You dont have javascript enabled! Please enable it! ঈশ্বরদীর মুলাডুলির পাকি দোসর ইসাহক আলী খাঁ এখন প্রতাপশালী মাতব্বর - সংগ্রামের নোটবুক

ঈশ্বরদীর মুলাডুলির পাকি দোসর ইসাহক আলী খাঁ এখন প্রতাপশালী মাতব্বর

জনকণ্ঠ রিপাের্ট ॥ ঈশ্বরদী উপজেলার মুলাডুলি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মুলাডুলি গ্রামের মৃত এনায়েত আলী খাঁর পুত্র কুখ্যাত রাজাকার পিস কমিটির চেয়ারম্যান ও পাকি বাহিনীর অন্যতম গুপ্তচর ইসাহক আলী খাঁ এখন গ্রামের প্রতাপশালী মাতব্বর। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাপুর স্কুলের শিক্ষক রফিকুল ইসলাম, ছাত্র সােবহান, মুক্তিযােদ্ধা ইউনুসের পিতা আফিল উদ্দিন, মুলাডুলি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারমান ইমান আলী খা, শ্ৰী শতীশ চন্দ্র ঘােষ, আব্দুল আওয়াল, ফজলুল হক, মফিজুর রহমান ও তার ভাই লাল মিয়াকে নৃশংসভাবে হত্যার অভিযােগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। মুক্তিযুদ্ধের সময় ইসাহক আলী খাঁ মুলাডুলি ও দাশুড়িয়া এলাকায় এক রাজাকার বাহিনী গড়ে তােলে এবং সে ছিল ওই বাহিনীর প্রধান। তার নেতৃত্বে এই বাহিনী মুলাডুলি ও দাশুড়িয়া এলাকায় লুটপাট ও নির্যাতন চালাতে থাকে। একাত্তরের এই রাজাকারদের নৃশংসতার প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা দিতে গিয়ে আব্দুর রাজ্জাক ও মিন্টু জানান, মুলাডুলি ইউনিয়নের যে সমস্ত স্থানে মুক্তিযােদ্ধাদের আশ্রয়স্থল ছিল, রাজাকার ইসাহক আলী গুপ্তচরের মাধ্যমে খোজ নিত এবং পাকি বাহিনী ও রাজাকার বাহিনীর দ্বারা যৌথভাবে। আক্রমণ চালানাে হতাে। মুক্তিযােদ্ধাদের না পেয়ে তাদের মালামাল লুট করে বাড়িঘরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিত। সুযােগ বুঝে মহিলাদের ওপরও অমানুষিক নির্যাতন চালানাে হতাে। এলাকার সাধারণ মানুষ এদের ভয়ে পালিয়ে বেড়াত। মুক্তিযােদ্ধাদের আশ্রয় দেয়ার অপরাধে অনেক নিরীহ গ্রামবাসীকে রাজাকার বাহিনীর নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। যুদ্ধচলাকালীন (স্থানীয় মুক্তিযােদ্ধাদের ভাষায়) সম্ভবত সােমবার সকালে মুক্তিযােদ্ধাদের সহযােগিতা করার অপরাধে মুলাডুলির সতীশ চন্দ্র ঘােষ, হাফিজুর রহমান ও তার ভাই লাল মিয়াকে নৃশংসভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়। একই দিন। আনুমানিক সকাল ১১টায় ইমান আলীকে তার বাড়ি থেকে ধরে এনে নিকটস্থ ইক্ষু গবেষণা কেন্দ্রের ফার্মে গুলি করে হত্যা করা হয়।

