You dont have javascript enabled! Please enable it! কুষ্টিয়ার সাদ আহমেদের জেল হয়েছিল ৩১ বছর, এখনও সে পাকির স্বপ্নে বিভাের - সংগ্রামের নোটবুক

কুষ্টিয়ার সাদ আহমেদের জেল হয়েছিল ৩১ বছর, এখনও সে পাকির স্বপ্নে বিভাের

জনকণ্ঠ রিপাের্ট ॥ বৃহত্তর কুষ্টিয়ার রাজাকারকুল শিরােমণি এ্যাডভােকেট সাদ আহমেদ এখনও পাকিস্তানের স্বপ্ন দেখে। পাকিস্তানপন্থী এই মানুষটি এখন পর্যন্ত মৌলবাদী সংগঠনের সাথে ওতপ্রােতভাবে জড়িত এবং স্থানীয় ইসলামী চরমপন্থীদের উপদেষ্টা। ‘৭১-এ গণহত্যা, ধর্ষণসহ বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত থাকার অপরাধে স্বাধীন দেশে যে তিনজনের ৩০ বছরের উর্ধে শাস্তিস্বরূপ কারাদণ্ড হয়েছিল সাদ আহমেদ তাদেরই একজন। সাদ আহমেদের রাজাকার বাহিনী ও পাকিস্তানী আর্মির মিলিত বাহিনীর সাথে ওপেন ফাইটে কুষ্টিয়ার অনেক মুক্তিযােদ্ধা প্রাণ হারিয়েছিলেন। তাদের দ্বারা ধর্ষিত হয়েছে মাবােনেরা। ঘরবাড়ি জ্বালানাে থেকে শুরু করে ধনী মহাজন ও ব্যবসায়ীদের ধনসম্পদ লুটের নির্দেশক ছিল সাদ আহমেদ। সে ছিল বৃহত্তর কুষ্টিয়া শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান। মৌঃ হানিফ আনছারী (বিহারী) ছিল ভাইস চেয়ারম্যান, পাঞ্জাবী শফিউদ্দিন ওয়ারা ছিল কোষাধ্যক্ষ ও আজমত আলী মােক্তার ছিল সাব ডিভিশন পিস কমিটির সেক্রেটারি। এই কমিটির ৯ সদস্য ছাড়াও বহু কমিটি সাদ আহমেদ গঠন করেছিল। সে এ্যাডভােকেট নওয়াজেশ আহমেদকে চুয়াডাঙ্গা, সাবডিভিশন পিস কমিটির চেয়ারম্যান ও এ্যাডভােকেট আব্দুল মতিনকে মেহেরপুর সাব ডিভিশনের পিস কমিটি চেয়ারম্যান নিয়ােগ করেছিল। ‘৭১-এর অক্টোবর মাসে উপনির্বাচনে কুষ্টিয়া-২ আসন থেকে সে নির্বাচন করেছিল।

এর পর ঢাকা থেকে করাচী যাওয়ার প্রাক্কালে সে মুক্তিযােদ্ধাদের হাতে বন্দী হয়। পরে তাকে কুষ্টিয়া জেলখানায় স্থানান্তর করা হয়। কুমারখালী থানার পান্টি ইউনিয়নের শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান খেলাফত হােসেন তাকে চিঠি লিখেছিল এভাবে যে, “এখানে মুক্তিযােদ্ধাদের সাথে রাজাকারদের সম্মুখযুদ্ধে ৩ জন রাজাকার ও ২ জন মুক্তিযােদ্ধা মারা গেছে। আপনি অতি সত্বর ১০০ রাজাকার পাঠান।” এ্যাডভােকেট সাদ আহমেদ ঐ চিঠির পাশে স্বাক্ষর করে সিল করে কুষ্টিয়ার তকালীন এসপিকে নির্দেশ দেয়- “সেন্ড ফিফটি ট্রেইন্ড রাজাকার টুন্ট ইউনিয়ন এ্যাটওয়ান্স।” সাদের বিরুদ্ধে ‘৭২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়া কোর্টে মামলা শুরু হয়, মামলা নম্বর ২৭/৭২ স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল। তৎকালীন জেলা জজ (১নং স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল) মিঃ রবীন্দ্র কুমার বিশ্বাস ৪২ পৃষ্ঠা সংবলিত রায় ঘােষণা করেন ‘৭৩ সালের ১২ মার্চ। আসামী সাদ আহমেদকে ৩১ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। একই সময় বাংলাদেশের অপর দুই জনের ৩০ বছরের উর্ধে কারাদণ্ড হয়েছিল। এদের একজন ময়মনসিংহের মাওলানা ইউসুফ ও অপরজন ঢাকার এএসএম সােলায়মান। পরবর্তীতে হাইকোর্ট বিভাগে ক্রিমিনাল আপীলের (নম্বর ২২০/৭৩) প্রেক্ষিতে বিচারপতি হাবিবুর রহমান ও বিচারপতি মােস্তফা কামালের আদালতে আপীলটি আংশিক মঞ্জুর করে তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বদলে তিন বছরের জেল ও ৫০০ টাকা জরিমানা হয়। এসময়। “মুজিবের কারাগারে পৌনে সাত শ’ দিন” নামে একটি বইও লিখে সে নিজেদের মহলে বিতরণ করে। সাদ আহমেদ ও তার বাহিনীর লুণ্ঠনকৃত মালামাল একটি নির্দিষ্ট গুদামে জমা রাখা হতাে।

ঐ সময় স্থানীয় সােনালী ব্যাংকে জেলা শান্তি কমিটির নামে একটি এ্যাকাউন্ট ছিল, যেখানে হিন্দু ও দেশত্যাগী আওয়ামী লীগারদের সম্পদের বিক্রয়লব্ধ। টাকা জমা ছিল। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের ২ তারিখে সাদ আহমেদ ব্যাংক থেকে ১ লাখ টাকা তুলে নেয় অন্যদের অগােচরে। ব্যাংকের এসব নথিপত্রসহ অন্য অনেক প্রমাণপত্র মামলা চলাকালীন কুষ্টিয়ার চীফ স্পেশাল পিপি হাজী আমজাদ হােসেন কোর্টে দাখিল করেন। তার সম্পর্কে আরও জানা যায়- হিন্দুদের বেশ কটি বাড়ি সে দখল করেছিল। এমনকি পিস কমিটির অফিস বানিয়েছিল এসব দখল করা বাড়িতে। বর্তমানে এ্যাডঃ সাদ কুষ্টিয়া জজ কোর্টসহ বিভিন্ন জেলায় মামলা পরিচালনা করে। জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাগুলাে সেই দেখাশােনা করে। তার অপকর্মের স্মৃতি মনে করে কুষ্টিয়াবাসী এখনও শিউরে ওঠে। জেনারেল টিক্কা খানের নিকটাত্মীয় সাদ আহমেদ লুটের টাকায় গড়ে তুলেছে “রিজিয়া সা’দ ইসলামিক সেন্টার”।

জনকণ্ঠ । ০৭-০১-২০০১

সূত্র : সেই রাজাকার – জনকন্ঠে প্রকাশিত রিপোর্টের সংকলন

নোট – ২০১৫ সালে এই রাজাকার মারা যায়।