গন অভ্যুত্থান দিবস
১৯৬৯ সালের ৪ জানুয়ারি ‘ছাত্র সংগ্রাম কমিটি’ গঠন করে ১১ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন(মতিয়া গ্রুপ), পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ, এনএসএফ (কোরেশী) ও পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের(মেনন গ্রুপ) নেতৃবৃন্দ। ৮ জানুয়ারি পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ, আওয়ামী লীগ(পিডিএম), ন্যাপ(মোজাফফর), মুসলিম লীগ (কাউন্সিল),মুসলিম লীগ (কাইউম) পিডিপি, নেজামে ইসলামী, জমিয়তে ইসলাম, জামাত সহ আটটি রাজনৈতিক সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত হয় ডেমোক্রাটিক অ্যাকশন কমিটি (ডাক)।
ডেমোক্রাটিক অ্যাকশন কমিটি (ডাক)‘ও ছাত্র সংগ্রাম কমিটি’ ১৭ জানুয়ারী থেকে আন্দোলন শুরু করে ।এই আন্দোলনের কোন পর্যায়েই ন্যাপ ভাসানি অংশ নেয় নি। ২০ জানুয়ারি সরকারি নিপীড়নের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় ছাত্রসভা ও প্রতিবাদ মিছিল করে ছাত্র সংগ্রাম কমিটি। মিছিলটি শহীদ মিনার হয়ে বাহাদুর শাহ পার্কে যেয়ে শেষ হয়। মিছিলের পিছনের অংশের সাথে এক সময়ে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে। এই মিছিলে পুলিশের গুলিতে ছাত্র ইউনিয়নের(মেনন)নেতা দলের ঢাকা হল (শহিদুল্লাহ) সভাপতি আসাদউজ্জামান নিহত হন। শহীদ আসাদের আত্মদানের পর ২১, ২২ ও ২৩ জানুয়ারি শোক পালনের মধ্য দিয়ে সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে ২৪ জানুয়ারি গণজাগরণ রূপ নেয় গণঅভ্যুত্থানে। সরকার কারফিউ ও ১৪৪ ধারা জারি করে ।শহরে সেনা বাহিনী মোতায়েন করা হয় । ১৯৬৯ সালের এ দিনে সংগ্রামী জনতা শাসকগোষ্ঠীর দমন-পীড়ন ও সান্ধ্য আইন ভঙ্গ করে মিছিল বের করে। এদিন ছিল হরতাল। মিছিলে পুলিশের গুলিবর্ষণে নবম শ্রেণির ছাত্র মতিউর এবং ছুরিকাঘাতে রুস্তম নিহত হলে ঢাকার পরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। ঢাকার বাইরেও ব্যাপক সংঘর্ষ চলে। ২৫ জানুয়ারী হরতাল ডাকা হয় । এই দিনে সেনাবাহিনির গুলিতে নাখালপাড়ার গৃহ বধু আনোয়ারা বেগম শিশুকে দুগ্ধ পান রত অবস্থায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এই আন্দোলনের সর্বশেষ শহীদ সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র রাজশাহীর সাত্তার । সাত্তার ৭ মাস আহত অবস্থায় মৃত্যুর সাথে লড়াই করে মারা যায় । সারা প্রদেশে গণঅভ্যুত্থানে মোট ৬১ জন মারা যায় এর মধ্যে ঢাকায় ছিল ৩৮ জন।।
১৫ ফেব্রুয়ারী ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এর অভ্যন্তরে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামী সার্জেন্ট জহুরুল হক কে বন্দী অবস্থায় গুলি করে হত্যা করা হয়। সার্জেন্ট জহুরুল হক এর জানাজায় ইমামতি করেন ভাসানি। আন্দোলনের এই পর্যায়ে ভাসানি যুক্ত হন। সার্জেন্ট জহুরুল হক হত্যার ঘটনার জের ধরে ছাত্র জনতা ২ জন প্রাদেশিক মন্ত্রী সুলতান আহমেদ , অং সু প্রু চৌধুরী এবং নেতা ও শিল্পপতি খাজা হাসান আস্কারি এর পরিবাগের বাড়ি পোড়াইয়া দেয়। আগরতলা কেসের বিচারপতি এসএ রহমান এর সরকারী বাসভবন লুট ও ভাংচুর হয়। পরে বিচারপতি ঢাকা ত্যাগ করে পশ্চিম পাকিস্তান চলে যান এবং বিচার থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেন ।১৬ ফেব্রুয়ারী থেকে আন্দোলন শেখ মুজিবের মুক্তি নির্ভর হয়ে পরে এসময়েই শ্লোগান আসে জেলের তালা ভাঙব শেখ মুজিব কে আনব ।
মাস ব্যাপী গণঅভ্যুত্থানের পরিনতিতে প্রশাসন ভেঙ্গে পরে আইয়ুব সরকার শেখ মুজিব সহ শীর্ষ নেতাদের মুক্তি দিতে বাধ্য হন এবং আইয়ুব সরকার ১ মাসের মধ্যে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
(সুত্রঃ বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাস – মোহাম্মাদ আব্দুল হান্নান – মতের অমিল বা অসম্পূর্ণ তথ্যের ক্ষেত্রে কমেন্ট করুন।)