You dont have javascript enabled! Please enable it!

কাইফি আজমির কবিতা

মুক্তিযুদ্ধের সময় সারা পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ বাংলাদেশকে সমর্থন করেছিল। ভারত ছিল এর মধ্যে অগ্রগণ্য। আরও নির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে বলতে হয় পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরার মানুষজন যা করেছিলেন তা তুলনাহীন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর পর ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামকে সহায়তা করার জন্য বিভিন্ন সংগঠনের সৃষ্টি হয়েছিল। এর মধ্যে একটি ছিল পশ্চিমবঙ্গের বাংলাদেশ মুক্তিসংগ্রাম সহায়ক সমিতি। পশ্চিমবঙ্গের , বিশেষ করে কলকাতায় বসবাসরত বুদ্ধিজীবীদের উদ্যোগে সংগঠনটি সৃষ্টি হয়। এর সভাপতি ছিলেন বিখ্যাত কথাসাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায়, সাধারণ সম্পাদক সাহিত্যিক দ্বীপেন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায়। দ্বীপেন্দ্রনাথই ছিলেন চালিকাশক্তি। কলকাতায় প্রায় সব শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এতে যোগ দিয়েছিলেন। সভাসমিতি করে, পুস্তিকা প্রকাশ করে, চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করে মুক্তিযুদ্ধের নটি মাস সংগঠনটি কাজ। করেছিল। এই সমিতির আহ্বানে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে সহায়ক সমিতি গড়ে ওঠে। এ রকম আরও দুটি সমিতির নাম পাই, একটি গড়ে উঠেছিল পুনা অপরটি মুম্বাইতে। এ রকম আরও প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছিল, যার খবর আমরা জানি না। এ বিষয়ে গবেষণা প্রায় হয়নি বললেই চলে। কলকাতার মুক্তিসংগ্রাম সহায়ক সমিতি মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই ৫৪ পৃষ্ঠার একটি পুস্তিকা প্রকাশ করে জনমত সংগঠনে। পুস্তিকাটির শিরোনাম ছিল স্বাধীন বাংলাদেশ কেন? এতে ছ’টি রচনা সঙ্কলিত হয়েছিল, যার প্রতিটি মুক্তিযুদ্ধের দলিল হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। এ ছাড়াও মুদ্রিত হয়েছিল কাইফি আজমির একটি কবিতার অনুবাদ ও ৬টি আলোকচিত্র। পুস্তিকাটি দুষ্প্রাপ্য। আমি আগে এটি দেখিনি। যে ছয়জনের রচনা সঙ্কলিত হয়েছে নিচে তাদের ও প্রবন্ধের নাম উদ্ধৃত করছি। শেখ মুজিবুর রহমান: মৌলানা ভাসানীর আবেদন। গৌরী আইয়ুব; অন্য দৃষ্টিকোণ থেকে দুই বাংলা। অধ্যাপক মুজাফফর আহমেদ। বাংলাদেশ সরকারের প্রতি পূর্ণ সমর্থন। এবং খান আবদুল গাফফার খান: পাকিস্তানী ভাই বোনদের প্রতি। সঙ্কলিত রচনাগুলির মধ্যে গৌরী আইয়ুব ও গাফফার খানের প্রবন্ধ দুটি গুরুত্বপূর্ণ। মাওলানা ভাসানী ২৫ জুন যে বিবৃতি দিয়েছিলেন তা থেকে দুটি লাইন বিশেষভাবে উদ্ধৃত হয়েছিল “বাঙ্গালি বহু ত্যাগ, বহু রক্ত দিয়াছে, কিন্তু অদৃষ্টের পরিহাস তাহার বিনিময়ে কিছুই পায় নাই। এইবার শেষ পরীক্ষা”। পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানরা বাংলাদেশ তেমন সমর্থন করেননি। গৌরী আইয়ুব লিখেছেন, বাংলাদেশ নিয়ে এই মাতামাতি, মুজিবুর রহমানকে নিয়ে এই উচ্ছাস পশ্চিম বাংলার অনেক মুসলমান পছন্দ করছেন না। এর অযৌক্তিকতা তুলে ধরে উপসংহারে লিখেছেন “একথা বললে অত্যুক্তি হবে না যে আজ যারা এই বীরত্বকে শ্রদ্ধা করতে পারছেন না, এই বীরতের গৌরবে নিজেকে গৌরবান্বিত বোধ করছেন না তারা বড় হতভাগ্য। জাতীয় নেতা নির্বাচনে ভুল আবার করে তবে তার সর্বনাশ কেউ ঠেকাতে পারবে না। মুজিবুর রহমান আজ আর একটি নাম নয়, কিন্তু হিন্দু মুসলমান নির্বিশেষে বাঙালি যদি এই ভুল আবার করে তবে তার সর্বনাশ কেউ ঠেকাতে পারবে না। মুজিবুর রহমান আজ একটি ভাবনা। এই ভাবনায় ভাবিতহতে পারলে ইতিহাস আমাদের করুণা করবে”। | পুস্তিকার প্রথম পাতায় ছাপা হয়েছে প্রখ্যাত উর্দু কবি কাইফি আজমির একটি কবিতা। শিরোনাম বাংলাদেশ’। অনুবাদ করেছেন সিদ্ধেশ্বর সেন। বাংলাদেশের সাহায্যার্থে কলকাতায় একটি মুশায়েরার আয়োজন করা হয়েছিল। সাজ্জাদ জহির সভাপতিত্ব করেছিলেন মুশায়েরার। সেখানে আজমি কবিতাটি আবৃত্তি করেন। উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্না অভিনেত্রী শাবানা আজমি তার কন্যা। কাইফি আজমির কবিতাটি অনেকে হয়ত দেখেনি। আমি এখানে কবিতাটির প্রথম ও শেষ স্তুবক উদ্ধৃতি করছি

