You dont have javascript enabled! Please enable it!

এভাবেই খুব ব্যস্ততার মাঝে ১৪ আগস্ট ‘৭৫ তারিখটি আমি পার করলাম। গভীর রাত পর্যন্ত ভারতীয় সেনাদের ও পাইলটের লাশ নিয়ে ব্যস্ত থাকলাম। একদম শেষ রাতে আমি ঘুমাতে গেলাম। পরদিন (১৫ আগস্ট ১৯৭৫) সোয়া পাঁচটার কিছু আগে-পরে বা সকাল সাড়ে পাঁচটায় DMI লে কর্নেল সালাউদ্দিন আমার বাসায় আসলেন। তখনো আমি ঘুমে জড়ানো। আমার ব্যাটম্যান হাবিলদার দায়দার আলী আমার দরজায় নক করে আমাকে ডেকে তুললো। দরজা খুলে আমি তার সাথে DMI লে কর্নেল সালাউদ্দিনকে তার সাথে দেখলাম। লে কর্নেল সালাউদ্দিন ইউনিফর্ম পরিহিত, শেভ করেনি এবং সাথে একটি স্টেনগান। দেখে আমি জিজ্ঞেস করলাম কেন সে এভাবে ড্রেস পড়ে আছে। তিনি সেসব কথার জবাব না দিয়ে আমার কাছে জানতে চাইলেন যে আমি আর্মারড ও আর্টিলারি ইউনিটকে শহরে প্রবেশ করতে বলেছি কিনা। আমি এসম্পর্কে না জানায় বললাম যে, “না।” তখন সে আমাকে বলল, দুটো ইউনিট শহরে বেরিয়েছে এবং গণভবন, রেডিও টিভি স্টেশনের সামনে অবস্থান করছে। কিছু ট্যাংক ও আর্টিলারি বঙ্গবন্ধুর ৩২ নাম্বারের বাড়ির দিকে গিয়েছে। এটা শুনে আমার কী করার কথা বা কি একশন নেবার কথা? দ্রুততম উত্তর ছিলো, সম্ভাব্য ভিক্টিমকে এলার্ট কর এবং অতি সত্বর এটাকে ঠেকাতে সৈন্য পাঠাও। এটাকে কার্যকর করতে প্রথমেই আমি চিন্তা করলাম প্রেসিডেন্টকে আগে সতর্ক করি এবং যা হচ্ছে সেসম্পর্কে সম্পর্কে অবগত করি।  এবং ঢাকা ব্রিগেড কমান্ডারকে এটা ঠেকাতে ট্রুপ্স পাঠাতে বলি, কারণ সে ফোর্সে কমান্ডার। আমার প্রাথমিক একশন ছিল এই দুটি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে।

DMI থেকে তথ্যটি পেয়ে আমার বুঝতে বাকি রইলনা কী হচ্ছে। ভেবে আর শিরদাঁড়া দিয়ে ঠাণ্ডা স্রোত বয়ে গেল। আমি DMI কে জিজ্ঞেস করলাম, কর্নেল শাফায়াৎ (অর্থাৎ ঢাকা ব্রিগেড কমান্ডার) কি এই মুভের ব্যাপারে কিছু জানে? সে বললে সে নিশ্চিত না। সে আরও বলল খবর পেয়ে সে সোজা আমার বাসায় চলে এসেছে। আমি সাথে সাথে ১,২ ওঁ ৪ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট নিয়ে তাদের প্রতিহত করার নির্দেশনা সহ  DMI এর মাধ্যমে ঢাকা ব্রিগেড কমান্ডার কর্নেল শাফায়েত জামিলের কাছে নির্দেশনা পাঠালাম। এই তিনটি ব্যাটেলিয়ন এধরনের সমস্যা মোকাবিলার জন্য ঢাকাতে তার কমান্ডে রাখা ছিলো।

