You dont have javascript enabled! Please enable it!

রেসকোর্স ময়দানের বিশাল সমাবেশে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ 

৩ জানুয়ারি ১৯৭১

রেসকোর্স ময়দান ঢাকা

বঙ্গবন্ধুর ভাষণসমগ্র

বঙ্গবন্ধুর ভাষণসমগ্ররেসকোর্স ময়দানের বিশাল সমাবেশে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ৩ জানুয়ারি ১৯৭১বঙ্গবন্ধুর ভাষণ দেশের জনগণের সম্পদ। এখানে নানান রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ও ইতিহাস বর্নিত রয়েছে। রয়েছে বাঙালীর ভবিষ্যতের চলার নির্দেশনা। তাই এগুলোর সঠিক প্রকাশ জরুরী। সংগ্রামের নোটবুক বৃহৎ উদ্যোগে এনিয়ে কাজ করছে। প্রায় চারশত ভাষণ সংগ্রহ করা হয়েছে। সংগ্রহের সময় আমরা ভাষণের পরিবেশ ও ইমোশনকেও তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। ধীরে ধীরে সকল সংগ্রহ সবার কাছে পৌঁছে দেবো। ভাষণটি সম্পূর্ণ টাইপ করে সংগ্রামের নোটবুক ওয়েবসাইটে দেয়া হয়েছে। এটি টাইপ করে দিয়েছেন @Debashis Bhattacharjee । :::::::::::::::টেক্সট লিংক https://songramernotebook.com/archives/90864#বঙ্গবন্ধুর_ভাষণ_সমগ্র#সংগ্রামের_নোটবুক

Posted by সংগ্রামের নোটবুক on Thursday, November 21, 2019

আমার ভায়েরা ও বোনেরা,

আজ বক্তৃতা শুরু করার পূর্বে স্মরণ করি- মহান রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন,  বাষট্টির আইয়ুব-বিরোধী আন্দোলন,  ছেষট্টির ৭ই জুনের সংগ্রাম ও আটষট্টি ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ছাত্র,  শ্রমিক,  কৃষক,  মধ্যবিত্ত সমাজের মানুষের কথা। আজ সকলকে সঙ্গে নিয়ে এই গণসমাবেশে শপথ করতেছি শহীদানের রক্ত বৃথা যেতে দেব না। যতদিন আকাশ বাতাস থাকবে,  বাংলাদেশ থাকবে,  বাংলার মাটি থাকবে – ততদিন রক্তের কথা ভুলবনা। প্রয়োজন হলে নিজের রক্ত দিয়ে তাদের রক্তঋণ পরিশোধ করব। সংগ্রাম এখনও শেষ হয় নাই-সংগ্রামের সবেমাত্র শুরু। আমরা যা পাশ করব,  তাই পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র। তা নস্যাৎ করার ক্ষমতা কারো নাই। যদি কেউ করেন,  দেশব্যাপী প্রচণ্ড গণবিস্ফোরণে তার জবাব দেওয়া হবে।

