You dont have javascript enabled! Please enable it!

টাঙ্গাইল শত শত নিরীহ মানুষ হত্যাকারী খালেক প্রফেসর এখন জামায়াত নেতা

ফিরােজ মান্না, টাঙ্গাইল থেকে ॥ একাত্তরের সেই রাজাকার আব্দুল খালেক ওরফে। খালেক প্রফেসর এখন ঢাকায় জামায়াতের নেতা। টাঙ্গাইলে রাজাকারদের চীফ খালেক। প্রফেসার শত শত মুক্তিপাগল, নিরীহ, নিরপরাধ মানুষের খুনে হাত রাঙিয়ে ছিল । বহু মা-বােনকে ধরে নিয়ে তুলে দিত পাকি সেনাদের হাতে। সেই রাজাকার চীফ খালেকের বিরুদ্ধে গত বছরেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। স্বাধীনতার পর খালেক কিছু। সময়ের জন্য গা-ঢাকা দিয়েছিল। এর পর বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা পেয়ে আবার খালেক লােকসমক্ষে ফিরে আসে। ‘৭৫-এর পট পরিবর্তনের পর পরই খালেক সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তির তালিকাভুক্ত হয়। খালেকের তখন ওঠা-বসা ডিসিএসপি থেকে শুরু করে সমাজের সব মহলেই। স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন খুনী খালেক আবার জেগে ওঠে দোর্দন্ড প্রতাপে। কথায় কথায় মুক্তিযুদ্ধের সময় কি করেছে সেই গল্প বলে লােকজনদের ভয়ভীতিও দেখায়। সেই খালেক এখনও রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। এই খালেকের এক রাতের ঘটনা বর্ণনা করেছেন শহীদ শান্তি রায় সাহার সন্তান বাদল সাহা। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের ২০ জুলাই রাত সােয়া ১১টার দিকে খালেকের। নেতৃত্বে একদল রাজাকার প্রথমে খালেকের সহকর্মী প্রফেসর নিত্যানন্দ পালের বাড়ি যায়। এখান থেকে প্রফেসর নিত্যানন্দ পালকে ধরে নিয়ে আমাদের বাড়িতে আসে। আমার বাবা শান্তি রায় সাহাকে ধরে নিয়ে যায়। পথ থেকে প্রমথ পাল এবং বলহরি দাসকে ধরে নিয়ে রাজাকার ক্যাম্পে আসে। আমি তখন নবম শ্রেণীর ছাত্র। রাজাকার ক্যাম্পে ধরে নেয়া সবার ওপর নির্মম নির্যাতন চালায়। চার দিন পর জেলা সদরে পাকি আর্মি ক্যাম্পে তাদের সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে বলে খবর। পেয়েছিলাম। সে দিনের সেই স্মৃতি মনে হলে আজও বুক ফেটে কান্না আসে।

বাদল সাহা জানান, সেই খালেক এখনও এই দেশে বহাল তবিয়তে রাজনীতি করে। যাচ্ছে। প্রভাব প্রতিপত্তিও কম নয়। তিনি বলেন, সেদিন আমার বাবাকে যারা ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেছে সেই রাজাকারদের বিচার হয়নি। তাদের বিচার না হলে স্বাধীনতাই মূল্যহীন হয়ে পড়ে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধুর দেয়া একটা শােকবাণী এবং ২ হাজার টাকা আমার মা বাসন্তী রানী সাহাকে পাঠানাে হয়েছিল। এর পর আর কেউ আমাদের খবর নিতে আসেনি। বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সরকারী কৌসুলি মির্জা তােফাজ্জল হােসেন মুকুল এবং পিপি বীর মুক্তিযােদ্ধা অজিত। বন্ধু দত্ত জানান, খালেক প্রফেসর ছিল খুনী রাজাকার। কত মানুষ যে সে খুন করেছে। তার হিসাব নেই । আর কত মা-বােনকে যে সে পাকিস্তানী আর্মির হাতে তুলে দিয়েছে তারও কোন হিসাব নেই। এমন ঘৃণ্য রাজাকারের বিচার হয়নি এ দেশে। সে এখন প্রচণ্ড প্রতাপেই ঢাকায় বসবাস করছে।

জনকণ্ঠ ॥ ১৯-১২-২০০০

সূত্র : সেই রাজাকার – জনকন্ঠে প্রকাশিত রিপোর্টের সংকলন

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!