১৪ শ্রাবণ, ১৩৭৮ শনিবার, ৩১ জুলাই ১৯৭১
গেরিলা আক্রমণের আশংকায় সামরিক বাহিনী ঢাকা শহর ও শহরতলীর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করে। কাঁহা মুক্তি, নিকালো বাহার! ‘এ ধরনের চিৎকার শোনা জেতে থাকে।
কাজী জহিরুল কাউয়ুম এদিন গোপনে কলকাতার মার্কিন কন্স্যুল দপ্তরে যোগাযোগ করেন এবং রাজনৈতিক সমঝোতা অর্জনের চেষ্টা চালান। ফলে, আওয়ামীলীগ নেতৃত্বে দু’টি ধারার সৃষ্টি হয়। উল্লেখ্য, এ সময়ে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বে প্রচ্ছন্ন দু’টি ধাঁরা বহমান থাকে।
স্বাধীনতা অর্জনের পক্ষের মূলধারা সর্বত্র প্রাধান্য বিস্তার লাভ করে। সরকার ও প্রশাসনের অনেক্ষেত্রে মৌলিক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। কোন কর্মকর্তা বা নেতাকে অপসারণ বা পদচ্যুতি না করেও এসময় ক্ষমতার মূলধারা থেকে নিস্পৃহ করে রাখা হয়। (লেখক)
বগুড়ার বিভিন্ন এলাকায় মুক্তিবাহিনীর তৎপরতা রীতিমত বেড়ে যায়। ফুলবাড়ী খেয়াঘাটে মুক্তিবাহিনী লুটেরা পাকহানাদার বাহিনীর উপর হামলা চালায়।
রাওয়ালপিন্ডিতে জনৈক সরকারী মুখপাত্র ঘোষণা করেন, পাকিস্তান সরকার শিগগির বেআইনী ঘোষিত আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবর রহমানের দেশদ্রোহিতা-মূলক কর্মকাণ্ডের ওপর একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করবে।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অত্যাচারে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে আশ্রয় গ্রহণকারী বাংলাদেশের শরনার্থীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৭১ লাখ ৩৩ হাজার ৪জন।
জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে প্রেরিত এক বার্তায় বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী খোন্দকার মোশতাক আহমদ বলেন, দেশের জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারকে পাশ কাটিয়ে শরণার্থী সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।
–The Christian Science Monitor পত্রিকায় এদিন সম্পাদকীয়তে বলা হয়ঃ Today four months later the Pakistani Army control the main cities of bangle but not the countryside. Resistance is increasing. The Garillas have been able trice to knock out the power stations erving Dacca, the capital. They frequently cut the rail links from Dacca to the cities
-কয়েকজন প্রভাবশালী আমেরিকান সিনেটর পাকিস্তানকে অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত রাখার জন্য নিক্সন সরকার তীব্র সমালোচনা করেন। এদের মধ্যে রয়েছেন এডওয়ার্ড কেনেডি, সিমিংটন, ফুলব্রাইট ও ম্যাথিয়াস। মার্কিন ষ্টেট ডিপার্টমেন্টের পক্ষ থেকে বলা হয়, ২৫ শে মার্চের পর পাকিস্তানকে অস্ত্র সরবরাহ করা হয়নি। তা’ সত্ত্বেও মার্কিন সংবাপত্র অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত রাখার সংবাদ প্রকাশিত হয়। (“দি গার্ডিয়ান” ৩০ শে জুলাই,১৯৭১)
-৩১ শে জুলাই “দি টাইমস” পত্রিকায় প্রকাশিত এক সংবাদে বলা হয়, মার্কিন যুক্ত-রাষ্ট্রের প্রাক্তন সিনেটর ইউজিন ম্যাককার্থী স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশকে সমর্থন করেন। লণ্ডনের ডরচেষ্টার হোটেলে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এ ব্যাপারে তাঁর মতামত ব্যাখা করে। তিনি বলেন, নাইজেরিয়ার গৃহযুদ্ধের সময় তিনি স্বাধীন বায়াফ্রার দাবী সমর্থন করেন। ভৌগোলিক কারণে বাংলাদেশের সাধিনন্তা দাবী অধিকতর যুক্তিসংগত বলে তিনি মনে করেন। মার্কিন বৈদেশিক নীতির সমালোচনা করে তিনি বলনে, যুদ্ধের মারফত সমস্যা সমাধানের প্রতি প্রাই সমর্থন জ্ঞাপন করা হয়। বাংলাদেশ তাঁর একটি উদাহরণ। অবশ্য ভিয়েতনামে মার্কিন হস্তক্ষেপে সঙ্গে এর তুলনা করা চলে না। পরদিন ট্র্যাফলগার স্কোয়ারের গণসমাবেশে বত্তৃতা কররার জন্য এ্যাকশান বাংলাদেশে তাঁকে আমন্ত্রন জানায়। সেদিনই আমেরিকায় ফইরে যেতে হচ্ছে বলে তিনি এই আমন্ত্রণ গ্রহণে অক্ষমতা জ্ঞাপন করেন। তার পরিবর্তে তিনি ৩১শে জুলাই ডরচেষ্টার হোটেলে সাংবাদিক সম্মেলনে যোগ দিতে রাজি হন। (“দি টাইমস, ৩১ শে জুলাই,১৯৭১)
“দি টাইমস” পত্রিকায় প্রকাশিত আরও একটি সংবাদ ইয়াহিয়া কান কর্তৃক ভারতের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ ঘোষণা করার হুমকি সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়। ভারত কর্তৃক পূর্ব বঙ্গের অভ্যন্তরে গোলাবর্ষণ অভিযোগ উত্থাপন করে ইয়াহিয়া খান বলনে, ভারতীয় উপমহাদেশে সর্বাত্মক যুদ্ধ আসন্ন।
-করাচিটে বিদেশী টেলিভিশন সাংবাদিকদ্দের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ইয়াহিয়া বলে, ভারতীয়রা যদি পূর্ব বঙ্গের একটি অংশ দখল করে তা হলে যুদ্ধ অবশ্যম্ভ্যাবী । এই যুদ্ধ সর্বাত্মক হবে বলে ভারত ও বহির্বিশ্বকে সে জানিয়ে দেয়। এক প্রশ্নের উত্তরে ইয়াহিয়া বলে, বৈদেশিক সাহায্যের পরিমাণ হ্রাস করা কিংবা সাহায্য বিলম্বিত হলে পূর্ব বাংলার যে কয়েক লক্ষ লোককে রাজনৈতিক দাবা খেলার গুটি হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে তাঁদের জন্য ৭ কোটি অধিবাসী দুর্ভোগের সম্মুখীন হবে। যেসব বিদেশী রাষ্ট্র ইতিপূর্বে অর্থনৈতিক সাহায্য দিতে রাজি হয়েছিল এবং বর্তমানে তা’স্থগিত রাখার নীতি গ্রহণ করেছে, তারা দুঃস্থজনের প্রতি দোয়া প্রদর্শনের পরিবর্তে “ দুরভিসন্ধিমূলক কারণে” উক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। (“ দি টাইমস” ৩১ শে জুলাই, ১৯৭১)
“দিকে দিকে আজ অশ্রুগঙ্গা
রক্ত গঙ্গা বহমান,
নাই নাই ভয় হবে হবে জয়
জয় মুজিবর রহমান।”
Reference:
একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী