You dont have javascript enabled! Please enable it!

খালেক মােড়লের নাম শুনলে যশােরের মানুষ এখনও আঁতকে ওঠেন

সাজেদ রহমান, যশাের অফিস ॥ যশােরের চারটি থানার রাজাকার কমান্ডার আবদুল খালেক মােড়লের বিরুদ্ধে অভিযােগ রয়েছে বহু নিরীহ মানুষ ও মুক্তিযােদ্ধাকে হত্যা করার। তার বাড়ি যশাের সদর উপজেলার কচুয়া গ্রামে। তার নির্মম নির্যাতনের কথা মনে হলে এখনও এলাকাবাসী আঁতকে ওঠেন। কৃষ্ণবণের নাদুস নুদুস আবদুল খালেক কচুয়া ও তার আশপাশের গ্রামগুলােতে এক সময় চুরি করে বেড়াত। একাত্তরে স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরু হলে সে যশােরের রূপদিয়া। বাজারে পাকিসেনাদের আস্তানায় বিভিন্ন এলাকার মুক্তিযােদ্ধাদের সম্পর্কে তথ্য দিত । লুট করার অভিযােগও আছে মুক্তিযােদ্ধাসহ বিভিন্ন লােকের বাড়ি। সে কারণে কচুয়া গ্রামে সবাই তাকে ‘কেলাে চোর’ বলে জানে। পাকি সেনাদের সাথে তার সম্পর্ক ভাল হওয়ায় তাকে যশাের সদর, বাঘারপাড়া, অভয়নগর ও মনিরামপুর থানার রাজাকার কমান্ডারের দায়িত্ব দেয়া হয়। নতুন দায়িত্ব পেয়েই কেলাে চোর খালেক’ কচুয়া মেঠোপাড়ার হাদিস, হাটবিলার ইজ্জত আলী, ঘাটকুল কচুয়ার যুবক সন্যাল মিস্ত্রি, ভগবতিতলার জলিল, বসুন্দিয়ার মাহফুজসহ শত শত মুক্তিযােদ্ধা ও নিরীহ গ্রামবাসীকে ধরে এনে হত্যা করে। অনেককে ধরে এনে রাখা হতাে রূপদিয়ার পাকিদের টর্চার সেলে। তার পর কয়েকদিন নির্যাতন চালানাে হতাে তাদের ওপর। যেমন বসুন্দিয়ার জঙ্গলবাধাল গ্রামের মুক্তিযােদ্ধা মাহফুজকে ধরে এনে কয়েকদিন নির্যাতন চালায়। রাজাকার খালেক ও তার দোসর পাকি সেনারা। এরপর তাকে হত্যা করে লাশ ফেলে দেয়া হয় পার্শ্ববর্তী ভৈরব নদে।

কয়েকদিন ধরে তার লাশ ভেসে ছিল পানিতে। কিন্তু কেউ তার লাশ তুলতে সাহস করেনি। নরেন্দপুরের মুক্তিযােদ্ধা মকবুল হােসেন রাজাকার খালেকের নারী নির্যাতনের কথা। উল্লেখ করে বলেন, কচুয়া ইউনিয়নের চৌকিদার মনসুর আলী একাত্তরে যুদ্ধের সময় একটি যুবতী মেয়েকে তার বাড়িতে আশ্রয় দেন। রাজাকার খালেক এ কথা জানতে। পেরে হাজির হয় মনসুরের বাড়ি। বলে ঐ মেয়েকে হাজির করতে হবে রূপদিয়ার পাকি। ক্যাম্পে। খালেক তাকে জোর করে তুলে নিয়ে যায়। পরে জানা যায় ধর্ষণের পর তাকে হত্যা করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ও এলাকার মুক্তিযােদ্ধারা এই রাজাকার খালেকের হত্যাযজ্ঞের স্মৃতি আজও ভুলতে পারেনি। রায় মানিক কচুয়ার মমিনুর রহমানের পুত্র মুক্তিযােদ্ধা খলিলুর রহমান সরদার রাজাকার ‘কেলাে চোর খালেক’ সম্পর্কে বলেন, ও আমার বাবাকে খুন করেছে। আষাঢ় মাসের মাঝমাঝি খালেকসহ ৩ জন রাজাকার এসে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায় বাবাকে। বাবা সরল বিশ্বাসে যায় খালেকের সাথে। মেঝ ভাই আবদুল জলিল যায় বাবার সঙ্গে। পালপাড়া খালের পাশে খালেক রাইফেলের বাট দিয়ে আঘাত করে ভাইকে। বলে তুই চলে যা, নইলে গুলি করব। এ সময় একটি ফাঁকা গুলি করে খালেক, বাবার লাশ আর পাওয়া যায়নি। আমরা তার বিচার দাবি করছি। রূপদিয়া রাজাকার ক্যাম্পে মুক্তিযােদ্ধাদের নির্যাতন করে হত্যার পর লাশ ফেলে দেয়া হতাে পাশে ভৈরব নদে। স্বাধীনতার পর স্থানীয় মুক্তিযােদ্ধা এবং সাধারণ মানুষ শত শত মাথার খুলি ও হাড়গােড় উদ্ধার করে সেখান থেকে। যুদ্ধ শেষে পাকি সেনাসহ রাজাকার খালেক ধরা পড়ে মুক্তিযােদ্ধাদের হাতে। দু’বছর কারাভােগের পর ছাড়া পায় ‘৭৩ সালের শেষের দিকে। এরপর শুরু করে পলাতক জীবন। এ সময় কিছুদিন যশাের শহরে ছিল সে। তার পর চাকরি নেয় যশােরের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।

জনকণ্ঠ ॥ ১৩-০১-২০০১

সূত্র : সেই রাজাকার – জনকন্ঠে প্রকাশিত রিপোর্টের সংকলন

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!