টাঙ্গাইলের পাকি দোস্ত মীর সােহরাব আলী এখনও সম্মানিত ব্যক্তি
ফিরােজ মান্না, টাঙ্গাইল থেকে পাকি দালাল, রাজাকার গুরু, পিস কমিটির নেতা সা’দত কলেজের সাবেক বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান মীর সােহরাব আলী স্বাধীন বাংলাদেশে থেকে এখনও পাকিস্তান কায়েমের স্বপ্ন দেখে। ‘৭১ সালে দালালী আর রাজাকারদের দিয়ে বহু হত্যা, ধর্ষণ ও লুটপাটের নেপথ্য নায়ক এই মীর সােহরাব দীর্ঘকাল সরকারী চাকরি করেছে। বর্তমানে দালাল সােহরাব অবসরে রয়েছে। অবসরে থেকেও ক্ষমতার বলে এখনও করটিয়া সা’দত কলেজের একটি শিক্ষক কোয়ার্টার বেদখল করে রেখেছে। বহুবার কলেজ কর্তৃপক্ষ নােটিস করেও তাকে ঐ কোয়ার্টার থেকে সরাতে পারেনি। এই দালাল ৬০-এর দশকের দিকে সা’দত কলেজে বাংলার শিক্ষক হিসাবে চাকরি পায়। তখন থেকেই দালাল সােহরাব আওয়ামী লীগবিরােধী ভূমিকা পালন করে আসছে। ‘৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলনেরও বিরােধিতা করেছে। এর পর ‘৭০-এর নির্বাচনে পাকিদের পক্ষে অবস্থান নেয়। ‘৭১-এ স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরু হলে পাকিদের আর এক দালাল করটিয়ার জমিদারপুত্র মেহেদী খান পন্নী ওরফে খসরু খান পন্নীর সঙ্গে একত্র হয়ে যায়। খসরু খান পন্নী মীর সােহরাবকে রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস বাহিনীতে লােক যােগাড়ের কথা বলে। কথামতাে মীর সেরহাব করটিয়া এলাকা থেকে বিপুলসংখ্যক ছেলেকে রাজাকারে ভর্তি করে। এমনকি সা’দত কলেজের বেশ ক’জন পিয়নকেও রাজাকারে ভর্তি করে দেয়। করটিয়ার বিভিন্ন এলাকায় এসব রাজাকার দিয়ে। হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযােগ থেকে শুরু করে বহু অপকর্মের নেপথ্য নায়ক। সােহরাব রাতারাতি খসরু পন্নীর প্রিয়ভাজন হয়ে ওঠে। খসরু পন্নীর বাড়িতে পাকি। আর্মিদের রংমহল ছিল।
প্রতিরাতে এখানে মদ এবং মেয়েমানুষ নিয়ে ফুর্তি করত পাকি। আর্মিরা। এই আসরগুলােতে সােহরাব নানা কাজে ব্যস্ত থাকত। নারী সরবরাহের প্রয়ােজন হলে খসরু এবং সােহরাব দু’জনেই রাজাকারদের দিয়ে হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে নারী ধরে আনত। আর্মিদের ফুর্তির সাথে এরাও যােগ হয়ে ফুর্তি করত। এ সময় আর্মিদের সঙ্গে তাদের পাকিস্তান রক্ষার নানা কথা হতাে। মুক্তিযােদ্ধাদের খতম। করার জন্য নানা পরিকল্পনা-ষড়যন্ত্র করত। মীর সােহরাব শিক্ষার দিক থেকে বড় থাকায় তার পরিকল্পনা পাকি আর্মিরা বেশি গ্রহণ করত। মীর সােহরাবের নেতৃত্বে করটিয়া কলেজের পশ্চিম পাশের একটি গ্রাম থেকে অধিকাংশ মানুষ রাজাকারে যােগ দিয়েছিল। স্বাধীনতার পর ঐ গ্রামের নাম হয়েছিল রাজাকারপাড়া। এখনও ঐ গ্রামের পরিচয় রাজাকারপাড়া হিসাবেই দেয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধের চরম শত্রু, ঘাতক, দালাল মীর সােহরাব আলী ‘৭১-এর পর রাজাকার আইনে জেলে গিয়েছিল কিন্তু সাধারণ ক্ষমায় দালাল সােহরাব বেরিয়ে আসে। জেল থেকে বের হয়েই আবার সে কলেজে চাকরিতে যোেগ দেয়। এর পর থেকে দীর্ঘকাল। সা’দত কলেজে বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান হিসাবে চাকরি করে সম্প্রতি সে অবসর নিয়েছে। মীর সােহরাব ‘৭৫-এর পর থেকে সমাজের নামীদামী ব্যক্তি হিসাবে এখন। পর্যন্ত সম্মান পেয়ে আসছে। কিন্তু এই ঘৃণ্য রাজাকার শুরু পাকি দালাল যে সম্মানের পাত্র ছিল না এ বিষয়টি তাদের জানা ছিল না। সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তি হিসাবে মীর সােহরাবকে এখনও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অতিথি করে নেয়া হয়। মীর সােহরাবের বক্তব্য পাওয়া যায়নি অধ্যাপক মীর সােহরাবের বক্তব্যের জন্য কয়েক দফায় তার বাসায় গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তার বাসার কাজের লােক পাঠিয়ে দিয়ে জানায় যে, সে বাসায় নেই। জনকণ্ঠের পরিচয় জেনেই সে জনকণ্ঠ সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলতে চায়নি বলে জানা গেছে। সম্প্রতি তার ছেলের সঙ্গে কথা হলে সে জানায়, সে আমার বােনের বাসায় (টাঙ্গাইলের সাবালিয়া) গেছে। সে বেশিরভাগ সময় টাঙ্গাইলেই থাকে। বােন জামাই আর্মির মেজর। এদিকে মীর সােহরাবকে টাঙ্গাইলের সাবালিয়ায় খোঁজ করেও পাওয়া যায়নি।
জনকণ্ঠ ৷ ১৪-০৪-২০০০
সূত্র : সেই রাজাকার – জনকন্ঠে প্রকাশিত রিপোর্টের সংকলন