রণক্ষেত্রে শিবিরে
(অভিযান রণাঙ্গন প্রতিনিধি) জনগণের দুঃখদুর্দশা মােচনে বাংলাদেশ সরকার প্রাণপণ চেষ্টা চালাবে গণপ্রতিনিধিরাই মুক্ত এলাকায় প্রশাসনের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন -কামরুজ্জামান
নিজস্ব প্রতিনিধি] সম্প্রতি সাতক্ষীরা মহকুমার মুক্তাঞ্চল দেবহাটা, কালিগঞ্জ এবং শ্যামনগর থানায় কয়েকটি জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। এই জনসভায় প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাঙলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব কামরুজ্জামান। তাছাড়া এই এলাকার এম, এন, এ জনাব কামাল বখত্ সহ বেশ কিছু সংখ্যক এম-এন-এ, এম, পি, এ-ও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। থানাবাসীদের উদ্দেশ্যে ভাষণদান কালে জনাব কামরুজ্জামান বলেন, সুদীর্ঘ আটমাস যুদ্ধ করার পর আমরা এই এলাকাকে পাকহানাদার মুক্ত করেছি। আমরা জানি যে পাক দস্যুদের বর্বর অত্যাচারে আপনাদের প্রভুত ক্ষতি সাধিত হয়েছে। এই ক্ষতি পূরণের পূর্ণ ক্ষমতা না থাকলেও যতদূর সম্ভব এই ক্ষতি মােচনের জন্য বাঙলাদেশ সরকার প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাবেন। যেসব হাসপাতাল ও স্কুল কলেজ পাক ঘাতকরা ধ্বংস করেছে সেগুলি অতি সত্ত্বর নূতন করে তৈরী। করে স্থানীয় লােকজনের চিকিৎসা ও শিক্ষা দীক্ষার সুবিধা করে দেয়া হবে বলেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উপস্থিত জনগণকে আশ্বাস দেন। জনাব কামরুজ্জামান আরাে বলেন, জঙ্গীচক্রের নায়ক ইয়াহিয়া খাঁ একের পর এক ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র করেও বাংলার মানুষকে দাবিয়ে রাখতে পারেনি। বাঙলার মানুষ সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে পাক সৈন্যদের কবর রচনা করে সেই ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের জবাব দিয়েছেন। এম এন, এ, এম, পি এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন যে, এঁরা এই স্বাধীনতা যুদ্ধে শরীক না হয়ে। পাক জঙ্গীশাহীর কাছে আত্মসমর্পণ করলে আমরা এতাে শীঘ্র স্বাধীনতা অর্জন করতে পারতাম না। তারা আত্মসমর্পণ না করে সশস্ত্র সংগ্রামে শরীক হয়ে ত্যাগ তিতিক্ষারই পরিচয় দিয়েছেন। জনগণের
মঙ্গল চান বলেই তারা এই ত্যাগ স্বীকার করেছেন। মুক্ত এলাকায় বাঙলাদেশ সরকারের প্রশাসন সম্পর্কে জনাব কামরুজ্জামান বলেন যে, স্থানীয় গণপ্রতিনিধিরাই এই সব মুক্ত এলাকার প্রশাসনের দায়িত্বে থাকবেন। মুক্তি বাহিনীর সদস্যরা তাদেরকে এব্যাপারে সাহায্য করবেন। বাঙলাদেশ সরকারের প্রশাসন যাতে সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয় সেজন্যে গণ। প্রতিনিধিদের পূর্ণ সহযােগিতা করতে জনাব কামরুজ্জামান স্থানীয় জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান। সবশেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তার ভাষণে সমাজবিরােধীদের হুশিয়ার করে দিয়ে বলেন যে, বাঙলার মানুষ পাক বর্বরদের লুণ্ঠনে আজ একেবারে নিঃস্ব। কিন্তু এর পরও যদি কেউ কোনরকমে জনসাধারণকে ব্রিত করে তাহলে তাদের কঠোর শাস্তি দেয়া হবে। সভায় জনাব ওবায়দুর রহমান, ব্যারিষ্টার আমিরুল ইসলাম সহ বেশ কয়েকজন জাতীয় এবং প্রাদেশিক পরিষদ সদস্যও ভাষণ দেন।
অভিযান ॥ ১ : ৩ ॥ ১০ ডিসেম্বর ১৯৭১
সূত্র : গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ – খন্ড – ০৪