আমি আর আমার সহকর্মিরা যারা জীবনে আমরা একটা কথা আমার জীবনে আপনি দেখবেন আমি কন্ট্রাডিকশন কন্ট্রাডিকশন আমার মধ্যে নাই। যেটা বলি বুঝে বলি এবং যেটা বলি সেটা করবার জন্য জানডা দেবার জন্য প্রস্তুত থাকি। অল্প বেতনের কর্মচারী ভাইদের বলি,  টিচার যে বাঁচলো তাদের অনুরোধ করবো তাদের জন্য নিশ্চই আমাদের পরিকল্পনা গ্রহন করা হবে যেনো মানুষের মতো বাঁচতে পারেন। আমার অল্প বেতনের কর্মচারী ভাইরা,  শিক্ষক ভাইরা আপনার মতো বাঁচতে (অস্পষ্ট) চেষ্টা করবো ম্যানেজ করার। আজ বাংলাদেশের মানুষ বাস্তুহারা হয়েছে। যাদের ঘরবাড়ি নাই। বাস্তুহারা হয়েছে আমার দেশের মানুষ। আজকে দেখেন রাস্তার পাড়ে পাড়ে,  বস্তিতে বস্তিতে হাজার হাজার মানুষ ঘর নাই বাড়ি নাই রাস্তার উপর পড়ে থাকে। আইয়ুব খানের আমলে খাস জমি বড় বড় ভুড়ীওয়ালাদের দেওয়া হয়েছে। আমরা আপনাদের কাছে বলতে পারি ওটা ইনকোয়ারি করা হবে। ওই ভুড়ীওয়ালাদের কাছ থেকে জমি কেড়ে নিয়ে যারা জমিহীন কৃষক তাদের মধ্যে জমি বিলি করা হবে। ভবিষ্যতে খাস ল্যান্ড আর বড়লোকদের দেওয়া হবে না। গরীবদের মধ্যে ভাগ করা হবে। আমি জানি,  দেশের মধ্যে বেকার সমস্যা বেড়ে গেছে। কি করবো ভাই জানি,  আপনারা আত্মা দিয়েছেন,  আপনারা ভোট দিয়েছেন। শতকরা ৯৮টা সিট আমাকে দিয়েছেন আমি জানি। টাকা কোথায়? পয়সা কোথায়? একদম শেষ করে দিয়েছে। বেকার,  ৭০ লক্ষ বেকার আছে এই বাংলাদেশে। এদের জন্য কুটির শিল্পের মাধ্যমে এবং কাজের বন্দোবস্ত করে যত তাড়াতাড়ি হয় বেকার সমস্যা দূর করার চেষ্টা করতে হবে। না হলে এদেশের মানুষ বেকার কুকুরের মতো রাস্তাঘাটে না খেয়ে মরবে। আর একটা কথা বলি আমার রিফুজী ভাইদের কাছে ২৩ বৎসর পরে,  এ দেশে আর রিফুজী নাই আপনারা বাংলাদেশে আসছেন বাঙালি। তবে একটা কথা,  এটা আমি উঠাবোনা। ২৩ বৎসর পর্যন্ত আইজো আমরা রিফুজী ট্যাক্স দেই। ৭ লক্ষ রিফুজী আসাম,  পশ্চিমবংগ,  বিহার,  কুচবিহার,  কলকাতা থেকে এসছে তাদের জন্য একটা পয়সা আইজ পর্যন্ত খরচ করা হয় নাই। আমি সরকারকে বলি,  রিফুজী ট্যাক্স কতো আমরা দিয়েছি বাংলাদেশের লোক তার হিসাব দাও এবং সে টাকা আমাদের ফেরত দিতে হবে যাতে এদের আমরা বাড়ি ঘড় করে অন্ততপক্ষে বাঁচবার মতো বন্দোবস্ত করে দিতে পারি। গোপন রাখলে চলবে না,  দিতে হবে। টাকা চাই। ট্যাক্স দিয়েছি টাকা ফেরত দিতে হবে। রিফুজী ট্যাক্স; আজ যারা রিফুজী এসছেন বাংলার মাটির সঙ্গে মিলে যান,  বাংলার মাটির সঙ্গে এক হয়ে যান। আপনারা আমাদের ভাই,  এই মাতৃভূমীকে গ্রহন করে নেন। বাঙালি যে অধিকার পাবে আপনারাও সে অধিকার পাবেন। হিন্দু ভাই,  খ্রীষ্টান ভাই,  বৌদ্ধ ভাইদের বলি,  তোমাদের উপর এতোদিন যে অত্যাচার মাঝে মাঝে হয়েছে সে আমি জানি। ভবিষ্যতে সে অত্যাচার হবে না। মোসলমানের যে অধিকার,  এদেশে হিন্দু,  খ্রীষ্টান,  বৌদ্ধ সে অধিকার এ বাংলার মাটিতে পাবে। ভায়েরা আমার,  শহরে বড় বড় বিল্ডিং হয়। বস্তিগুলো শহরের চেয়ে পুরানা। শহরগুলো আছে,  ইম্প্রুভমেন্টে আছে- সেখানে কিছুই হয় না। এবার আমরা ইম্প্রুভমেন্ট টাস্ককে বোলব,  টাকাগুলো মেহেরবানী করিয়া আমাদের এই বড়লোকদের এরিয়ায় ব্যয় না করিয়া ঐ বস্তি এরিয়ায় ব্যয় করতে হবে,  আপনারা হিসাব নিকাশ রেডি রাখেন। ভবিষ্যতে সেই কাজও করতে বাধ্য। বস্তি এরিয়াকে ধ্বংস করা চলবে না। ট্যাক্স পাবলিক যা দেয় ব্যয় তার থেকেও বেশি হবে। এটা আপনাদের মনে করা দরকার। সরকারি কর্মচারী ভাইদের বলি,  ১২ বৎসর পর্যন্ত আইয়ুব খানের আমলে থাইকা আপনাদের অনেকেরই মাথা অনেকটা খারাপ হয়ে গেছে। আপনারা এপ্রুভ পাওয়ারের মানে সম্পুর্ণ পাওয়ারের অধিকারী ছিলেন। আপনারা জনগনের প্রতিনিধি আসলে এডজাস্ট করতে পারেন না। আপনাদের,  আমি বর কর্মচারীর কথা বলছি,  গরীবদের কথা বলছি না। গরীবরা আমার দলে সব। তাদের বলবো,  একটু মগজটা একটু ঠিক করে ফালান,  আগের দিনের কথা ভুলে যান। জনগনের খাদেম হতে হবে। বড়কর্তা হলে চলবে না। ঐ বড় চেয়ারে বসে হবে না। মানুষের সঙ্গে মিশতে হবে। ওদের ট্যাক্সে,  ওদের পয়সায় আপনাদের সংসার চলে। এ কথা আপনাদের আমরা বুঝায়ে দেবো। নিশিচন্ত থাকতে পারেন। বহু খেলা দেখেছি। আগরতলা মামলার খেলাও আমি দেখেছি। জেলের মধ্যে বসেও আমি খেলা দেখেছি। এ দেশের রাজনীতিতে বহুদিন আমি আছি,  আমি দেখেছি। মেন্টালিটি চেঞ্জ করেন,  নাহলে ভবিষ্যতে আপনাদের বিপদের সম্ভাবনা আছে। আমরা মানুষদের বলবো,  ভালো লোক না,  বাইর করে দাও ব্যাস।