আমি একটা দেশ নই যে তুমি আমাকে জ্বালিয়ে তছনছ করে দেবে

আমি একটা দেওয়াল নই যে আমাকে ভেঙে গুঁড়ো গুড়ো করবে

একটা সীমান্ত রেখা, আমি তাও নই যে তুমি আমাকে মুছে ফেলে দেবে।

তুমি কী বেয়াকুফ পিষে ফেলতে চাও আমাকে

ট্যাঙ্কের তলায় ভিক্ষে যা জুটিয়েছে।

আমার ওপর ফেলতে থাকো নাপাম বোমা, দিনে রাতে,

এতে একমাত্র নিজেকেই তুমি ফুরিয়ে ফেলবে।

আমার কোন হাতটা তুমি শেকলে বাঁধতে চাও?

সাত কোটি হাত রয়েছে।

আমার কোন মাথাটা ধড় থেকে নামাতে চাও?

রয়েছে সাত কোটি মাথা।

পুস্তিকাটি প্রকাশ করেছিলেন ইক্ষু গঙ্গোপাধ্যায় ও অধ্যাপক রণজিৎ দাশগুপ্ত।

রেফারেন্স – মুক্তিযুদ্ধের ১৩ নং সেক্টর – মুনতাসির মামুন

কাইফি আজমি

কাইফি আজমির কবিতামুক্তিযুদ্ধের সময় সারা পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ বাংলাদেশকে সমর্থন করেছিল। ভারত ছিল এর মধ্যে অগ্রগণ্য। আরও নির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে বলতে হয় পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরার মানুষজন যা করেছিলেন তা তুলনাহীন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর পর ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামকে সহায়তা করার জন্য বিভিন্ন সংগঠনের সৃষ্টি হয়েছিল। এর মধ্যে একটি ছিল পশ্চিমবঙ্গের বাংলাদেশ মুক্তিসংগ্রাম সহায়ক সমিতি। পশ্চিমবঙ্গের , বিশেষ করে কলকাতায় বসবাসরত বুদ্ধিজীবীদের উদ্যোগে সংগঠনটি সৃষ্টি হয়। এর সভাপতি ছিলেন বিখ্যাত কথাসাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায়, সাধারণ সম্পাদক সাহিত্যিক দ্বীপেন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায়। দ্বীপেন্দ্রনাথই ছিলেন চালিকাশক্তি। কলকাতায় প্রায় সব শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এতে যোগ দিয়েছিলেন। সভাসমিতি করে, পুস্তিকা প্রকাশ করে, চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করে মুক্তিযুদ্ধের নটি মাস সংগঠনটি কাজ। করেছিল। এই সমিতির আহ্বানে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে সহায়ক সমিতি গড়ে ওঠে। এ রকম আরও দুটি সমিতির নাম পাই, একটি গড়ে উঠেছিল পুনা অপরটি মুম্বাইতে। এ রকম আরও প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছিল, যার খবর আমরা জানি না। এ বিষয়ে গবেষণা প্রায় হয়নি বললেই চলে। কলকাতার মুক্তিসংগ্রাম সহায়ক সমিতি মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই ৫৪ পৃষ্ঠার একটি পুস্তিকা প্রকাশ করে জনমত সংগঠনে। পুস্তিকাটির শিরোনাম ছিল স্বাধীন বাংলাদেশ কেন? এতে ছ’টি রচনা সঙ্কলিত হয়েছিল, যার প্রতিটি মুক্তিযুদ্ধের দলিল হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। এ ছাড়াও মুদ্রিত হয়েছিল কাইফি আজমির একটি কবিতার অনুবাদ ও ৬টি আলোকচিত্র। পুস্তিকাটি দুষ্প্রাপ্য। আমি আগে এটি দেখিনি। যে ছয়জনের রচনা সঙ্কলিত হয়েছে নিচে তাদের