পাক জল্লাদদের তথাকথিত শরণার্থী অভ্যর্থনা
কেন্দ্রের স্বরূপ মানবতার দুষমন পাক জঙ্গীশাহী নৃশংসতা আর ধাপ্পা দেয়ার ক্ষেত্রে ইতিহাসের জঘন্য জল্লাদ হিটলার মুসােলিনীর নিষ্ঠুরতা ও হঠকারিতাকে হার মানিয়েছে। ইউরােপী দেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিবিদও স্বীকার করেছেন। পাক জঙ্গীশাহীর মানবতাবিরােধী এই নিষ্ঠুরতা ও নব নব উপায়ে বিশ্বমানবতাকে ধােকা দেওয়ার অপপ্রয়াস কারও আর অজানা নেই। জঙ্গীশাহীর নগ্ন ও বীভৎস। চেহারাকে কিছুতেই ঢাকা দিয়ে রাখতে পারে নি। পাক হানাদার বাহিনী কর্তৃক নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞ অনুষ্ঠান এবং বাড়ীঘর জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয়ার পর শ্যামল বাংলার লক্ষ লক্ষ মানুষ কেবল প্রাণটিকে হাতের মুঠোয় নিয়ে বাপ-দাদা চৌদ্দ পুরুষের ভিটেমাটি ছেড়ে অরতে চলে যাওযায় বিশ্ববাসী যখন জঙ্গশাহীর উপর তীব্র চাপ সৃষ্টি করেছে তখন জঙ্গীশাহী বিশ্বকে ধােকা দেওয়ার জন্য এক নতুন পন্থার আশ্রয় নিয়েছে। নতুন ধােকাটি হচ্ছে বাংলাদেশের অধিকৃত এলাকার সীমান্তে তথাকথিত শরণার্থীদের অভ্যর্থনা কেন্দ্র। জঙ্গীশাহীর কনসেনট্রেশান শিবির বলে পরিচিত গায়েবী আওয়াজ তথা পাক বেতার মারফত রােজই গলা ফাটিয়ে চীকার করে বলছে প্রতিদিনই নাকি ভারত থেকে শরণার্থীরা জল্লাদবাহিনীর অভ্যর্থনা কেন্দ্র নামধারী বধ্যভূমিতে চলে যাচ্ছে। কিন্তু এই তথাকথিত অভ্যর্থনা কেন্দ্রের নেপথ্য কাহিনীটি হচ্ছে : নিষ্ঠুর নরপিশাচগণ অধিকৃত এলাকার গ্রামে রাত্রে আকস্মিকভাবে হামলা করে নারী পুরুষ শিশু এবং বৃদ্ধদের ধরে নিয়ে ঐ তথাকথিত অভ্যর্থনা কেন্দ্রে রেখে দেয় এবং তাদেরই ছবি তুলে দস্যু কবলিত সংবাদপত্রের পৃষ্ঠায় ছাপিয়ে থাকে।
আর বিদেশী রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধিদের দাওয়াত করে এনে দেখাচ্ছে যে, ভারত থেকে শরণার্থীরা স্বদেশে ফিরে আসছেন। কুমিল্লা থেকে আমাদের প্রতিনিধি জানিয়েছেন, হানাদার বাহিনী কুমিল্লা শহরের উত্তর দিকে বাস্তবী। ইউনিয়নের কতকগুলাে গ্রাম জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিয়ে গ্রামবাসীদের ধরে নিয়ে গিয়ে কুমিল্লা জেলার পূর্ব সীমান্তে একটি তথকথিত অভ্যর্থনা কেন্দ্রে আটক করে রেখেছে। সম্প্রতি বিদেশী। প্রতিনিধিগণকে নিয়ে গিয়ে এই তথাকথিত অভ্যর্থনা শিবিরটি দেখিয়েছে। কিন্তু এতসব নিলর্জ। জালিয়াতি করেও বিশ্বের দৃষ্টিকে ফাকি দিতে পারে নি। বৃটিশ পার্লামেন্টারী প্রতিনিধি দলের নেতা মিঃ বটমলীও জঙ্গীশাহীর এই ধাপ্পাবাজীর কথা ফাঁস করে দিয়েছেন। জঙ্গীশাহীর চারপাশে যে আজ অন্ধকার দেখতে শুরু করেছে, এই নিলজ্জ মিথ্যার বেসাতী থেকেই তা দিবালােকের মত স্পষ্ট হয়ে উঠে। কারণ অতি সাধারণ বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তিও বুঝতে পারেন যে, নদীতে ডুবন্ত মানুষ একটি ভাসমান তৃণবস্তুকেও জড়িয়ে ধরে বাঁচার ব্যর্থ চেষ্টা চালায়। কিন্তু এসব করেও কি জঙ্গীশাহী শেষ রক্ষা করতে পারবে?
জয়বাংলা (১) ॥ ১: ১১ ॥ ২৩ জুলাই ১৯৭১
সূত্র : গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ – খন্ড – ০৪