আজ ওর কিছু নেই না না পাকিস্তানে আর যাব না, কিছুতেই নয়
তােমরা আমাকে পাকিস্তানে নিওনা।’ মেয়েটিকে দেখে নিশ্চয়ই আপনার ভালবাসতে মন চাইবে। ওকে ভালবাসবার, স্নেহ করবার ও আদর যত্ন করবার লােক ছিল। ছিল ওদের বাড়ীঘর, মা বাবা ভাই বােন পরিবেষ্টিত একটি সুখী গৃহকোণ, বাড়ীর আঙ্গিনায় ঘন নারকেল সুপারীর ছায়ায় ও খেলা করতাে, সে খেলায় ফুটে উঠত আগামী দিনের একটি পূর্ণাঙ্গ ছবি, সেখানে একাধারে ও নারী, বধু ও মাতা। একদিন ওর সবই ছিল। আজ ওর কিছুই নেই, তাই ও আজ সীমান্তের এক হাসপাতালে আশ্রিতা। কিন্তু কেন নেই? কার পাপে আজ এই ছােট্ট মেয়েটি সর্বহারা? বিভীষিকাময় ২৫শে মার্চের কালরাত ওর সবটুকু গ্রাস করেছে। করেছে জঘন্যতম ঘৃণা উপায়ে, ইতিহাসের ঘৃণ্য নরপশু খুনী ইয়াহিয়ার বর্বর দস্যু সৈন্যবাহিনী ওই মেয়েটির পিতাকে দিয়ে ওর ছােট্ট ভাই বােনকে হত্যা করিয়েছে, তারপর মাতা পিতাকে হত্যা করে বাড়ীতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। দুর্ভাগ্য মেয়েটির যে ও মরেনি।
ওদের ঘর থেকে পালিয়ে একটু দূরে বসে সব কিছু লক্ষ্য করেছে, সেই নজীর বিহীন বর্বরতা ও চরম দু:খজনক বীভৎস। পরিণতির সাক্ষী হয়ে বেঁচে থাকার জন্য চরম মূল্য ওকেও দিতে হয়েছে। ও আজ সম্পূর্ণ উন্মাদ, কোন কিছুই গুছিয়ে বলতে পারছে না। যাকেই দেখছে আৎকে উঠে শুধু বলছে-না না পাকিস্তানে আর যাব না। কিছুতেই নয়। তােমরা আমাকে পাকিস্তানে দিও না। অসহায় এই মেয়েটি ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকছে, ঐ দৃষ্টির মধ্যে তীক্ষ হয়ে ফুটে রয়েছে একটি প্রশ্ন-জবাব চাই, কখনাে বলছে না না না। বাবার কাছে যাব না। যারা মেরে ফেলে দেবে। দোহাই তােমাদের, দুটি পায়ে পড়ি, বাবার কাছে আমাকে দিও না। এ মেয়েটি আজ কোথায় যাবে? এর ভার কে নেবে? জবাব দেবেন কে? আজ ওর কিছু নেই। [সীমান্তের কোন একটি ছােট্ট বেইস হাসপতালে আমরা এর সাক্ষাৎ পেয়েছিলাম ।
মায়ের ডাক ॥ ১: ২ ॥ ২২ অক্টোবর ১৯৭১
সূত্র : গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ – খন্ড – ০৪