You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.11.19 | সদ্যমুক্ত বাংলাদেশ থেকে এলাম | সারােয়ার জাহান - সংগ্রামের নোটবুক

সদ্যমুক্ত বাংলাদেশ থেকে এলাম সারােয়ার জাহান

(জয়বাংলা নিজস্ব প্রতিনিধি)। সমগ্র দেবহাটা থানা গত দু’মাস ধরে মুক্তিবাহিনীর দখলে রয়েছে। সমগ্র এলাকায় বাংলাদেশ সরকারের প্রশাসন ব্যবস্থা পুরােদমে চলেছে। মুক্ত এলাকার শেষ সীমানায় বাংলাদেশের দামাল ছেলেরা হানাদার শত্রুদের সকল আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য সদা প্রস্তুতি রয়েছে। ঘৃণ্য পাক সেনা প্রতিদিনই বাংলাদেশের মুক্তমাটি পুনঃ দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু মুক্তিবাহিনীর বীর জোয়ানদের পাল্টা আক্রমণের মুখে তারা কিছুতেই টিকতে পারছে না। মুক্ত এলাকার প্রতিটি মানুষ আজ মুক্তিবাহিনীর পাশে দাড়িয়ে শত্রুকে নির্মূল করার দৃপ্ত শপথ নিয়েছে। অপরদিকে মুক্ত এলাকায় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ফিরে এসেছে স্বাভাবিক জীবন। হানাদার পাকবাহিনীর হামলায় স্বাভাবিক জীবনের যে তার ছিড়ে গিয়েছিল, তা আবার একে একে জোড়া লাগছে। সেখানে হাটবাজার চলছে পুরােদমে। জেলেরা মাছ ধরছে নদীতে। পল্লীবধুরা পুকুরঘাটে গােসল করছেন নিশ্চিন্তে, চাষীরা মাঠে করছেন কাজ। কেউ ফসল কাটছেন, আবার কেউ সদ্য ফসল তােলা মাঠে বইছেন হাল। ডাক্তারেরা রােগীর চিকিৎসা করছেন। মুক্ত হওয়ার সাথে সাথে সেখানে এসে জনতার সাথে মিশে গিয়েছে মুক্তিবাহিনীর চিকিৎসকেরা। মুক্তিবাহিনীর প্রখর দৃষ্টির সামনে সকল প্রকার চুরি-ডাকাতী-রাহাজানী বন্ধ হয়ে গেছে। রাজাকার আর দেশী দুষমণেরা পালিয়ে গেছে পাক-বাহিনীর ছত্রছায়ার অধিকৃত এলাকায় সাতক্ষীরা শহরে। হানাদার পাকবাহিনী দালালদের মাধ্যমে মুক্ত এলাকার খাদ্যসামগ্রী অধিকৃত এলাকায় পাচার করে যাতে কৃত্রিম অভাব সৃষ্টি করতে না পারে সে দিকেও সদ্যসজাগ মুক্তিবাহিনী প্রখর দৃষ্টি রেখেছে।

মুক্ত এলাকার বাইরে সকল প্রকার জিনিষ পাচার তারা বন্ধ করে দিয়েছে। শত্রুপক্ষের হামলার আশঙ্কা থাকায় তারা সকল সময় জনতার পাশে পাশেই রয়েছেন যাতে জনসাধারণ পাকপশুর আক্রমণে অসহায় হয়ে না পড়ে। জরুরী পরিস্থিতিতে মুক্ত এলাকার—ছােটখাট প্রশাসনিক কাজ মুক্তিবাহিনীর বীর সৈনিকরা নিজেরাই দেখছেন। মুক্ত এলাকায় জীবনের নিশ্চয়তা পেয়ে বাংলাদেশের ছিন্নমূল মানুষ যারা এখানে ফিরে আসছেন মুক্তিবাহিনী তাদের ঘরবাড়ী তৈরী করে দিয়ে নতুন বাংলাদেশের গােড়া পত্তন করছে। গড়ে তুলছে সুখী সমৃদ্ধ জীবনে চলার সিড়ি। বাস্তবায়িত হয়ে চলেছে শেখ মুজিবের লালিত স্বপ্ন। একশত আশি বর্গমাইলের এই এলাকায় ঘরে ঘরে এখন উড়েছে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের রক্তাক্ত পতাকা।

জয়বাংলা (১) ॥ ১ : ২৮ ॥ ১৯ নভেম্বর ১৯৭১

সূত্র : গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ – খন্ড – ০৪