DMI এর মাধ্যমে শাফায়াৎ জামিলের প্রতি নির্দেশনা সহ কে তার কাছে পাঠিয়ে আমি বঙ্গবন্ধুকে সম্ভাব্য বিপদের ব্যাপারে জানাতে লাল টেলিফোনে তাঁর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলাম। কিন্তু হায়, আমি তাঁকে পাচ্ছিলাম না। তাঁর টেলিফোন ব্যস্ত। আমি সিভিল ও রেড টেলিফোন দুটোতেই চেষ্টা করতে থাকলাম। কিন্তু তাঁকে পাচ্ছিলাম না। যেহেতু প্রেসিডেন্টের লাল টেলিফোন ও বাসার অন্য ফোন কোনটাতেই আমি পাচ্ছিলাম না তাই সময় নষ্ট যাতে না হয় সেজন্য আমি আমার স্ত্রীকে বললাম প্রেসিডেন্টের লাল টেলিফোনে ডায়াল করে যেতে। এরপর আমি ফোন করলাম ঢাকা ব্রিগেড কমান্ডার কর্নেল শাফায়াৎ জামিলকে। তার টেলিফোনও ব্যস্ত। তাই আমি আমার হাউজ এক্সচেঞ্জকে বললাম এক্ষুনি আমাকে ঢাকা ব্রিগেড কমান্ডার শাফায়াৎ জামিলকে দিতে। আমার স্ত্রী প্রেসিডেন্টের লাল টেলিফোনে ডায়াল করে যাচ্ছে, একই সাথে আমার হাউজ এক্সচেঞ্জ কর্নেল শাফায়াৎ জামিলকে চেষ্টা করে যাচ্ছে – এই সময়ে আমি আমার সিভিল টেলিফোন দিয়ে অন্যান্য অফিসারদের সাথে যোগাযোগ করতে শুরু করলাম।

এভাবে আমি MS (P) কর্নেল জামিলকে পেলাম। সে আমাকে বলল যে প্রেসিডেন্ট তাকে ফোন করেছিলেন এবং বলেছেন তিনি কোন একটা বিপদের ধারণা করছেন এবং অতি দ্রুত তাঁর বাড়ীতে যেতে বলেছেন। DMI লে কর্নেল সালাউদ্দিন আমাকে যা আ বলেছে আমি সেটা তাকে জানালাম। এবং বললাম যে আমি হন্যে হয়ে প্রেসিডেন্টকে সতর্ক করার জন্য টেলিফোনে চেষ্টা করে যাচ্ছি কিন্তু পাচ্ছিনা। কারণ তাঁর টেলিফোন ব্যস্ত। এরপর আমি তাকে বললাম যে সে যেন প্রেসিডেন্টকে জানায় যে আমি অলরেডি DMI এর মাধ্যমে কর্নেল শাফায়াৎ জামিলের কাছে এই একশন থামানোর জন্য ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা পাঠিয়েছি। (তখন পর্যন্ত শাফায়াৎ জামিলের সাথে আমার কথা হয়নি।) এই সময়ে যেভাবেই হোক প্রেসিডেন্টকে তাঁর বাড়ী থেকে বেরিয়ে কোন নিরাপদ স্থানে চলে যাবার কথাও কর্নেল জামিলে বললাম। সে আমাকে বলল যে সে বঙ্গবন্ধুর বাড়ীতে গিয়ে সেটা করার চেষ্টা করবে।

কর্নেল জামিলের সাথে কথা শেষ করতেই আমার হাউজ অপারেটর ঢাকা ব্রিগেড কমান্ডার শাফায়াৎ জামিলকে লাইনে পেল এবং আমাকে দিল। কর্নেল শাফায়াৎ জামিলের কণ্ঠটা কিছুটা বিচিত্র মনে হচ্ছিলো, সম্ভবত দুশ্চিন্তা বা তন্দ্রাচ্ছন্নতা থেকে। টেলিফোনে তার প্রতিক্রিয়ায় এরকমটাই আমার মনে হচ্ছিলো। সময় নষ্ট না করে আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম যে শহরে আর্মারড ও আর্টিলারি ইউনিট প্রবেশের ব্যাপারে সে কিছু জানে কিনা। সে তার অজ্ঞতা প্রকাশ করল। তাই আমি DMI সালাউদ্দিনের থেকে যা জানতে পেরেছি সেটা তাকে জানালাম এবং তাকে (শাফায়াৎ জামিল) বললাম ১, ২ ও ৪ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট – এই তিন ইনফ্যান্ট্রি (যেটা তার কমান্ডে) দিয়ে এক্ষুনি সময় নষ্ট না করে তাদের প্রতিহত করতে। তার উত্তরে মনে হল সে আমার অর্ডার বুঝতে পেরেছে। পরবর্তীকালে কর্নেল শাফায়াৎ জামিল একটি ইন্টারভিউতে বলেছিলো যে আমি তাকে সেদিন সকালে কোন আদেশ বা নির্দেশনা দেই নাই। তবে সে অন্তত এটা স্বীকার করেছে যে সেদিন আমি তাকে ফোন করেছিলাম। যদি তাকে আমি কোন নির্দেশনা নাই দিয়ে থাকি তাহলে এত সকালে আমি তাকে ফোন করেছিলাম কেন? আমি কি তাকে কোন অর্ডার না করতে ফোন করেছিলাম? তাকে নির্দেশ দেবার পরেই আমি ফোন করলাম এয়ার চিফ এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে খন্দকারকে। এবং নেভি চিফ রিয়ার এডমিরাল এম এইচ খানকে। সেপর্যন্ত যা বুঝতে পারলাম যে তারা জানেনা আসলে কী হচ্ছে। এরপর আমি ডেপুটি চিফ জিয়ার সাথে যোগাযোগ করলাম। যখন আমি তাকে DMI এবং MS (P) কর্নেল জামিল আহমেদের থেকে পাওয়া তথ্য দিলাম সে বলল, “তাই নাকি?” জিয়ার এই কথা শুনে আমি বুঝতে পারলাম সেও আমার থেকেই প্রথমবারের মত বিষয়টা জানতে পারলো। আমি তাকে বললাম এখনই আমার বাসায় আসতে। এরপরের ব্যক্তি হচ্ছে GSC ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ। তাকেও মনে হল যে আমার থেকেই প্রথম বিষয়টা শুনলো। তাকেও আমি দ্রুত আমার বাসায় আসতে বললাম। ব্রিগেডিয়ার রউফ DFI এর ডিজি – যার কিছুদিন বাদে এই পদ থেকে অন্যত্র যাবার কথা – তাকে ফোন করলাম। রিং হচ্ছে কিন্তু কেউ ফোন ধরছেনা। মনে হল বাড়ীতে কেউ নেই।

যতক্ষণ আমি উপরোক্ত অফিসারদের সাথে ফোন কথা বলছিলাম ততোক্ষণ আমার স্ত্রী টেলিফোনে বঙ্গবন্ধুকে একটানা ডায়াল করে যাচ্ছিলো। এক পর্যায়ে আমি নিজে লাল টেলিফোনটা স্ত্রীর থেকে নিয়ে প্রেসিডেন্টের নাম্বারে চেষ্টা করলাম। সৌভাগ্যক্রমে এইবার আমি লাইন পেলাম। সময়টা সম্ভবত ৬ টার কয়েক মিনিট আগে। আমি ঘড়ি দেখার সময় পাইনি – তবে এটাই সম্ভাব্য আনুমানিক সময়। লাইন পাবার সাথে সাথে প্রেসিডেন্ট আমার কণ্ঠ শুনেই রাগান্বিত ও ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বললেন, “শফিউল্লাহ, তোমার ফোর্স আমার বাড়ী এটাক করেছে। কামালরে (বঙ্গবন্ধুর পুত্র) বোধ হয় মাইরা ফেলছে। তুমি জলদি ফোর্স পাঠাও।” আমি শুধু প্রেসিডেন্টকে বললাম, “স্যার, আমি কিছু করছি, আপনি কি ঘর থেকে কোনোভাবে বের হতে পারবেন?” প্রেসিডেন্ট আমার কথার পর কোন উত্তর দিলেন না এবং চুপ করে থাকলেন। কিন্তু আমি বলে চললাম – হ্যালো, হ্যালো, হ্যালো। পরে আমার মনে হল তার সাথে কেউ ছিলো এবং সেই জন্য তিনি রেসপন্স করেননি। আমার এটাও মনে হল যে তিনি হ্যান্ডসেটটা টেবিলের উপর রেখে চলে গেলেন এবং হ্যান্ডসেটটি টেলিফোন সেটের উপর রাখেননি। কারণ প্রায় ৩০ থেকে ৪০ সেকেন্ড পর আমি টেলিফোনে অটোমেটিক ফায়ারের শব্দ শুনতে পেলাম। এর প্রায় মিনিটখানেক পর টেলিফোন লাইনটা ডিসকানেক্ট হয়ে গেল।

