You dont have javascript enabled! Please enable it!

কোন আইনে জিয়া সেনাপ্রধানকে এড়িয়ে আলাদা সামরিক কাঠামোর প্রস্তাব দেয়?

জেনারেল জিয়াকে এই ব্যাপারে নিশ্চই কেউ না কেউ মদদ দিচ্ছে। অন্যথায় তার এতদূর যাবার কথা না। নতুন অর্গানোগ্রামের ফলে অনিশ্চয়তা দূর হবে। তাই সে চাচ্ছিল না যে প্রস্তাবিত TO&E পাশের পর আর্মি আমার আন্ডারে সুসজ্জিত রূপ লাভ করুক। তাই এটাকে বিলম্বিত করার জন্য অবশ্যই যে প্রফেসর নুরুল ইসলামের শরণাপন্ন হয়েছে। এটিকে বিলম্বিত করার জন্য প্রফেসর নুরুল ইসলাম প্রেসিডেন্টকে জানালেন যে আর্মি হেড কোয়ার্টার থেকে তার কাছে দুটো প্রস্তাব এসেছে। একটি হচ্ছে ডিভিশন কনসেপ্ট আর আরেকটি হচ্ছে ব্রিগেড কনসেপ্ট। তাই তিনি সময় নিচ্ছেন কোনটা করবেন। বাস্তবে, ব্রিগেড কনসেপ্ট নামে আর্মি হেড কোয়ার্টার থেকে কোন প্রস্তাব যায়নি। এটি শুধু প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করার একটি কৌশল। এর লক্ষ্য হচ্ছে আমার মেয়াদে যেন এই প্রপোজাল পাশ না হয়। এই চতুর পরিকল্পনায় অবশ্যই ডেপুটি ডিফেন্স মিনিস্টার প্রফেসর নুরুল ইসলামের হাত রয়েছে। কারণ যে জিয়ার স্বার্থ অনুযায়ী কাজ করার চেষ্টা করছে।

রেফারেন্স হিসেবে এখানে প্রফেসর নুরুল ইসলামের লেখা আর্টিকেল খুব প্রাসঙ্গিক। তিনি আর্টিকেলে লিখেছেন TO&E এপ্রুভ করার সময় তার সামনে দুটো আলাদা প্রস্তাব আসে। একটি প্রস্তাব করেছেন আর্মি চিফ জেনারেল শফিউল্লাহ। এটি ডিভিশন কনসেপ্ট। এবং অন্যটি প্রস্তাবটি ডেপুটি চিফ জেনারেল জিয়ার। এটি ব্রিগেড কনসেপ্ট। তাই তিনি কিছুটা উভয়সংকটে আছেন যে কোনটা অনুমোদন করবেন। খুবই আশ্চর্য! আমরা কি শিশু? একই হেড কোয়ার্টার থেকে কিভাবে দুটো প্রস্তাব দেয়া যায়? যার একটি চিফের আরেকটা ডেপুটি চিফের? বিষয়টা তো এমন না যে প্রফেসর নুরুল ইসলাম জানেন না এরা কারা? যদি জানেন তাহলে এরকম মন্তব্য কিভাবে করেন? এই মন্তব্যে কি প্রফেসর নুরুল ইসলাম একজন মধ্যস্থতাকারী? মজার বিষয় হচ্ছে আর্মি হেড কোয়ার্টারের কেউ তথাকথিত দ্বিতীয় প্রস্তাবটি অর্থাৎ ব্রিগেড ভিত্তিক প্রস্তাবটি সম্পর্কে কিছুই জানেনা।

যেহেতু প্রফেসর নুরুল ইসলাম জিয়ার স্বার্থ দেখছেন তাই তাকে এরকম কিছু একটা করতে হত। তাই সে দ্বিতীয় প্রস্তাবের মত বিষয় এনেছে শুধুমাত্র প্রেসিডেন্টকে ভুল পথে পরিচালিত করার জন্য এবং পুরো প্রক্রিয়াটাকে বিলম্বিত করার জন্য। যদি প্রফেসর নুরুল ইসলাম জিয়ার পার্টি না হতেন তবে তো এই প্রস্তাব পাবার সাথে সাথে তার ফিরিয়ে দেবার কথা। তাই একথা নির্ধিদায় বলা যায় সে প্রফেসর নুরুল ইসলাম আর্মিতে পলিটিক্স করছেন। এবং একই সাথে অসন্তোষের বীজ বপন করছেন। তার এই প্রচেষ্টার কারণে দেশকে চরম মূল্য দিতে হয়েছে। এবং অবশ্যই বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারকে মূল্য দিতে হয়েছে সবচেয়ে বেশী।

