You dont have javascript enabled! Please enable it!
“৭১ এর ৪ঠা আগস্টের রাত সাড়ে তিনটার সময় আকস্মাৎ শান্তি কমিটির চেয়ারম্যানের নির্দেশে প্রায় ৫০ জন শান্তি কমিটির সদস্যসহ পুলিশ আমার বাড়ি ঘেরাও করে। আমি প্রাণপণ চেষ্টা করেও তাদের হাত থেকে রেহাই পেলাম না। ধৃত হওয়ার পরে আমাকে কঠোর পাহারার মাধ্যমে পথে নিয়ে এসেছে এবং থানাতে সোপর্দ করে। সেখানে আমি প্রায় ১৫ জন বন্দীকে দেখতে পাই। অবশ্য তারা অনেক আগেই ধৃত হয়েছিলেন।
 
পরের দিন দিবাগত রাত ৭টায় উপরোক্ত ১৫ জনকে থানায় হাজির করে এবং পাঁচজন করে করে এক একটি ব্যাচ তৈরি করে। পাঁচজনকে একটি ম্যাপ তৈরির ব্যাপারে অভিযুক্ত করে আলাদা করে রাখে এবং একমাত্র আমাকে অবাঙ্গালী হত্যার দায়ে অভিযুক্ত করে এবং যাদের কে হত্যা করা হয়েছে তাদের নামের তালিকা চায়। পাঁচজনের ভিতর যে দুজন বেশি দোষী বলে বিবেচনা করেন তাদেরকে থানার মধ্যেই মেজর শেরওয়ানীর নির্দেশে নির্মমভবে রোলার দ্বারা, বুকে লাথি মেরে প্রহার শুরু করে। ঐ সময় শেরওয়ানীর নির্দেশে অপর একজন সিপাহী আমাকে প্রহার করে। যতক্ষণ পর্যন্ত আমি অজ্ঞান হয়ে না যাই ততক্ষণ পর্যন্ত উপরোক্ত প্রক্রিয়ায় অত্যাচার চালাতে থাকে। জ্ঞান হবার পর পুনরায় হাজতে নিয়ে যায়। তার পরের দিন ম্যাপ তৈরির অভিযোগে গালাগাল করে। পরের দিন সন্ধ্যায় মেজর শেরওয়ানী ১৫ জনকে জেলখানা থেকে বের করে আনার হুকুম করে। আমার তন্দ্রার ভাব হওয়াতে আমি বের হতে পারলাম না। আমি উদ্বেগের ভিতর সময় কাটাতে থাকি। প্রকাশ থাকে যে, উল্লেখিত ১৪ জনকে গুলি করে হত্যা করে মহানন্দার নদীতে ফেলে দেয়। তারা জলে ভাসতে থাকে।
 
পরের দিন আমি যেখানে ছিলাম সেখানে প্রায় ১০-১২ জন আসামী এলো। তাদের কাছ থেকে বিবৃতি ও জিজ্ঞাসাবাদের পর কয়েক দিনের ভিতরেই অন্যান্য সবাইকে গুলি করে হত্যা করে। এর পরবর্তী ব্যাচে জেলখানাতে উকিল, মোক্তার ও শিক্ষিত ছাত্রসহ প্রায় ৭ জন এলো, তারপর উক্ত ৭ জনসহ আমাকে আঘাত হানতে থাকে। কিছুক্ষণ পরে বিবৃতি নিয়ে তাদের সবাইকে তাদের সবাইকে রাজশাহী জেলে চালান করা হচ্ছে বলা হয়। অবশ্য এটা ছিল নিছক ভাঁওতা। নবাবগঞ্জ নিউমার্কেটের একটি আলো-বাতাসহীন প্রকোষ্ঠে আবদ্ধ করে রাখল। সেখানে আবদ্ধ করার পর রাত ৯টার সময় সবাইকে বাইরে নিয়ে এসে জিপে তুলে অন্যত্র নিয়ে যেতে চায় এবং কঠিনভাবে হাত বন্ধন করে। জিপে তুলে রাস্তায় নিয়ে যাবার পথে জিপ থেকে ১২ জনকে নামিয়ে রাখে এবং বেদম প্রহার করতে থাকে। পরে সারারাত ধরে নিউমার্কেটের উল্লিখিত প্রকোষ্ঠে বন্দী করে রাখে। তার আগে জিপের অন্যদেরকে মেজর শেরওয়ানী গুলি করতে নির্দেশ দেয়। তাদেরকে রেহাই ঘরের শ্মশান ঘাটে মেরে ফেলে। পরের দিন সকালে উক্ত নিউমার্কেটের আসামীগুলিকে জেলখানায় নিয়ে আসে। দুইদিন পরে মেজর শেরওয়ানী নিজেই জেলখানায় গিয়ে আমার কাছে অঙ্গীকারপত্র লিখে নিয়ে মুক্তি দেয়। ইতিপূর্বে আমার পিতার নিকট থেকেও অনুরূপ অঙ্গীকারপত্র লিখে নেয়া হয়েছিল।
 
স্বাক্ষর/-
মোহাম্মদ মোছাওয়ার হোসেন
গ্রাম- মাইজপাড়া, ডাকঘর- রাজারামপুর
চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী
error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!