ভাইরা আমার,  আর ঢাকা শহরে যারা বস্তুহারা আছেন,  যাদের কৃ্ষক বাইর থেকে আসছেন,  নদীতে ভাইঙ্গে গেছে,  রিফুজী হয়ে গেছেন,  জমি দখল করে নেয়া হয়েছে,  তাদের জন্য আমরা বড় বন্দবস্তো করবো। আর কিছু সংখ্যক আমরা গ্রামে থানাতে যেখানে শহর এরিয়া আছে,  সেখানে আমরা রিহ্যাবিলেট করার চেষ্টা করবো। বড়লোকদের বড়লোক হতে দেবো না। আর গরীবদের না খেয়ে মরতে দেবোনা। এটা আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। যে সমস্ত মামলা মোকোদ্দমা এখন পর্যন্ত রাজনৈ্তিক কর্মীদের বিরুদ্ধে,  ছাত্রদের বিরুদ্ধে,  শ্রমিকদের বিরুদ্ধে আছে এবং যারা বিনা বিচারে বন্দি আছে,  সরকারকে অনুরোধ করবো তাদের এই মুহুর্তে মুক্তি দেবার জন্য। আর না হলে কতদিন আর রাখবেন,  আমরাইতো মুক্তি দেবো ইনশাল্লাহ সময় বেশি আর নাই। শিক্ষা ব্যাবস্থা সম্মন্ধে আমি বলতে চাই,  এর আমুল পরিবর্তন করতে হবে। যে শিক্ষা মানুষের মঙ্গলের জন্য হয় না,  সে শিক্ষাকে বাদ দিয়ে যে শিক্ষা মানুষের মঙ্গলের জন্য হয় সেই দিকে আমাদের নজর দিতে হবে। ইস্ট পাকিস্তান অর্ডিনেন্সকে আমাদের বাতিল করতে হবে। আমি বৈদেশিক নীতি সম্মন্ধে একটা কথা বলতে চাই। আমার দলের নীতি হলো,  সকলের উপর বন্ধুত্ব কারো সঙ্গে আমাদের শত্রু না। আমরা পাড়াপড়শির সঙ্গে শান্তিপুর্নভাবে বাস করতে চাই। আমরা কোএকজিস্টেন্সে বিশ্বাস করি। আমরা বিশ্বশান্তিতে বিশ্বাস করি। আমি বিশ্ব দুনিয়ার বড় বড় শক্তিকে অনুরোধ করবো যে টাকা,  যে অর্থ,  যে সম্পদ আপনারা অস্ত্রের জন্য ব্যয় করেন এবং সেই টাকায় (অস্পষ্ট) যাকে বলা হয় তা যদি আপনারা বন্ধ করে এই অর্থের দশ ভাগো বিশ্ব দুনিয়ার গরীব মানুষের জন্য ব্যয় করতেন এ দেশে,  এ দুনিয়ায় গরীব মানুষ থাকতো না। তাতে আপনাদের ইজ্জত বাড়তো। আমি আপনাদের কাছে আবেদন জানাবো,  অস্ত্র তৈ্রি করা বন্ধ করেন। মানুষ মারার কল তৈরী করা বন্ধ করেন এবং সেই অর্থ দিয়ে যেখানে কোটি কোটি মানুষ আইজ না খাওয়া- যেখানে কোটি কোটি মানুষ আইজ কাপড় পড়ে না- যেখানে কোটি কোটি মানুষ আইজ বাড়ি নাই- যেখানে কোটি কোটি মানুষ আইজ অশিক্ষিত- তাদের জন্য ব্যয় করেন- আপনাদের সন্মান দুনিয়ায় বাড়বে- মানুষ আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ থাকবে। অস্ত্র দিয়ে জয় লাভ করতে পারলে আপনারা দুনিয়ায় অনেকদিন জয় লাভ করতে পারতেন। আইজ অস্ত্রের দিন ফুরিয়ে গেছে। আইজ ভালোবাসা,  মহব্বত মানুষের খেদমতের দিন এসে গেছে। সেইদিকে আপনারা নজর রাখবেন আমি অনুরোধ করবো।

জয় বাংলা।

জয় বাংলা। (জনগণ একসাথে)

জয় বাংলা।

জয় বাংলা। (জনগণ একসাথে)

Typed by – Debashis Bhattacharjee

Reference:

বঙ্গবন্ধুর ভাষণসমগ্র, সংগ্রামের নোটবুক

 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!