You dont have javascript enabled! Please enable it!

পাকি দালাল ওয়াছেক এখন টাঙ্গাইল জেলা মানবাধিকার সংস্থার সভাপতি

জনকণ্ঠ রিপাের্ট ॥ রাজাকার শিরােমণি পিস কমিটির সদস্য এ্যাডভােকেট আব্দুল্লাহহেল-ওয়াছেক এখন টাঙ্গাইল জেলা মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার সভাপতি এবং প্রবীণ হিতৈষী সমিতির নেতা। বর্তমানে মুসলিম লীগের টাঙ্গাইল জেলার সভাপতি। এই দালালের কুকর্মের ইতিহাস অনেক বড়। আব্দুল্লাহ-হেল ওয়াছেকের বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার ভুয়াপুর থানায়। টাঙ্গাইল শহরের আকুরটাকুর পাড়ার সে স্থায়ী বাসিন্দা হিসাবে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছে। পাকি দালাল ওয়াছেক ছিল জেলা মুসলিম লীগের সহ-সভাপতি। ‘৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পাকি দালাল ওয়াছেক পিস কমিটি গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। পিস কমিটির অন্যতম নেতাও হয় ওয়াছেক। সেই সুবাদে পাকি আর্মিদের সংস্পর্শে আসে সে। প্রতিনিয়ত মুক্তিযােদ্ধাদের খতম করার পরামর্শ দেয়। আর্মিদের নারী সরবরাহ, হিন্দুদের মুসলমান বানানাের জন্য ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। নানা অপকর্মের হােতা এই ওয়াছেক সেই সময় নিজেকে কায়েদে আজম হিসাবে পরিচয় দিত। মাথায় ‘জিন্নাহ টুপি পরে লােকজনকে ডেকে বলত দেখ তাে আমাকে কায়েদে আজমের মতাে দেখায় কি-না।

লােকজন তাকে কায়েদে আজম ডাকলে খুশি হতাে। বহু লােক যুদ্ধের সময় তার হাত থেকে বাঁচার জন্য কায়েদে আজম’ বলে খুশি করে পার পেয়েছে। এই দালাল আব্দুলাহ-হেল-ওয়াছেক রাজাকার, আলবদর, আল-শামসের প্রধান এবং অন্যতম উপদেষ্টা ছিল। রাজাকার, আলবদর, আল-শামসের সদস্যরা যেখানেই যা কিছু করত তা ওয়াছেকের নির্দেশেই হতাে। ওয়াছেক ছিল পাকি বাহিনী। আলবদর, আলশামস আর রাজাকারদের অলিখিত পরিচালক। এই ওয়াছেকের ইশারায় টাঙ্গাইলে হাজার হাজার নিরীহ মুক্তিকামী বাঙালী নারী-পুরুষ খুন হয়েছে। ধর্ষিতও হয়েছে শত শত নারী। ওয়াছেক রাতের অন্ধকারে রাজাকার, আল-বদর, আল শামসদের নির্দেশ দিত হত্যা এবং ধর্ষণের। টাঙ্গাইল শহরের পুরনাে আদালত রােডের আব্দুল্লাহ হােমিও হলে ছিল পাকি দালালদের। আড়া। এই হােমিও হলে বসেই দালালরা ষড়যন্ত্র করত কার কার সর্বনাশ ঘটাবে। দিনের আড্ডা থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে রাতেই তা কার্যকর করার নির্দেশ দিত ওয়াছেক । সেই হােমিও হলটি এখনও আছে। সেই পাকি দালাল, শান্তি কমিটির লােকেরা এখনও সেখানে আড্ডা দেয়।

টাঙ্গাইলে শান্তি কমিটির সভাপতি হেকিম হাবিবুর রহমান এবং সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুল খালেকের ক্ষমতার পরই ছিল আব্দুলাহ হেল ওয়াছেকের ক্ষমতা। ওয়াছেকের যে কোন সিদ্ধান্ত পিস কমিটিতে গ্রহণ করা হতাে। এমনকি পাকি আর্মিরাও ওয়াছেকের কথার বাইরে খুব একটা যেত না। স্বাধীনতার ঘৃণ্য এই ঘাতক আব্দুলাহ-হেল-ওয়াছেক তার অতীত কৃতকর্মের জন্য এখন। পর্যন্ত গর্বিত। এই কুখ্যাত পাকি দালাল আব্দুল্লাহ-হেল-ওয়াছেক দেশ স্বাধীন হওয়ার পর রাজাকার। আইনে ৭ মাস জেল খাটে। পরে বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা ঘােষণার পর জেল থেকে ছাড়া পায়। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার পর পাকি দালাল আব্দুল্লাহহেল-ওয়াছেক বীরদর্পে লােকচক্ষুর সামনে আসে। ‘৭৫-এ সে মুসলিম লীগের টাঙ্গাইল জেলার সভাপতি হয়। এর পর ‘৭৯ সালে মুসলিম লীগ থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনও করেছে। তার পর থেকে ওয়াছেক সমাজের গণমান্য ব্যক্তিতে পরিণত হতে থাকে। জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সদস্য থেকে শুরু করে সমাজের উচ্চ আসনে আব্দুল্লাহ হেল-ওয়াছেক স্থান করে নেয়। ডিসি-এসপিরাও আব্দুল্লাহ-হেল-ওয়াছেক ছাড়া কিছু করার মতাে সাহস পেত না। একপর্যায়ে ওয়াছেক টাঙ্গাইল জেলা মানবাধিকার। বাস্তবায়ন সংস্থার চেয়ারম্যানও হয়। প্রবীণ হিতৈষী সমিতির প্রভাবশালী নেতাও হয়ে যায় । ‘৯৬ সালে আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় আসার পর আব্দুল্লাহ হেল-ওয়াছেক জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সদস্য পদ হারালেও ডিসিএসপির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ওয়াছেককে আমন্ত্রিত অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়। কুখ্যাত পাকি দালাল ওয়াছেকের অবস্থান বরাবরই ক্ষমতার কাছাকাছিই রয়ে গেছে। হাজার হাজার কুকর্মের হােতা। ওয়াছেক আওয়ামী নেতাদের পাশে বসে এখনও তার ক্ষমতার দাপট রেখে যাচ্ছে। ওয়াছেকের বক্তব্য। আব্দুল্লাহ-হেল-ওয়াছেকের কাছে প্রশ্ন করা হয়, মুক্তিযুদ্ধের সময় তার ভূমিকা কি ছিল?

জবাবে সে জানায় ‘গণ্ডগােলের’ (মুক্তিযুদ্ধ) বছর আমার ভূমিকা ছিল নিরপেক্ষ । তবে আমি সুযােগ পেলেই আওয়ামী লীগের উপকার করেছি। ওয়াছেক জানায়, ‘৭১-এ মুসলিম লীগের সঙ্গে জড়িত ছিলাম। ‘৭৫ পরবর্তী ডিসি রেজাউল করিমের সময় আমি জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সদস্য ছিলাম। একই সময় থেকে ৭ বছর এপিপিও ছিলাম। ১৯৮৮ সাল থেকে টাঙ্গাইল জেলা মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি। সরকারী জায়গা দখলের ব্যাপারে জানায়, এটা ঠিক নয়।

জনকণ্ঠ ॥ ১৩-০৩-২০০১

সূত্র : সেই রাজাকার – জনকন্ঠে প্রকাশিত রিপোর্টের সংকলন

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!