You dont have javascript enabled! Please enable it!

সেদিনের মিটিংএ প্রেসিডেন্ট আমাকে জানালেন যে তিনি জেনারেল জিয়াকে পদত্যাগ করতে বলেছেন। আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, “স্যার, এটি কেন চাচ্ছেন?” প্রেসিডেন্ট তখন বললেন যে জিয়া বিভিন্ন সোর্স মারফত তাঁকে অনুরোধ ও জালাতন করছে যাতে আমাকে দ্বিতীয় মেয়াদে আর আর্মি চিফ না করা হয়। (আমার প্রথম মেয়াদ শেষ হয় ১৯৭৫ সালের ৭ এপ্রিল।) বিভিন্ন সোর্স মারফত কাজটি আদায় করাতে না পেরে জিয়া নিজেই প্রেসিডেন্টের মুখোমুখি হয়। সেই সাক্ষাতে জিয়া প্রেসিডেন্টকে অনুনয় করে বলে যেন আমাকে সরিয়ে তাকে চিফ করা হয়। এমনকি সে প্রেসিডেন্টকে এই নিশ্চয়তা দেয় যে, সে আরও ভালো সার্ভিস দিতে পারবে। আমি জানিনা এমন কী সার্ভিস সে দিতো যা আমি দিতে পারিনি।

প্রেসিডেন্ট সম্ভবত হতাশ হয়ে গিয়েছিলেন এবং তাকে পদত্যাগ করতে বলেছিলেন। প্রেসিডেন্ট সিদ্ধান্তটা নিয়েছিলেন পঁচাত্তরের জুলাইয়ের কোন এক সময়ে এবং তিনি জিয়াকে রেজিগনেশন লেটার জমা দিতে বলেছিলেন। প্রেসিডেন্ট তখন প্রফেসর নুরুল ইসলামকে বলেছিলেন যে জিয়া পদত্যাগ পত্র জমা দিলে সেটা যেন রিসিভ করা হয় এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হয়। ডিফেন্স মিনিস্ট্রির সচিব জনাব মুজিবুল হক সাহেবও প্রেসিডেন্টের এই সিদ্ধান্তটা জানতেন। বঙ্গবন্ধুর ডেপুটি ডিফেন্স মিনিস্টার প্রফেসর নুরুল ইসলাম বঙ্গবন্ধুর এই আদেশ প্রয়োগ করতে তেমন আন্তরিক ছিলেন না। তিনি জেনারেল জিয়ার পদক্ষেপের আশায় ছিলেন। যাতে করে জিয়া নিজে থেকে রেজিগ্নেশন লেটার জমা দেয়। এভাবে ডেপুটি ডিফেন্স মিনিস্টার প্রফেসর নুরুল ইসলাম জিয়াকে এক প্রকার কালক্ষেপণ করতে সাহায্য করছিলেন। 

যখন প্রেসিডেন্ট আমাকে সংবাদটা দিলেন তখন ইতোমধ্যে চিফ হিসেবে আমার দ্বিতীয় মেয়াদ চলছে। এটি এপ্রুভ হয় ‘৭৫ এর এপ্রিল মাসে। তবুও কেউ কোনোভাবে তাকে বুঝিয়েছে যে আমাকে সরিয়ে দেয়া হবে এবং তাকে চিফ করা হবে। প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে এসব শোনার পর আমি বুঝলাম কেউ জিয়াকে নিয়ে খেলছে। কারণ অলরেডি আমার দ্বিতীয় মেয়াদ চলমান আছে। যাই হোক, প্রেসিডেন্ট আমাকে জানালেন জিয়া কী করছে। স্বাভাবিকভাবেই আমি কিছুটা অস্বস্তিবোধ করলাম এই ভেবে যে আমার পেছনে আমার ডেপুটি দেশের সর্বোচ্চ নির্বাহীর বিরুদ্ধে না জানি কী করছে। তাই যখন প্রেসিডেন্ট আমাকে জানালেন যে তিনি জিয়াকে পদত্যাগ করতে বলেছেন, অবাক হলেও আমি তখন কিছু বলিনি। সেই দিন পর্যন্ত সুপিরিয়র কেউ জিয়ার সম্পর্কে খারাপ বললে আমি তাকে রক্ষার চেষ্টা করতাম। কিন্তু সেদিনই আমি চুপ করে থেকেছি। এটা আমার কাছে স্পষ্ট হয়ে গেল যে কারা আর্মির উন্নয়নে আমার প্রস্তাবকে বাধা দিতে পর্দার আড়ালে কাজ করছে। এবং আমার সাবমিট করা অর্গানোগ্রাম কেন এপ্রুভ হচ্ছেনা। 

যখন বঙ্গবন্ধু আমাকে বললেন যে তিনি জিয়াকে পদত্যাগ করতে বলেছেন আমি তখন বলিনি যে এখনই সিদ্ধান্তটা বাস্তবায়ন করুন। কারণ এর সাথে সরাসরি আমার বিষয়টা যুক্ত। একবার যদি বঙ্গবন্ধু প্রকাশ্যে জিয়াকে স্যাক করার বিষয়টা ঘোষণা দিয়ে ফেলেন তখন সেটা আর না করে পারা যাবেনা। অন্যথায় এটা প্রকাশ্যে বলা যাবেনা। একবার যেহেতু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাই এটা প্রয়োগ করতে তিনি আর সময় নেবেন না। বঙ্গবন্ধুর মনোভাব জানার পরে জেনারেল জিয়ার মনে বঙ্গবন্ধুর জন্য কোন ভালোবাসা ছিলোনা। অন্যভাবে বলা যায়, আমার উপর একটি হতাশা চাপলো যে একজন আমার পাশে বসেই আমাকে দেখতে থাকবে এবং আমারই বিরুদ্ধে কাজ করতে থাকবে। 

Translated by Dr Razibul Bari

Reference: 15th August A National Tragedy Major Gen K M Safiullah BU PSC

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!