১৪ নভেম্বর ১৯৭১ঃ কামালপুর বিওপি ৩য় আক্রমন
১৩ নভেম্বর গোপন সংবাদে জানা যায় কামালপুর বিওপির উত্তর দিকে ভারতীয় বেড়িবাঁধ সংলগ্ন কিছু বাঙ্কার থেকে পাকিস্তানী সৈন্যরা সরে গেছে। এ সংবাদের ভিত্তিতে সেক্টর কমান্ডার আবু তাহের ঐ বাঙ্কারগুলোতে অবস্থান নিয়ে কামালপুর দখল করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হেলাল কোম্পানির মুক্তিযোদ্ধারা একটি গ্রুপ নিয়ে মাঝ রাতে বেড়িবাঁধ অতিক্রম করে কামালপুর পোস্টের উত্তর-পূর্ব কোণে পাকিস্তানীদের পরিত্যক্ত বাঙ্কার গুলোতে অবস্থান নেয়। অন্যান্য কোম্পানিরা বিভিন্ন পজিশনে অবস্থা নেয়। সবার সাথে ওয়ারলেস সেট ছিল। বেড়িবাঁধের উত্তর পাশে মহেন্দ্রগঞ্জ থেকে মিত্রবাহিনীর ১৩ গার্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারি ফায়ারিং দিয়ে অপারেশনটিকে ‘কভারেজ’ দিচ্ছিল। ভোররাত ৩টা ৪৫ মিনিটে অপারেশন শুরু হলো। সকাল সোয়া সাতটা পর্যন্ত দু পরে মধ্যে প্রচন্ড গুলিবিনিময় হলো। কিন্তু এত প্রচন্ড গোলাগুলির পরও হানাদার বাহিনী তাদের বাঙ্কার থেকে উঠে আসেনি। ১৪ নভেম্বর সকাল সাড়ে আটটার দিকে মেজর তাহের তাঁর বাঙ্কার থেকে উঠে লে. মিজান ও হেলালের পজিশনে আসেন।
তাঁদের কোন অবস্থাতেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে উঠে না যাওয়ার নির্দেশ দেন। এ সময় ধানুয়া ‘হাইড আউটের’ কোম্পানি কমান্ডার আবেদীন এগিয়ে এসে মেজর তাহেরের সাথে কথা বলতে থাকেন। সকলের সঙ্গে কথা বলতে বলতে তাহের বাঁধের কাছে ঘাসের ওপর বসে পড়েন। মুহূর্তেই প্রচন্ড একটি শব্দ হয় এবং সকলের সামনেই মেজর তাহের মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। উপস্থিত অনেকেই মনে করেন, কোন একটি মর্টার সেলের আঘাত-আবার কেউ কেউ মনে করেন যেখানে তাহের লুটিয়ে পড়েন সেখানে একটি ‘এ্যান্টি পারসনাল মাইন’ ছিল। ঘটনায় তাহেরের বাম পায়ের হাঁটুর উপরের অংশ প্রায় দ্বিখন্ডিত হয়ে সামান্য কিছু শুধু চামড়ার সাথে ঝুলে থাকে।