রাজাকার বাহিনীর হাতে নিহত অন্যদের মৃতদেহ মুক্তিযােদ্ধাদের সহযােগিতায় দাফন করা হলেও ইমান আলীর ক্ষেত্রে ঘটেছে ব্যতিক্রম। প্রকাশ্য দিবালােকে ইমান আলীকে গুলি করে হত্যার পর লাশ ফেরত দেয়া হয় না। ইমান আলীর পরিবার আজ পর্যন্ত তার লাশের সন্ধান পায়নি। স্বাধীনতার পর মুলাডুলির কয়েকজন রাজাকারের শাস্তিস্বরূপ কান কেটে দেয় স্থানীয় মুক্তিযােদ্ধারা। রাজাকার ইসাহক আলীর মনে এতটুকু দয়ামায়া ছিল না। মানুষ হত্যা করা এবং নির্যাতন করা তার নেশায় পরিণত হয়েছিল। এখনও ইসাহক আলী খাঁ ও তার বাহিনীর অত্যাচারের কথা মনে করলে এলাকার মানুষ শিউরে ওঠে। ইসাহক আলী। খা স্বাধীনতা-পূর্ব সময়ে মুলাডুলি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিল। জিয়াউর রহমানের সময়ে সে তাবলীগের আমির সেজে এলাকায় প্রবেশ করে পুনরায় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে একাধারে বেশ কিছুদিন দায়িত্ব পালন করে। বর্তমানে ইসাহক আলী খ সমাজে প্রতিষ্ঠিত ও প্রভাবশালী মাতব্বর। মুলাডুলি ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান আঃ কাদের মণ্ডল মুলাডুলির বিখ্যাত রাজাকার পিস কমিটির চেয়ারম্যান ইসাহক আলী খাঁর যুদ্ধচলাকালীন ভূমিকা সম্পর্কে বলেন, ইসাহক আলী খাঁর নেতৃত্বে এলাকার অনেক নিরীহ মানুষকে ধরে এনে গুলি করে। হত্যা করা হয়েছে। যাদের হত্যা করা হয়েছে তাদের মধ্যে হাফিজউদ্দিন, ফয়েজউদ্দিন, বর্তমান ইউপি সদস্য আবু সাইদের চাচা আবদুল, হাজারীপাড়ার ইমান আলী, আতিক উল্লাহ, কফিল উদ্দিন, আবুল হােসেন ও তাছের খার নাম উল্লেখযােগ্য। ইসাহক আলী খার বক্তব্য। ঈশ্বরদীর সেই রাজাকার ইসাহক আলী খাঁ বলে, আমি পিস কমিটির চেয়ারম্যান। ছিলাম। পাক বাহিনীর হাত থেকে এলাকাবাসীকে বাঁচানাের জন্য আমি ওই কমিটির চেয়ারম্যান হয়েছিলাম। স্বাধীনতা যুদ্ধে আমি বিরােধিতা করিনি। কোন মানুষ হত্যা, লুটপাট ও নারী নির্যাতন করিনি।

কাজেই ইমান আলীকে ফার্মে নিয়ে গুলি করে হত্যার পর তার লাশ ফেরত দেয়ার প্রশ্নই ওঠে না। ইমান আলীকে শ্রীপুরের আঃ রহিমের জনৈক আত্মীয় শত্রুতাবশত ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে। যুদ্ধচলাকালীন একদিন সকালে পাকি বাহিনীর মেজর জাফর মুলাডুলি হাটের পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে ২১ জনকে হত্যার উদ্দেশ্যে ধরে নিয়ে যায় । আমি জানার পর ওই মেজরকে বুঝিয়ে ওই ২১ জনকে সেভ করি। একই দিন বিকালে পাক বাহিনী ব্রিগেডিয়ার আঃ নঈম মুলাডুলি। এলাকা অপারেশন করতে আসার পর আমিই পিস কমিটির চেয়ারম্যান হিসাবে তাকে বুঝিয়ে অপারেশন বন্ধ করেছিলাম। যুদ্ধচলাকালীন আবদুলপুরে ডিনামাইট দিয়ে ট্রেন। উড়িয়ে দেয়ার পর পাকি আর্মিরা যে ১৭ জনকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল আমি তাদেরকেও রক্ষা করেছিলাম।

জনকণ্ঠ। ১৫-০৩-২০০১

সূত্র : সেই রাজাকার – জনকন্ঠে প্রকাশিত রিপোর্টের সংকলন