারকে। খালেকের। গুলিতে গুরুতর আহত হয় মা ছহিরন নেছার আর এক ছেলে ইব্রাহীম ও তার মেয়ে রাহেলা খাতুন। ইব্রাহীমের পেটে গুলি লেগে পিঠ দিয়ে বের হয়ে যায়। রাহেলার গুলি লাগে মুখে। গুলি এখনও তার মুখের ভিতর রয়েছে। গুলিবিদ্ধ এ দু’জন স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারেন না। ইব্রাহীম ও রাহেলা বলেন, ঘটনার আগের দিন গ্রামের পাশে মুক্তিযােদ্ধা ও রাজকারদের মধ্যে যুদ্ধ হয়। সকাল ১০টার দিকে খালেক তার বাহিনী নিয়ে গ্রামে এসে গুলিবর্ষণ শুরু করে। কেউ ভাত খাচ্ছিল, কেউ ভাত খাওয়ার পর হুকা টানছিল। চোখের সামনে। জোয়ান ছেলেদের মৃত্যু যন্ত্রণা দেখে মা ছহিরন নেছা এগিয়ে আসেন।

খালেক তার শরীর গুলিতে ঝাঝরা করে দেয়। ইব্রাহীম আরও বললেন, হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে খালেক পুরাে গ্রাম আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে ছারখার করে। গরু-ছাগল, ধানসহ সব সম্পদ লুট করে নিয়ে যায়। গ্রামের প্রবীণ মহিলা ইব্রাহীমের চাচি আমেনা খাতুন (৭০) বলেন, খালেক আমার সামনেই ফজলে আর রুস্তমকে হত্যা করেছে। ঐ সময় খালেকের সঙ্গে ওয়াজেদ আর খাজুরার সিরাজও ছিল। মনােহরপুরের এই নৃশংসতার কথা গ্রামের সব মানুষ জানে। কিন্তু খালেকের কেন বিচার হয়নি? সে প্রশ্নের উত্তর তারা জানে না। জানা যায়, স্বাধীনতার পর খালেক পালিয়ে যায়। ১৯৭৫ সালের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর খালেক দৌলতপুর গ্রামে ফিরে আসে। স্থানীয় নারকেলবাড়িয়া ইউনিয়নে পর পর দু’বার মেম্বর নির্বাচিত হয়। নিজেকে রক্ষার জন্য আওয়ামী লীগে যােগ দেয়। এখন সে ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি। এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি। এই রাজাকারের ফাসি চায় মনােহরপুর গ্রামের আবালবৃদ্ধবনিতা।

আবদুল খালেকের বক্তব্য

আবদুল খালেক বর্তমানে বাঘারপাড়া থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক। সে বলে, আমি রাজাকার ছিলাম না। মনােহরপুর গ্রামের হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে বলে, আমি এসবের কিছুই জানি না। মনােহরপুরে ৬ জনকে হত্যার ঘটনায় গ্রামের সব মানুষই তাকে দায়ী। করে- এ অভিযােগের জবাবে সে বলে, সব মিথ্যা। বিএনপির একটি স্বার্থান্বেষী মহল আমাকে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য এসব কথা বলছে। রায়পুর ক্যাম্পের রাজাকার কমান্ডার থাকার অভিযােগ সম্পর্কে খালেকের বক্তব্য, এমন কোন রেকর্ডপত্র কোথাও নেই। আমি পাকিস্তান আমল থেকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত।

জনকণ্ঠ। ২০-০৩-২০০১

সূত্র : সেই রাজাকার – জনকন্ঠে প্রকাশিত রিপোর্টের সংকলন

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!