ও প্রবন্ধের নাম উদ্ধৃত করছি। শেখ মুজিবুর রহমান: মৌলানা ভাসানীর আবেদন। গৌরী আইয়ুব; অন্য দৃষ্টিকোণ থেকে দুই বাংলা। অধ্যাপক মুজাফফর আহমেদ। বাংলাদেশ সরকারের প্রতি পূর্ণ সমর্থন। এবং খান আবদুল গাফফার খান: পাকিস্তানী ভাই বোনদের প্রতি। সঙ্কলিত রচনাগুলির মধ্যে গৌরী আইয়ুব ও গাফফার খানের প্রবন্ধ দুটি গুরুত্বপূর্ণ। মাওলানা ভাসানী ২৫ জুন যে বিবৃতি দিয়েছিলেন তা থেকে দুটি লাইন বিশেষভাবে উদ্ধৃত হয়েছিল “বাঙ্গালি বহু ত্যাগ, বহু রক্ত দিয়াছে, কিন্তু অদৃষ্টের পরিহাস তাহার বিনিময়ে কিছুই পায় নাই। এইবার শেষ পরীক্ষা”। পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানরা বাংলাদেশ তেমন সমর্থন করেননি। গৌরী আইয়ুব লিখেছেন, বাংলাদেশ নিয়ে এই মাতামাতি, মুজিবুর রহমানকে নিয়ে এই উচ্ছাস পশ্চিম বাংলার অনেক মুসলমান পছন্দ করছেন না। এর অযৌক্তিকতা তুলে ধরে উপসংহারে লিখেছেন “একথা বললে অত্যুক্তি হবে না যে আজ যারা এই বীরত্বকে শ্রদ্ধা করতে পারছেন না, এই বীরতের গৌরবে নিজেকে গৌরবান্বিত বোধ করছেন না তারা বড় হতভাগ্য। জাতীয় নেতা নির্বাচনে ভুল আবার করে তবে তার সর্বনাশ কেউ ঠেকাতে পারবে না। মুজিবুর রহমান আজ আর একটি নাম নয়, কিন্তু হিন্দু মুসলমান নির্বিশেষে বাঙালি যদি এই ভুল আবার করে তবে তার সর্বনাশ কেউ ঠেকাতে পারবে না। মুজিবুর রহমান আজ একটি ভাবনা। এই ভাবনায় ভাবিতহতে পারলে ইতিহাস আমাদের করুণা করবে”। | পুস্তিকার প্রথম পাতায় ছাপা হয়েছে প্রখ্যাত উর্দু কবি কাইফি আজমির একটি কবিতা। শিরোনাম বাংলাদেশ’। অনুবাদ করেছেন সিদ্ধেশ্বর সেন। বাংলাদেশের সাহায্যার্থে কলকাতায় একটি মুশায়েরার আয়োজন করা হয়েছিল। সাজ্জাদ জহির সভাপতিত্ব করেছিলেন মুশায়েরার। সেখানে আজমি কবিতাটি আবৃত্তি করেন। উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্না অভিনেত্রী শাবানা আজমি তার কন্যা। কাইফি আজমির কবিতাটি অনেকে হয়ত দেখেনি। আমি এখানে কবিতাটির প্রথম ও শেষ স্তুবক উদ্ধৃতি করছিআমি একটা দেশ নই যে তুমি আমাকে জ্বালিয়ে তছনছ করে দেবেআমি একটা দেওয়াল নই যে আমাকে ভেঙে গুঁড়ো গুড়ো করবেএকটা সীমান্ত রেখা, আমি তাও নই যে তুমি আমাকে মুছে ফেলে দেবে।তুমি কী বেয়াকুফ পিষে ফেলতে চাও আমাকেট্যাঙ্কের তলায় ভিক্ষে যা জুটিয়েছে।আমার ওপর ফেলতে থাকো নাপাম বোমা, দিনে রাতে,এতে একমাত্র নিজেকেই তুমি ফুরিয়ে ফেলবে।আমার কোন হাতটা তুমি শেকলে বাঁধতে চাও?সাত কোটি হাত রয়েছে।আমার কোন মাথাটা ধড় থেকে নামাতে চাও?রয়েছে সাত কোটি মাথা।পুস্তিকাটি প্রকাশ করেছিলেন ইক্ষু গঙ্গোপাধ্যায় ও অধ্যাপক রণজিৎ দাশগুপ্ত।দ্রষ্টব্য – কাইফি আজমির অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার তাকে সন্মাননা দেন। তার মেয়ে শাবানা আজমি তা গ্রহণ করতে বাংলাদেশে আসেন।Friends of 71

Posted by সংগ্রামের নোটবুক on Monday, November 18, 2019

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!