নতুন প্রস্তাবিত TO&E পাশ হলে আর্মি অফিসার ও বাহিনীর লোকদের চাহিদা পূরণ হত। ফলে অসন্তোষ এবং হতাশা দূর হত। এটাই জেনারেল জিয়া চায়নি। পাশাপাশি সে প্রথমেই চেষ্টা করেছে TO&E প্রস্তাবটি যাতে পাশ না হয়। এর ফলে অসন্তোষের মাত্রা বাড়তে থাকবে। সেই লক্ষ্যে সে ডেপুটি ডিফেন্স মিনিস্টার প্রফেসর নুরুল ইসলামের শরণাপন্ন হয়েছে যাতে এপ্রুভালটা বিলম্বিত করা যায়। সে ভেবেছিল যে অফিসার ও অন্যান্য সেনাসদস্যদের জন্য সে এমন কিছু করবে যার ফলে তারা চিফ হিসেবে তাকে চায়। প্রফেসর নুরুল ইসলামের লেখা পড়ে আমার আর কোন সন্দেহ নাই যে তিনি জিয়ার পার্টি হিসেবে কাজ করেছেন যার ফলে TO&E প্রস্তাবটা পাশে বিলম্বিত করেছেন। এই লেখা প্রকাশিত হবার আগে আমি বুঝতে পারছিলাম না যে আর কেউ এই চক্রান্তে জড়িত আছে কিনা। আমি এখন তার দিকে আঙ্গুল নির্দেশ করতে পারি।

পাঠকের জন্য জানাচ্ছি, আমি আর্মির জন্য সরকারের কাছে যে প্রস্তাব দিয়েছিলাম সেটি ডিভিশনাল কনসেপ্ট। যখন আমি প্রেসিডেন্ট সেক্রেটারিয়েটে এই প্রস্তাব উপস্থাপন করি তখন আমার ডেপুটি চিফ জেনারেল জিয়া সহ আর্মির সকল PSO উপস্থিত ছিলেন। যদি ডেপুটি চিফ জেনারেল জিয়ার কোন আলাদা প্রস্তাব থাকতো তবে তিনি সেটা সেই ফর্মে উল্লেখ করতে পারতেন। কারণ সেটি একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছিলো। আমি অবাক হয়েছি প্রফেসর নুরুল ইসলাম কর্তৃক প্রকাশিত তথাকথিত দ্বিতীয় প্রস্তাবে। আমি জানিনা এই দ্বিতীয় প্রস্তাবটা আসলে কার মাথা থেকে এসেছে। এধরনের লেখা পত্রিকায় লেখার আগে প্রফেসর নুরুল ইসলাম নিশ্চই জেনারেল জিয়াকে জানতেন। সে এমন লোক যে আর্মিতে ব্রিগেড কনসেপ্ট ভিত্তিক প্রস্তাব দিয়েছে। কিভাবে সে ১৯৭৫ এর সেপ্টেম্বরে একটি ডিভিশন করল? (নবম ডিভিশন চালু হয় ১৯৭৫ এর সেপ্টেম্বরে)। অর্থাৎ আর্মি থেকে আমাকে অপসারণের ১ মাসে পরেই। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে প্রফেসর নুরুল ইসলাম পরবর্তী সরকারের কেবিনেটে ছিলেন।

পাঠকের অবগতির জন্য আরও জানাচ্ছি যে আজকের সেনাবাহিনী দাঁড় করাতে প্রচুর পরিশ্রম ও কাগজপত্র প্রস্তুত করতে হয়েছে। এরপর সেগুলোতে সরকারের অনুমোদন নিতে হয়েছে। যখন সরকার পরিবর্তন হল এবং জেনারেল জিয়া আর্মি চিফ হলেন এবং এরপর চিফ মার্শাল ল এডমিনিস্ট্রেটর হলেন তখন এসব প্রশাসনিক পদ্ধতি অনেক পরিবর্তন হয়ে গেল। জিয়া তখন যেটা করতে পারতো তা হচ্ছে ডিফেন্স মিনিস্ট্রির শেলফ থেকে ফাইলটা নামীয়ে ওই পেপারগুলো পাশ করিয়ে ফেলা। ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকায় তাকে কোন আদেশের জন্য অপেক্ষা করতে হয়নি। তাই নবম ডিভিশন সে এভাবেই করেছে। আমি চলে যাবার পর নবম ডিভিশন করতে আর্মি হেড কোয়ার্টারের কাছে কোন আলাদীনের চেরাগ ছিলো না। এটা প্রায় দেড় বছরের পরিশ্রমের ফসল। এতে জিয়াও ছিলো। নতুন ডিভিশন হবার ফলে আর্মি অফিসার ও সদস্যরা দুশ্চিন্তামুক্ত হলেন। যদি এই ডিভিশনটা ১৫ আগস্ট ‘৭৫ এর মাসখানেক আগে হত তাহলে হয়ত ইতিহাসটা এরকম হতনা। প্রফেসর নুরুল ইসলাম এখন আর বেঁচে নেই। তাহলে আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম কোথায় আপনার জিয়া প্রদত্ত সেই ব্রিগেড কনসেপ্ট যার জন্য আপনি আমার প্রস্তাবিত TO&E পাশ করাতে বিলম্ব করছিলেন? আমার ধারণা এটাই যে বঙ্গবন্ধু তার উপর যে বিশ্বাস রেখেছিল সে সেটার বরখেলাপ করেছে।

