You dont have javascript enabled! Please enable it!

কুলিয়ারচরে হত্যা লুট নারী নির্যাতনের হােতা মাহাবুব এখন সমাজসেবক

কাজী, ইসফাক আহমেদ বাবু, ভৈরব থেকে। একাত্তরের কুলিয়ারচর বাজার লুটসহ অগ্নিসংযােগ ও বহু হত্যাযজ্ঞের হােতা কুখ্যাত রাজাকার কমান্ডার মাহাবুব এখন সমাজসেবক ও গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার। এই রাজাকার কমান্ডার মাহাবুবের বাড়ি কুলিয়ারচর উপজেলার বরখারচর গ্রামে। তার পিতা খলিলুর রহমান ছিল পাক বাহিনীর দোসর। একাত্তরে পাক বাহিনীর সাথে হাত মিলিয়ে কুখ্যাত রাজাকার কমান্ডার মাহাবুব। কুলিয়ারচরের গ্রামগুলােতে চালিয়েছিল অসংখ্য হত্যাযজ্ঞ। কুলিয়ারচর বাজার লুটসহ আগুন ধরিয়ে দেয়ার হােতা এই মাহাবুবের হাত থেকে সেদিন কুলিয়ারচরবাসী রেহাই পায়নি। তার অত্যাচারের কথা শুনলে আজও মানুষ কেঁপে ওঠে। একাত্তরে এ কুখ্যাত রাজাকার নিজেকে থানার ওসি দাবি করে নিরীহ মানুষের ওপর চালিয়েছে নির্যাতন। বরখারচর এলাকার আব্দুস ছােবহান মিয়াকে তার ইঙ্গিতে পাক বাহিনী ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে। কুলিয়ারচর বেপারী পাড়ার ফালানী নামের এক যুবতীকে পাক বাহিনীর হাতে তুলে দেয় এই রাজাকার মাহাবুব। বীরাঙ্গনা ফালানী আজ পথে পথে ভিক্ষা করে।

দেশ স্বাধীন হলে কুলিয়ারচর থানা মুক্তিযােদ্ধারা কুখ্যাত রাজাকার মাহাবুবের বিচারের জন্য অপারেশন কমিটি গঠন করে। কমিটির লােকজন মাহাবুবকে কুলিয়ারচর ডাকবাংলােয় বন্দী করে রাখে। ‘কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মাহাবুবকে হত্যা করার। ঘােষণা দেয়া হয়। কিন্তু মাহাবুবের মা সেদিন ছেলের প্রাণ ভিক্ষা চাইলে তকালীন থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি সৈয়দ মুছা মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক গনি মিয়াসহ মুক্তিযােদ্ধারা সিদ্ধান্ত নেন কুখ্যাত রাজাকার মাহাবুবকে হাত-পা বেঁধে কুলিয়ারচর বাজার জনতা ব্যাংকের বারান্দায় ঝুলিয়ে রাখার। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ব্যাংকের বারান্দায় হাত-পা বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা হতাে আর কুলিয়ারচরবাসী ঘৃণাভরে সেই রাজাকার মাহাবুবের মুখে থু থু ফেলত। সেদিনের সেই রাজাকার কমান্ডার মাহাবুব কিছুদিন নিজেকে আত্মগােপনে রেখে কয়েক বছর পর জনসমক্ষে আসে। তৎকালীন মুসলিম লীগের এফএম নূরুল্লাহর এনজিও প্রতিষ্ঠানে (সিপরা) চাকরি নেয়। কুলিয়াচরের শিল্পপতি মুছা মিয়ার কোল্ড স্টোরেজে প্রশাসনিক কর্তকর্তা হিসাবে সে বর্তমানে কর্মরত আছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রমতে, একাত্তরের কুখ্যাত রাজাকার মাহাবুবের নাম শুনলে মানুষ ভয়ে পালিয়ে থাকত। তার টর্চার সেলের নাম শুনলে গা শিউরে উঠত। বর্তমানে সেই কুখ্যাত রাজাকার কমান্ডার মাহাবুব এখন সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তি ও সমাজসেবক হিসাবে প্রতিষ্ঠিত।

মাহাবুবের বক্তব্য

তথ্য অনুসন্ধানে সম্প্রতি রাজাকার মাহাবুবের সঙ্গে কুলিয়ারচরের খরগমারায় তার নিজ বাড়িতে এই প্রতিনিধির কথা হয়। একাত্তরে মানুষ খুন, লুট, নারী নির্যাতনসহ বিভিন্ন অপকর্মের অভিযােগ সে অস্বীকার করে। তবে পাকিদের সাথে ওঠাবসা, ক্যাম্পে যাতায়াতের কথা স্বীকার করে। গ্রাম রক্ষার জন্য পাকিদের সাথে ওঠাবসা করত বলে সে এই প্রতিনিধিকে জানায়। একাত্তরে কুলিয়ারচর থানার ওসি দাবি প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে সে জানায়, ‘৭০ সালে সহকারী দারােগা হিসাবে জামালপুরে পুলিশ বাহিনীতে যােগদান করে। দেশে যুদ্ধ লেগে গেলে পালিয়ে এসে তৎকালীন থানা আওয়ামী লীগ সম্পাদক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক গনি মিয়ার সাথে কাজ করেছে। দেশ স্বাধীনের পর তার বাড়িঘরে আগুন দেয়াসহ তার হাত-পা বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে সে জানায়, ব্যক্তিগত আক্রোশে এই ঘটনা ঘটানাে হয়। একাত্তরে সে মানুষ হত্যা করেনি বলে দাবি করে। কুলিয়ারচরের । শম্ভু, মাখন, ধীরেন ও তার বােনকে পাক বাহিনী ধরে নিয়ে গেলে সে তাদের রক্ষা করে বলে দাবি করে। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর সে বিএনপির নেতা ছিল। তিনবার ইউপি মেম্বার নির্বাচিত হয়েছিল বলে এই প্রতিনিধিকে জানায়। সে বর্তমানে কুলিয়ারচর পৌর আওয়ামী লীগের ৫নং ওয়ার্ডের সভাপতি, কুলিয়ারচর পাইলট স্কুলের আজীবন সদস্য ও ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং কুলিয়ারচর কোল্ড স্টোরেজের প্রশাসনিক কর্মকর্তা।

জনকণ্ঠ। ১৬-০৩-২০০১

সূত্র : সেই রাজাকার – জনকন্ঠে প্রকাশিত রিপোর্টের সংকলন

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!