শরণার্থীর ডায়েরী -গৌরচন্দ্র সাহা
স্বাধীনতা না কচু! হিন্দু কিলিং, জানলেন মশাই স্রেফ হিন্দু কিলিং। আছে কোন হিন্দু আপনাদের বাংলাদেশের মন্ত্রী সভায়? তা-মশাই ওখানে কি পড়েছিলেন মাছ, দুধের লােভে? সেই এলেন আগে। এলে কবে সেটেল হয়ে যেতেন। শরণার্থীর খাতায় নাম লিখিয়ে এ ধরনের প্রলাপ আমাদেরকে শুনতে হচ্ছে অহরহ। আমি লেখক নই, কিন্তু আজকের এই চরম মুহূর্তে আমার জানা সত্য প্রকাশ না করি তবে মুক্তির সংগ্রামে যারা শহীদ হচ্ছেন, যে সব মা, বােন ধর্ষিতা লাঞ্ছিতা তাঁদের অভিশাপ থেকে রেহাই পাব না। স্রেফ হিন্দু কিলিং এটা যে ডাহা মিথ্যা কথা তা কাউকে বলার অপেক্ষা রাখে না। হিন্দু শরণার্থীও এসেছেন। একই সঙ্গে শহীদ হয়েছেন ড: গােবিন্দ চন্দ্র দেব ও ড: ইন্নাস আলীর মত পন্ডিত ব্যক্তি। পাশাপাশি শহীদ হয়েছেন বস্তির হিন্দু-মুসলমান শ্রমিক গ্রামের কৃষক ও শহরের মধ্যবিত্ত।
বাংলাদেশ মন্ত্রী সভায় কোন হিন্দুমন্ত্রী নেই একথা ঠিক। কিন্তু সেটাই বড় কথা নয়। বাংলা দেশের সাড়ে সাত কোটী মানুষ আজ পাকিস্তানী হানাদার দস্যুর সাথে যুদ্ধে লিপ্ত। বাংলাদেশ মন্ত্রীসভাকে মুক্তি যােদ্ধার ছাউনি ছাড়া আমরা অন্য কিছু ভাবি না। আমরা কখনােই ভারতে বসবাস করব না। সেদিন বেশি দূরে নেই আমাদের মাতৃভূমিতে আমরা ফিরে যাব। না, মাছ দুধের লােভে নয়। ফিরে যাব মায়ের কোলে।
উত্তাল পদ্মা ॥ ১: ১ ॥ ২৪ নভেম্বর ১৯৭১
সূত্র : গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ – খন্ড – ০৪