You dont have javascript enabled! Please enable it!

টাঙ্গাইলের শহীদুল্লাহ এখন আওয়ামী লীগ নেতা

জনকণ্ঠ রিপাের্ট ॥ রাজাকার কমান্ডার আ. ন. ম. শহীদুল্লাহ বর্তমানে টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের নেতা। জেলা সদর বালিকা বিদ্যালয়ের মৌলভী শিক্ষক। আবার বেতকা ও জেলা সদর ওয়ার্ডে নিকাহ্ রেজিস্ট্রার (কাজী) হিসাবেও নিয়ােগপ্রাপ্ত হয়েছে। অভিযােগ রয়েছে, ‘৭১-এ এই রাজাকার মুক্তিপাগল মানুষের রক্তে রাঙিয়েছে নিজের হাত। সেই শহীদুল্লাহ স্বাধীনতার ৩০ বছর পর মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি আওয়ামী লীগের নেতা। টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী ওলামা লীগের সভাপতি। – এই রাজাকার পাকি সেনাদের খুশি করার জন্য দেশের নিরীহ নিরপরাধ হিন্দু, মুসলমান। বৃহু মানুষকে হত্যা করেছে। লুট করেছে বহু হিন্দুবাড়ি। আদালতপাড়ার মনিন্দ্র সাহার বাড়ি দখল করে বসবাস করেছে স্বাধীনতাযুদ্ধকালীন ৯ মাস। রাজাকার শহীদুল্লাহর পিতা মৌলভী ফয়জুল্লাহও ছিল রাজাকার-পাকিদের দোসর। শহীদুল্লাহ তার পিতার নামে সেই সময় আদালতপাড়ার রােডের নামকরণ করেছিল। ‘ফয়জুল্লাহ রােড’ নামে বিভিন্ন স্থানে সাইনবাের্ড লাগিয়েছিল। ‘৭১ সালের ১১ ডিসেম্বর টাঙ্গাইল মুক্ত হলে শহীদুল্লাহ মনিন্দ্র সাহার বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়। মুক্তিবাহিনীর লােকজন শহীদুল্লাহর দখল করা বাড়ি থেকে বহু লুটের মাল উদ্ধার করে। লুটের মালের মধ্যে ছিল ১২টি ডীপ টিউবওয়েলের ইঞ্জিন। এই ইঞ্জিনগুলাে পরবর্তীতে কৃষি বিভাগকে দিয়ে দেয়া হয়েছে। ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয়ের পর দীর্ঘদিন শহীদুল্লাহ গা ঢাকা দিয়ে ছিল। ‘৭৫এর পটপরিবর্তনের পর শহীদুল্লাহ আবার লােকচক্ষুর সামনে আসে। রাতারাতি শহীদুল্লাহ সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিতে পরিণত হয়ে যায়। এর পর দীর্ঘ ২১ বছর। শহীদুল্লাহ গণ্যমান্যই ছিল। কিন্তু ‘৯৬-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে শহীদুল্লাহ চুপসে যেতে থাকে। এর আগে শহীদুল্লাহ ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে জেলা সদর বালিকা বিদ্যালয়ের মৌলভী শিক্ষকের চাকরি নেয়। আওয়ামী লীগ শাসনে চাকরি হারানাের ভয় চলে আসে।

সবকিছু শহীদুল্লাহ চুপচাপ বুঝে নিয়ে একদিন হঠাৎ টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতার সঙ্গে গভীরভাবে আলাপ করে। ঐ আওয়ামী লীগ। নেতা আবার অন্য এক প্রভাবশালী নেতার সঙ্গে যুক্ত করে দেয় রাজাকারটিকে। এভাবে শহীদুল্লাহ জেলা আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে থাকে। এর মাঝে কয়েক আওয়ামী লীগ নেতাকে দিনের পর দিন নানাভাবে খুশি করে শহীদুল্লাহ নিজেই আওয়ামী লীগ নেতা হয়ে যায়। গত বছর শহীদুল্লাহকে সভাপতি করে টাঙ্গাইল জেলা ওলামা লীগ গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি আবার কেন্দ্রীয়ভাবে অনুমােদনও লাভ করে। শহীদুল্লাহ এখন আওয়ামী লীগ নেতা। ‘৭১-এর মতাে এখন তার নতুন করে প্রভাব প্রতিপত্তি তৈরি। হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয় থেকে সে আওয়ামী লীগ নেতা’ এই মর্মে নিকাহ রেজিস্ট্রার’ পদ লাভ করেছে। জেলা আওয়ামী লীগের কয়েক জন নেতা জানান, শহীদুল্লাহ যখন। আওয়ামী ওলামা লীগের সভাপতি হয় তখন আমরা রাজাকার হিসাবে তার বিরােধিতা করেছিলাম। কিন্তু প্রভাবশালী কয়েক নেতা শহীদুল্লাহকেই সভাপতি করতে বেশি আগ্রহী ছিল। যার ফলে এমন চিহ্নিত রাজাকার কমান্ডারও আজ জেলা আওয়ামী লীগের। নেতা হয়ে গেছে। এদিকে সম্প্রতি আ. ন. ম. শহীদুল্লাহর সঙ্গে টেলিফোনে কথা হলে সে জনকণ্ঠকে জানায়, আমি আওয়ামী ওলামা লীগের সভাপতি, আমি রাজাকার নই। ‘৭১ সালে তার পিতার নামে একটি সড়কের নামকরণ করা হয়েছিল কি না এ প্রশ্ন করা হলে সে চুপ থাকে। অন্যদিকে কাজী শামসুল হক জানান, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরােত্তম রচিত ‘স্বাধীনতা ‘৭১’ বইয়ে শহীদুল্লাহ এবং তার পিতা ফয়জুল্লাহর নাম রাজাকারের তালিকায় রয়েছে। অথচ রাজাকার শহীদুল্লাহ মুজিবকোট পরে আওয়ামী লীগ নেতা হয়েছে। আওয়ামী লীগে যাওয়ার আগে শহীদুল্লাহ জামায়াতের সঙ্গে যুক্ত ছিল। এখানে সে জেলা জামায়াত নেতা হিসাবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছে।

জনকণ্ঠ ॥ ১২-০২-২০০১

সূত্র : সেই রাজাকার – জনকন্ঠে প্রকাশিত রিপোর্টের সংকলন

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!