প্রফেসর নুরুল ইসলামের ব্যাপারে আমার মন্তব্য কিছুটা রুক্ষ মনে হতে পারে। সে বঙ্গবন্ধুর সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করেছে। যদি সে বঙ্গবন্ধুর প্রতি অনুগত থাকতো, এবং আর্মির অর্গানোগ্রামটা সময় মত পাশ করে দিত তাহলে হয়ত পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের বেদনাদায়ক ঘটনা ঘটত না। এছাড়াও যদি পঁচাত্তরের জুলাই মাসে বঙ্গবন্ধুর কথা মত সে জিয়ার পদত্যাগপত্র রিসিভ করত তাহলেও পরিস্থিতি অন্যরকম হত। সে প্রেসিডেন্টের আদেশের প্রতি শ্রদ্ধা দেখায়নি। বরং উল্টো সে প্রেসিডেন্টের কাছে জিয়ার হয়ে তদবির করেছে যে যদি পদত্যাগপত্রটা বিলম্বিত করে সেপ্টেম্বরের দিকে নেয়া যায়। এই তথ্যের রেফারেন্স প্রফেসর নুরুল ইসলামের নিজের লেখা আর্টিকেলেই রয়েছে যা ১৯৯৪ সালের ২৬ মার্চ “দৈনিক আজাদী” পত্রিকায় ছাপা হয়। এই ঘটনার সাথে কি ১৫ আগস্ট ‘৭৫ এর যোগসূত্র পাওয়া যায়?

এসকল তথ্য প্রফেসর নুরুল ইসলামের আর্টিকেলে পাওয়া যায়। এটি ১৯৯৪ সালের ২৬ মার্চ “দৈনিক আজাদী” পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে ছাপা হয়  এবং এরপর একই বছর “বাংলাবাজার পত্রিকা” ও “ভোরের কাগজ” এ ছাপা হয়। তিনি সেখানে স্পষ্ট উল্লেখ করেছেন যে প্রেসিডেন্ট তাকে বলেছেন যে তিনি (বঙ্গবন্ধু) জিয়াকে পদত্যাগ করতে বলেছেন এবং তাকে (নুরুল ইসলাম) আদেশ দিয়েছেন জেনারেল জিয়ার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করতে। প্রফেসর নুরুল ইসলামের সাথে যুদ্ধের সময় জেনারেল জিয়ার সাথে চট্টগ্রামের কিছু স্মৃতি রয়েছে। তাই সম্ভবত সে জিয়ার থেকে পদত্যাগপত্র নিতে আন্তরিকতা দেখায়নি। বরং মজার ব্যাপার হচ্ছে, জুলাই ‘৭৫ এর বঙ্গবন্ধুর এই আদেশ মানার পরিবর্তে প্রফেসর নুরুল ইসলাম প্রেসিডেন্টের কাছে অনুরোধ করেছে যাতে জিয়ার পদত্যাগপত্র ১৯৭৫ এর সেপ্টেম্বর মাসে নেয়া হয়।

এটা উপরে উল্লেখিত আর্টিকেলে লেখা প্রফেসর নুরুল ইসলামের নিজের ভাষ্য। প্রশ্ন হচ্ছে, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যে সময় চাওয়া হল, এর সাথে কি ১৫ আগস্টের কোন সম্পর্ক আছে কিনা? এখানে অবশ্যই ভাবনার খোরাক আছে। সামরিক অভ্যুত্থানের পর বঙ্গবন্ধুর প্রতি জিয়ার কোন ভালোবাসা ছিলোনা। পেছনে থাকালে মনে হয়, গোয়েন্দা ব্যার্থতা এবং সিদ্ধান্তহীনতাই ১৫ আগস্টের বেদনাদায়ক ঘটনার অন্যতম কারণ। যেহেতু আমার নিজস্ব কোন গোয়েন্দা প্রতিষ্ঠান ছিলোনা, তাই বিকল্প হিসেবে আমাকে ডিজিএফ আই ব্রিগেডিয়ার রউফের দেয়া তথ্যের নির্ভর করতে হয়েছে। ব্রিগেডিয়ার রউফ একজন রিপ্যাট্রিয়েটেড আই এস আই অফিসার। সম্ভবত একথা বললে আমার ভুল হবে না যে সেও বঙ্গবন্ধুর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।

Reference: 15th August A National Tragedy Major Gen K M Safiullah BU PSC

Translated by Dr Razibul Bari

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!