DMI আমাকে জানানোর সাথেসাথে সময় নষ্ট না করে আমি প্রেসিডেন্টকে আসন্ন বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করতে তাঁকে জানানোর জন্য চেষ্টা করলাম। কিন্তু সময়মত তা পারলাম না। তাঁর সকল টেলিফোন ব্যাস্ত। সম্ভবত সেই সময়ে প্রেসিডেন্ট তাঁর কলিগদের সাথে যোগাযোগ করে সাহায্য প্রার্থনা করছিলেন। কিন্তু তিনি আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারলেন না। আবার এটাও হতে পারে যে, যখন তিনি আমাকে চেষ্টা করছিলেন তখন আমার ফোন ব্যস্ত। কিন্তু সত্যিই যদি তিনি আমার সাথে যোগাযোগ করতে চাইতেন সেটি তিনি তাঁর অপারেটরের মাধ্যমেই করতে পারতেন। আবার এও হতে পারে যে তাঁর বাড়ীতে আর্মি দেখে তিনি আমার উপর বিশ্বাস হারিয়েছিলেন। এবং সেজন্য হয়ত তিনি আমার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেননি। DMI আমাকে সকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে জানায়। তখন থেকে নন-স্টপ চেষ্টা করে ৬ টার কয়েক মিনিট আগে তাঁর লাইন পেয়েছিলাম। অর্থাৎ প্রেসিডেন্টের সাথে যোগাযোগে আমার ২০ থেকে ২৫ মিনিট লেগে গিয়েছিলো। এই পুরোটা সময় আমি তাঁকে পেতে চেষ্টা করেছি এবং তাঁকে সতর্ক করতে ও ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে বলতে চাচ্ছিলাম। শেষ পর্যন্ত কথা হল, কিন্তু হায়, তখন বড্ড দেরী হয়ে গিয়েছিলো! সম্ভবত আমাদের কথা শেষ হবার কিছুক্ষণ পরেই তাঁকে হত্যা করা হয়? ..

প্রেসিডেন্টের সাথে কথা হবার পর আমি নিশ্চিত হতে চাইলাম যে কর্নেল শাফায়াৎ জামিল বিদ্রোহীদের থামাতে ফোর্স মুভ করেছেন কিনা। তাই সেটা জানতে আমি তাকে ফোন করলাম। কিন্তু ফোনে পেলাম না। তার টেলিফোন বিজি। আমি ভাবলাম তিনি হয়ত তখন তার অধস্তন অফিসারদের নির্দেশনা দিতে ব্যস্ত। তাই তাকে পেতে আমি আমার হাউজ অপারেটরকে বললাম এক্ষুনি কর্নেল শাফায়াৎ জামিলকে দিতে। যদি সেটা সম্ভব না হয় তাহলে নিশ্চিত যে কারো না কারো সাথে সে ব্যস্ত। অপারেটর একটু পর জানালো কর্নেল শাফায়াতের ফোন হ্যাং-আপ করা। কারণ হতে পারে যে সে প্যানিক অবস্থায় থাকার কারণে ফোনের রিসিভার যথাস্থানে রাখেনি। অথবা বিদ্রোহীরা তাকে নিউট্রালাইজ করেছে যার ফলে সে কোন একশন বা রিএকশন দিচ্ছেনা। কিন্তু হায়, পরে দেখা গেল আমার দুটো ধারণাই ভুল। এটা ভাবার কারণ হচ্ছে তার পরবর্তী কাজের ধারাবাহিকতায় মনে হল সে সঠিক পথে নেই। ফোর্স মুভ না করে সে নিষ্ক্রিয় হয়ে আছে। অর্থাৎ সে আমার অর্ডার মানেনি এবং ফোর্স মুভ করেনি।

পরে আমি জানতে পেরেছি যে বঙ্গবন্ধু সৈয়দ নজরুল ইসলাম, জনাব মনসুর আলী, ব্রিগেডিয়ার মাশহুরুল হক [যার MS(P) হবার কথা], কর্নেল জামিল এবং সম্ভবত আরও কয়েক জনের সাথে কথা হয়েছে – কিন্তু আমি বঙ্গবন্ধুর থেকে একটি কল পেলাম না। যেভাবে হোক বাতাসে গুজব ভেসে বেড়ায় যে বঙ্গবন্ধু ১৫ আগস্ট সকালে আমাকে ফোন করেছিলেন এবং অভিযোগ করা হয় যে আমি নাকি তাকে সরি বলেছিলাম। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং আমার বিরুদ্ধে একটি বিদ্বেষপরায়ণ অপপ্রচার। সত্যটা হচ্ছে, বঙ্গবন্ধু আমাকে কোন ফোন করেননি। যে পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্ট দেখলেন আর্মি তাঁর বাড়ির সামনে, তখন হয়ত ভাবলেন অন্তত আমার কাছে সাহায্য চাওয়ার কোন মানে হয়না। তাঁর বাড়ীতে আর্মির লোক দেখে হয়ত আমার উপর বিশ্বাস সম্পূর্ণ হারিয়েছিলেন। যার ফলে আমার আর তাঁর কাছ থেকে ফোন পাওয়া হয়নি। অপরদিকে, আমি উন্মত্তের মত তাঁর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম যাতে তাঁকে আসন্ন বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করতে পারি। তাঁর সাথে কথা আমি বলেছিলাম  – তবে তখন অনেক দেরী হয়ে গেছে!

প্রেসিডেন্ট অন্যান্যদের সাথে কখন কথা বলেছেন সেটা আমি জানিনা। কিন্তু এমনও হতে পারে যা হতে যাচ্ছিলো সেটা আমার আগেই তিনি জেনে গিয়েছিলেন। কারণ তিনি অন্যদের কাছে সাহায্য চাচ্ছিলেন। দুর্ভাগ্যক্রমে সকাল ৬ টার আগ পর্যন্ত তিনি বা তিনি যাদের সাথে কথা বলেছিলেন তাদের কেউই আমার সাথে যোগাযোগ করে বিষয়টা জানায়নি।  সেদিন সকালে প্রধানমন্ত্রী জনাব মনসুর আলী ছাড়া আর কারো থেকে কোন টেলিফোন কল পেয়েছি বলে মনে পড়েনা। জনাব মনসুর আলী আমাকে ট্রুপ্স পাঠাতে বলেছিলেন। আমি তাঁকে বলেছিলাম যে আমি ইতোমধ্যে ঢাকা ব্রিগেড কমান্ডারকে ট্রুপ্স পাঠিয়ে তাদের বাধা দিতে বলেছি। এই আলাপটা হয়েছিলো প্রেসিডেন্টের সাথে আমার কথা শেষ হবার পরে।

এই সংকটময় সময়ে আমার সাথে কেউ যোগাযোগ করেনি কেন সেটা নিয়ে আমি কোন অভিযোগ করতে চাচ্ছিনা। হয়ত আমাকে জানানোর মত পর্যাপ্ত সময় কেউ পায়নি। তাছাড়া যে গ্রুপটা একশনে গিয়েছিলো তাদের সবাই আর্মির লোক। তাই হয়ত তারা ধরে নিয়েছিলো চীফের ইঙ্গিত ছাড়া এরা এতদূর আসার সাহস পাবার কথা না। তাই তারা হয়ত ধরে নিয়েছে আমার সাথে কথা বলে কোন লাভ নেই। যদি তাদের কেউ একজন আমাকে একটু জানাত যে বিদ্রোহীরা টার্গেটের দিকে আগাচ্ছে, তাহলে হয়ত আমি আরও একটু সময় পেতাম ব্যবস্থা নেবার। যখন DMI সালাউদ্দিনের কাছ থেকে আমি খবর পেয়েছি ততক্ষণে বিদ্রোহীরা আঘাত শুরু করে দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট আমাকে বিশ্বাস করতেন। কিন্তু সেদিন তিনিও আমার উপর থেকে বিশ্বাস হারালেন। কারণ যখন তাঁর বাড়ীতে আক্রমণ হল তিনি আমাকে খোঁজেননি।

যখন আমি তাঁর সাথে কথা বলতে পেরেছিলাম এবং বলেছিলাম যেভাবে হোক ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে, সেই মুহুর্তে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে এই ঘটনার সাথে আমার কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। যখন কথা হল তখন অনেক দেরী হয়ে গেছে। এবং সম্ভবত আমিই শেষ ব্যক্তি যার সাথে তাঁর কথা হয়। একদিন সবাই আমরা মারা যাবো – কেউ আগে কেউ পরে। কিন্তু আমার সন্তুষ্টি এটাই যে মৃত্যুর পূর্বে বঙ্গবন্ধু জেনে গিয়েছেন যে জেনারেল শফিউল্লাহ তাঁর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেনি। আমি অত্যন্ত ব্যাথিত যে আমি আমার প্রেসিডেন্টকে রক্ষা করতে পারিনি।

Reference: 15th August A National Tragedy Major Gen K M Safiullah BU PSC

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!