You dont have javascript enabled! Please enable it! টাঙ্গাইলের ক্যাপ্টেন বাছেত এখন ঢাকায় জামায়াত নেতা ইসলামী চিন্তাবিদ - সংগ্রামের নোটবুক

টাঙ্গাইলের ক্যাপ্টেন বাছেত এখন ঢাকায় জামায়াত নেতা ইসলামী চিন্তাবিদ

ফিরােজ মান্না, টাঙ্গাইল থেকে ॥ একাত্তরের কুখ্যাত রাজাকার, শান্তি কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য, টাঙ্গাইলে রাজাকার, আল শামস, আলবদরে লােক নিয়ােগের প্রধান ডাক্তার। ক্যাপ্টেন (অব) আব্দুল বাছেত এখন ঢাকার রামপুরায় চারতলা বাড়ির মালিক। ক্যাপ্টেন আব্দুল বাছেত ঢাকায় জামায়াতের নেতাও। ইসলামী চিন্তাবিদ হিসাবে মাঝে মধ্যেই টিভির পর্দায় ইসলামী আলােচনায় অংশ নিয়ে থাকে। আবার কিছু বিশেষ পত্রিকায় ইসলামী ভাবধারার লেখাও ছাপা হয় তার নামে । ক্যাপ্টেন বাছেত স্বাধীনতা। যুদ্ধের সময়ে ছিল অবসরপ্রাপ্ত। পাকিদের পক্ষে এই বাছেত ঢাকায় শান্তি কমিটি গঠনে অগ্রণী ভূমিকা রাখে। ঐ শান্তি কমিটির পক্ষ থেকে বাছেতকে মুক্তিযােদ্ধাদের খতম করার জন্য রাজাকার, আলবদর, আল শামস বাহিনীতে লােক নিয়ােগ করে অভিযান। চালাতে পাঠানাে হয় টাঙ্গাইলে। বাছেতের বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতীর বলায় । এ ছাড়া টাঙ্গাইল শহরের থানা পাড়ায় ছিল বাছেতের পৈতৃক আরও একটি বাড়ি। বাছেত টাঙ্গাইল এসে প্রথমেই দখল করে আদালতপাড়ার লতি ঘােষের বাড়ি। এই বাড়িতেই রাজাকারের ক্যাম্প বসায়। এরপর আদালতপাড়ার নিকুঞ্জ বাবুর বাড়ি দখল। করে- এখানেও রাজাকারের ক্যাম্প বসায়। বাছেত এ দু’টি ক্যাম্পেই থাকত। তাকে গার্ড দেয়ার জন্য পাকি আর্মি এবং রাজাকার, আলবদর, আল শামস সদস্যরা সর্বক্ষণিক ডিউটি দিত।

এরপর বাছেত দখল করে নেয় সাবালিয়ার যুগল পদ সাহার বাড়ি। এর মধ্যে বাছেত হিন্দু মুসলমানের বাড়ি থেকে বহু নারী ধরে এনে ধর্ষণ করেছে। এই নারীদের তুলে দিয়েছে পাকি আর্মিদের হাতে। লুট করেছে টাকা পয়সা-সােনাদানা। হত্যা করেছে শত শত নিরীহ মানুষ। নিকুঞ্জ বাবুর বাড়ি দখল করতে গিয়ে বাছেত নিকুঞ্জ বাবুর তিন নাতিকে গুলি করে হত্যা করেছে। টাঙ্গাইলে এই বাছেত ছিল। রাজাকারের প্রধান। শান্তি কমিটির পরামর্শদাতা। টাঙ্গাইলে সে সময় যা কিছু হয়েছে বাছেতের জ্ঞাতসারেই হয়েছে। যুবক তরুণদের জোর করে রাজাকার, আলবদরে ভর্তি করেছে বাছেত। টাঙ্গাইলে শান্তি কমিটির সদস্যদের বিভিন্ন সুযােগ-সুবিধার জন্য পাকি। আর্মিরা বাছেতের সঙ্গেই পরামর্শ করে নিত। স্বাধীনতাকামী নিরীহ-নিরপরাধ মানুষের রক্তে রাঙানাে বাছেতের হাত দিয়ে হাজার হাজার অপকর্ম হলেও সেই বাছেতের বিচার হয়নি। রাজাকারপ্রধান বাছেত স্বাধীনতার ৩০ বছর পরেও ক্ষমতার উচ্চ শিখরেই বসে আছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাছেত বাংলাদেশ ছেড়ে সৌদি আরব চলে গিয়েছিল। ‘৭৫-এ বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হওয়ার। পর বাছেত আবার দেশে আসে। ‘৭৬ সালে টাঙ্গাইলে কতিপয় তরুণ বাছেতকে রাজাকার বলে জুতাপেটা করেছিল। এই জুতাপেটাটুকুই তার বিচার বলে জানা গেছে। এরপর জিয়ার শাসন আমল থেকে বাছেত সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তি হিসাবে প্রতিষ্ঠা পেতে থাকে। টাঙ্গাইলের সাবালিয় দু’তলা বাড়ি করে একটি ক্লিনিক চালু করে। এর । বাইরে টাঙ্গাইলে তার আরও প্রচুর ভূসম্পদ রয়েছে। ঢাকার রামপুরায় বাছেত চারতলা বিলাসবহুল বাড়ি নির্মাণ করে এখন ঢাকাতেই বসবাস করে। জামায়াতের রাজনীতির একজন শক্তিশালী নেতাও সে। একই সঙ্গে ইসলামী চিন্তাবিদও বটে।

জনকণ্ঠ ॥ ০৮-০১-২০০১

সূত্র : সেই রাজাকার – জনকন্ঠে প্রকাশিত রিপোর্টের সংকলন