You dont have javascript enabled! Please enable it!

নান্দাইলে আওয়ামী লীগ নেতা হত্যাকারী রাজাকার মতিন এখন একই দলের নেতা

বাবুল হােসেন, ময়মনসিংহ থেকে ॥ একাত্তরের কুখ্যাত রাজাকার এখন ময়মনসিংহের এক প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা। এই রাজাকার নরঘাতক একবার জনপ্রতিনিধিও হয়েছিল। ময়মনসিংহের এই আলােচিত রাজাকারের নাম আবুদল মতিন ভুইয়া। তার বিরুদ্ধে নান্দাইল উপজেলায় মুক্তিযােদ্ধাদের হত্যা, লুটতরাজ, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযােগের বহু অভিযােগ রয়েছে। তার পিতা আবদুল গনি ভুইয়া ছিলেন আলবদর প্রধান। অপর সহােদর জসিমউদ্দিন ভুইয়া। এরা ছিল অস্ত্রধারী রাজাকার আলবদর।। একাত্তরের ১৭ নবেম্বর, ২৭ রমজানের ভােরবেলায় নান্দাইল উপজেলার আওয়ামী লীগ। সভাপতি শহীদ শাহনেওয়াজ ভুইয়া চারিআনাপাড়া গ্রামের বাড়িতে বসে কোরান শরীফ পড়ছিলেন। এই রাজাকার আবদুল মতিন ভুইয়ার নির্দেশে রাজাকার গফুর ও খােরশেদ বাড়ি থেকে ডেকে বাইরে আনে শাহনেওয়াজকে। সকাল ৮টায় বাড়ির আঙিনায় দাড় করিয়ে প্রথমে গুলি করে পেটে। মাটিতে লুটিয়ে পড়ার পর বুকে রাইফেলের নল ঠেকিয়ে আরও একটি গুলি করে ঘাতকরা শাহনেওয়াজের মৃত্যু নিশ্চিত করে। এর পর লাশ নিয়ে যাওয়া হয় নান্দাইল থানায়। রাজাকাররা আসছে খবর পেয়ে ছেলেমেয়েদের অন্য বাড়িতে লুকিয়ে রাখতে গিয়েছিলেন শহীদের বড় ছেলে গাজী আবদুর রউফ। ভুইয়া। বাড়িতে ফেরার আগেই ঘাতকরা তার বাবাকে গুলি করে হত্যা করে। এখানেই নরঘাতকদের বর্বরতার শেষ নয়। সে দিন এই রাজাকাররা বেলা ১০টায় লুট করে শহীদ শাহনেওয়াজের বাড়ি। পরে দুপুরে বাড়িতে অগ্নিসংযােগ করে উল্লাস নৃত্য করে। গাজী আবদুর রউফ জনকণ্ঠকে জানান, সে দিন ৬০ টাকার বিনিময়ে বাবার লাশ ফেরত পাই। রাজাকারদের ফের হামলার ভয়ে রাতের আঁধারে দাফন করতে হয়েছিল শহীদ শাহনেওয়াজের লাশ।

এ ব্যাপারে আবদুল মতিন ভুইয়া ও তার সহযােগীদের বিরুদ্ধে পরে থানায় মামলা (নং ৩(১)৭২) দায়ের করা হয়েছিল। একাত্তরের ১৪ নবেম্বর নান্দাইল চারিআনাপাড়া গ্রামের মায়া রানী চৌধুরীকে জোরপূর্বক ধরে নিয়ে আসে রাজাকার আবদুল মতিন ও তার সহযােগীরা। মায়া রানীকে সে দিন এই রাজাকাররা উল্লাসের সঙ্গে নির্যাতন করে। এ নিয়েও সে সময় মতিন ও তার সহযােগীদের বিরুদ্ধে। মামলা (নং-৮(৪)৭২) দায়ের হয়েছিল। পরে আবদুল মতিন গং জোরপূর্বক মায়া রানীদের ভারতে পাঠিয়ে দেয়। একাত্তরের এই কুখ্যাত রাজাকার আবদুল মতিন ভুইয়া ও তার বাবা আলবদর প্রধান আবদুল গনি ভুইয়া এলাকার ইমাম হােসেনের বাড়িতে লুটতরাজ চালানাের পর অগ্নিসংযােগ করে দিয়েছিল। এ ব্যাপারেও মামলা (নং ৪(১১)৭২) দায়ের করা হয়েছিল মতিন গংয়ের বিরুদ্ধে। এ ছাড়াও আবদুল মতিনরা এলাকার মুক্তিযােদ্ধা মাজহারুল হক ফকির ও রইচ উদ্দিনসহ অনেকের বাড়ি লুট করার পর অগ্নিসংযােগ করে। স্থানীয় মুক্তিযােদ্ধারা জানায়, মতিন রাজাকার মুক্তিযােদ্ধা ইলিয়াস ও শামসুল হকের কবরে গুলি করে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছিল। দেশ স্বাধীন হলে বিক্ষুব্ধ মুক্তিযােদ্ধা-জনতা রাজাকার মতিনের বাড়িঘরে হামলা ও অগ্নিসংযােগ করে। সে সময় গ্রেফতারও হয়েছিল এসব রাজাকার-আলবদর। পরে সাধারণ ক্ষমায় বেরিয়ে আসে। একাত্তরের সেই কুখ্যাত রাজাকার আবদুল মতিন ভুইয়া এখন ময়মনসিংহের আওয়ামী লীগ নেতা। একবার এই নেতা নান্দাইল উপজেলা চেয়ারম্যানও হয়েছিল আওয়ামী লীগের লেবেলে। আগামী জাতীয় নির্বাচনেও নাকি আওয়ামী লীগ থেকে নান্দাইলে প্রার্থী হবে বলে খায়েশ করেছে। সেভাবে লবিংও চলছে। এলাকাবাসী জানায়, মতিন ভুইয়ার নানা কুকীর্তি নিয়ে একবার নান্দাইলে লিফলেট প্রচার করা হয়েছিল দলের পক্ষ থেকে। প্রচার আছে, তার বাবা বাঙালী হত্যার পুরস্কার হিসাবে ব্যাটাগান’ পেয়েছিল।

এতসবের পরও এই আলবদর-রাজাকার পরিবারটি এখন নান্দাইলে দণ্ডমুণ্ডের কর্তা। আওয়ামী লীগের কাণ্ডারি! নান্দাইলের একাধিক মুক্তিযােদ্ধা বলেছেন, আওয়ামী লীগে। মতিন ভূইয়ার আমলের পরই দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা নিষ্ক্রিয় হয়ে আছেন। জিয়া সরকারের আমলে একজন ক্যাডার হিসাবে আওয়ামী লীগে যােগ দেয় এই রাজাকার মতিন। মাত্র দুই দশকে সেই রাজাকার এখন নান্দাইল আওয়ামী লীগের নেতা। নান্দাইলের মুক্তিযােদ্ধা ও স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তি থেকে যুদ্ধাপরাধী এই রাজাকারদের বিচারের দাবি উঠেছে। নান্দাইল আওয়ামী লীগের নেতা এ্যাডভােকেট কবীর উদ্দিন ভুইয়া জনকণ্ঠকে জানান, মতিনদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাগুলাে এখনও পুনরুজ্জীবিত করা সম্ভব।

জনকণ্ঠ ॥ ০৫-০১-২০০১

সূত্র : সেই রাজাকার – জনকন্ঠে প্রকাশিত রিপোর্টের সংকলন

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!