You dont have javascript enabled! Please enable it!

নারায়ণগঞ্জ ৩০ বছরেও রফিক বাহিনীর সন্ত্রাস কমেনি। ধামগড়ের মানুষ আতঙ্কিত

জনকণ্ঠ রিপাের্ট ॥ ৩০ বছর আগে স্বাধীন হয়েছে দেশ। কিন্তু এখনও আধিপত্য কমেনি বন্দর থানার ধামগড় এলাকার কুখ্যাত রাজাকার রফিক চেয়ারম্যানের। তার বাহিনীর ভয়ে এখনও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে মানুষ। মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে অসংখ্য নৃশংস হত্যাকাণ্ডের হােতা এই রফিক রাজাকারের নেতৃত্বে তার সন্ত্রাসী ছেলেরা ঘটিয়ে যাচ্ছে একের পর এক হত্যাকাণ্ড। রাজাকারের ছেলে বলার অপরাধে কয়েক বছর আগে বন্দর থানার কুড়িপাড়া বাজারে কুপিয়ে হত্যা করা হয় মুক্তিযােদ্ধা আলাউদ্দিনকে । এনও ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, অপহরণ- এমন কোন অপকর্ম নেই যা করছে না তার সন্ত্রাসী। ছেলেরা। সন্ত্রাসী ছেলেদের নেতৃত্বে রয়েছে এই ঘৃণিত রাজাকার। রাজাকার রফিক বাহিনীর আতঙ্কে এখনও দিন কাটায় ধামগড় ইউনিয়নের মানুষ। তার ছেলেরা যা খুশি তা-ই করে। ভয়ে টু শব্দ করে না মানুষ। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বন্দর থানার ধামগড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিল এমএ রফিক। সে হাত মিলায় পাকহানাদার বাহিনীর সাথে। স্থানীয় শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান হয়। মেতে ওঠে হত্যার উৎসবে ।

এলাকাবাসী জানিয়েছে, ১৪ এপ্রিল ‘৭১ একদিনেই তার নেতৃত্বে হত্যা করা হয় এলাকার ৪ নিরীহ লােককে। তার হাতে ঐদিন নৃশংসভাবে খুন হয় ধামগড় গ্রামের বাসিন্দা গিয়াসউদ্দিন, আমিন উদ্দিন, মতি মিয়া ও আঃ হামিদ। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় এই ঘৃণিত রাজাকারের বাহিনী আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয় ১৩টি গ্রাম। ১৪ ডিসেম্বর ‘৭১ রাজাকার রফিকের বাহিনী গুলি করে হত্যা করে ধামগড় গ্রামের নূর ইসলাম, নয়ামাটি গ্রামের আবদুল হামিদ, ইদ্রিস আলী, লালখারবাগ গ্রামের ইদ্রিস আলী, কুটিরবন্দ গ্রামের আবুল হাশেম, মােছেরছড়া গ্রামের জলিল মিয়া ও হরিপুরের বীর মুক্তিযােদ্ধা আবদুল আজিজকে। পিস কমিটির চেয়ারম্যান রফিকের নেতৃত্বে ছালামত, খালেক, মিন্নত আলী, আবদুস সালাম, গােলাম মাওলা, আলী হােসেন প্রমুখের সমন্বয়ে গঠিত রাজাকার বাহিনী তাণ্ডব চালায় ধামগড় ইউনিয়নে। এখনও অনেকে এই ঘৃণিত রাজাকার বাহিনীর নৃশংসতার স্মৃতি নিয়ে বেঁচে আছে। স্বাধীনতার পর ভােল পাল্টায় রাজাকার রফিক। কিছুদিন আত্মগােপনের পর আবার ফিরে আসে এলাকায়, আবির্ভূত হয় স্বরূপে। গড়ে তােলে বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী। ছলে বলে কৌশলে নির্বাচিত হয় ধামগড় ইউপি চেয়ারম্যান। আবার অপ্রতিরােধ্য হয়ে ওঠে এই কুখ্যাত রাজাকার।

কয়েক বছর আগে রাজাকার রফিকের সন্ত্রাসীরা কুঁড়িপাড়া বাজারে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করে মুক্তিযােদ্ধা আলাউদ্দিনকে। আলাউদ্দিনের অপরাধ, তিনি রফিকের ছেলেকে বলেছিলেন- ‘রাজাকারের ছেলে’। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে বন্দরে। মুক্তিযােদ্ধা সংসদ বন্দর কমান্ড মুক্তিযােদ্ধা আলাউদ্দিনের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন, মিছিল-মিটিং পর্যন্ত করে। আইনের ফাক গলে বেরিয়ে আসে রাজাকার রফিক ও তার সন্ত্রাসীরা। রাজাকার রফিক বিয়ে করেছে ৪টি। ৪ পক্ষে তার ছেলে রয়েছে ৮ জন। প্রায় সবাই চিহ্নিত সন্ত্রাসী। রাজাকার রফিকের দ্বিতীয় স্ত্রীর বড় ছেলে আনােয়ার হােসেনের বিরুদ্ধে বন্দর থানায় হত্যা, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, অপহরণ, অবৈধ অস্ত্র রাখা প্রভৃতি অপরাধে ৮টি মামলা রয়েছে। গত ৮ ফেব্রুয়ারি পুলিশ গ্রেফতার করে দুর্ধর্ষ এই সন্ত্রাসীকে। বন্দর থানা-পুলিশ জানিয়েছে, এর আগেও তাকে অনেকবার গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রতিবারই জামিনে বেরিয়ে এসে এলাকায় কায়েম করে ত্রাসের রাজত্ব। দ্বিতীয় স্ত্রীর তৃতীয় ছেলে মুর্শেদ ওরফে মুন্সীও দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা রয়েছে বন্দর থানায়। চতুর্থ ছেলে মােয়াজ্জেম ওরফে কালুর বিরুদ্ধে রয়েছে ২ হত্যাসহ ৯টি মামলা। এলাকাবাসী জানিয়েছে, রাজাকার রফিকের অন্যান্য ছেলেও সন্ত্রাসী। তাদের ভয়ে আতঙ্কে দিন কাটায় এলাকার মানুষ। মানুষের জমিজমা দখল করে এখন অগাধ সম্পত্তির মালিক রাজাকার রফিক। স্থানীয় মিলকারখানায় একচ্ছত্র আধিপত্য। এসব মিলকারখানায় ঠিকাদারি, ব্যবসাবাণিজ্য সবকিছুই পরিচালিত হয় তার ইচ্ছায় । দুঃখজনক হলেও সত্য, কিছু নীতিভ্রষ্ট মুক্তিযােদ্ধা ব্যবসায়িক সুবিধা নেয়ার জন্য পরিণত হয়েছে এই ঘৃণিত রাজাকারের চাটুকারে। এই রিপাের্টে যা তুলে ধরা হয়েছে, তা কুখ্যাত রাজাকার রফিকের অপকীর্তির সামান্য। অংশমাত্র। দেশ ৩০ বছর আগে স্বাধীন হয়েছে কিন্তু এখনও এই কুখ্যাত রাজাকারের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে ভয় পায় মানুষ।

জনকণ্ঠ। ১৯-০২-২০০১

সূত্র : সেই রাজাকার – জনকন্ঠে প্রকাশিত রিপোর্টের সংকলন

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!