You dont have javascript enabled! Please enable it!

যশাের

মানুষ খুন করাই নেশা ছিল মেহের জল্লাদের, এখন দাওয়াখানা খুলে প্রতারণা করছে

ফখরে আলম ॥ যশােরের মনিরামপুর উপজেলার প্রায় সবাই মেহের জল্লাদকে এক নামে চেনে। একাত্তরে এই মেহের জল্লাদ যশাের এমএম কলেজের ভিপি মুক্তিযােদ্ধা আসাদ, জেলা কৃষক সমিতির সেক্রেটারি শান্তি, ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মানিক, লন্ডনের উচ্চ ডিগ্রীধারী প্রগতিশীল যুবক তােজো, আকরামসহ বহু মানুষকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। চামড়া ছিলে লবণ দিয়ে, রাজপথে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে মুক্তিযােদ্ধাদের হত্যা করার কারণে এই রাজাকার কমান্ডারের কুখ্যাতি সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় পাতন গ্রামের রাজাকার মেহেরুল ইসলাম মেহের জল্লাদ’ নামে সে সময় দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে আতঙ্ক ও ত্রাস হিসাবে গ্রামে গ্রামে কান্নার রােল সৃষ্টি করে। এই নর ঘাতকের। কোন বিচার হয়নি। সে বহাল তবিয়তে এখন দাওয়াখানা খুলে চিকিৎসার নামে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছে। মেহের জল্লাদ সম্পর্কে মনিরামপুরের নানা পেশার লােকের সঙ্গে কথা হয়। তার নাম শুনে এখনও সবাই আঁৎকে ওঠে। সবাই তার বিচার চায়। দীর্ঘ ৩০ বছরেও কেন তার বিচার হয়নি সে প্রশ্নের কোন জবাব মেলে না। মেহের সম্পর্কে সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, পাতন গ্রামের কবিরাজ ইয়াকুব আলীর ছেলে মেহের ক্লাস নাইন পাস।। একাত্তরের শুরুতেই সে রাজাকার কমান্ডার হয়ে একটি কিলিং স্কোয়াড’ গড়ে তােলে। তাহেরপুরের গৌরদাস বাবুর বাড়ি দখল করে মেহের সেখানে বালাখানা বানিয়ে। প্রতিরাতে বিভিন্ন গ্রাম থেকে মহিলাদের ধরে এনে ধর্ষণ করত। তার পর ধর্ষিত মহিলাকে হত্যা করে নদীতে ভাসিয়ে দিত। মানুষ খুন করা ছিল মেহেরের নেশা। কত মানুষকে সে হত্যা করেছে তার কোন সঠিক পরিসংখ্যান নেই।

অনুসন্ধানে জানা যায়, চিনেটোলায় শান্তি, তােজো, মানিক, আসাদ, তাহেরপুর মােড়ে (এখন আকরাম মােড়) আকরাম, শানতলার আলী আহমদ, তাহেরপুরের গােরা, মনিরামপুরের সাবেক চেয়ারম্যান মুসা, গৌরদাস, ফয়েতাবাজের ওহেদ, কোনাখােলার আকরাম, দুর্গাপুরের মােসলেম, খােকা, মনােহরপুরের তপন, আনন্দ, বাগডাঙার আমির, গােপালপুরের। ফজলু, মনােহরপুরের কল্পনা, তাহেরপুরের আলী ছাড়াও অসংখ্য নিরীহ মানুষকে মেহের হত্যা করেছে। মুক্তিযােদ্ধা আকরামকে বর্তমান আকরাম মােড়ে কবর খুঁড়িয়ে হাত-পা বাঁশের সঙ্গে বেঁধে চামড়া ছিলে মেহের লবণ দেয়। আকরাম পানি চাইলে তার মুখে শত শত মানুষের সামনে প্রস্রাব করে দেয়। দীর্ঘ নির্যাতনের পর এই বীর। মুক্তিযােদ্ধাকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। মােলখাদা গ্রামের মুক্তিযােদ্ধা মাতব্বর গাজী। মেহের সম্পর্কে বলেন, সে কত লােককে হত্যা করেছে তার কোন হিসাব কিতাব নেই। জুড়ানপুর গ্রামের কাজী সাহেব আলী বলেন, আকরামকে হত্যার দৃশ্য আমি দেখেছি। তাকে বাঁশের খুঁটিতে ঝুলিয়ে নির্মমভাবে মেহের হত্যা করেছে। এই নরঘাতক মেহের এখন মনিরামপুরের দোলখােলা মােড়ে জনতা দাওয়াখানা খুলে চিকিৎসার নামে প্রতারণার ব্যবসা ফেদেছে। সম্প্রতি মেহেরের বাড়ি মনিরামপুর থেকে ৮ কিঃমিঃ দূরে পাতন গ্রামে গিয়ে তার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে সে কোন  কিছু বলতে অস্বীকৃতি জানায়। শুধু এই প্রতিবেদকের দিকে অগ্নিমূর্তি ধারণ করে তাকিয়ে থাকে। তখন তার চোখ রক্তজবার মতাে লাল হয়ে ছিল।

জনকণ্ঠ ॥১২-১২-২০০০

সূত্র : সেই রাজাকার – জনকন্ঠে প্রকাশিত রিপোর্টের সংকলন

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!