রংপুরের আরও বিস্তীর্ণ অঞ্চল মুক্ত
(রণাঙ্গন প্রতিনিধি) বাংলাদেশ ন্যাপের রংপুর অফিস হইতে প্রেরিত খবরে জানা যায় যে, রংপুর জেলার আরও বিস্তীর্ণ অঞ্চল। মুক্ত করা হইয়াছে। মুক্তিযােদ্ধারা সম্প্রতি এক অভিযান চালাইয়া লালমনির হাট থানার কুলাঘাট, বড় বাড়ী ও পঞ্চগ্রাম ইউনিয়ন হইতে পাক সেনাদের বিতাড়িত করিয়া এ অঞ্চলটি মুক্ত করিয়াছে। | ঐ অভিযানে পাক দালাল কুলাঘাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাজী আব্দুল করিম ও চৌকিদার উপশু খতম হইয়াছে। আগে ঐ এলাকার হাটবাড়ী নামক হাটে পাক সৈন্য ও রাজাকারেরা লুটতরাজ করিত। একদিন লুঠ করিয়া লালমনির হাট যাওয়ার সময় মুক্তিফৌজ তাহাদের আক্রমণ করে। ১ জন পাক সেনা নিহত হয়। অন্যান্যরা পলায়ন করে। দুইটি রাইফেলও মুক্তিফৌজ দখল করিয়াছে। লুটের মাল প্রকৃত মালিকদের দেওয়া হইয়াছে। ঐ হাটে এখন ইজারা বন্ধ।
ইহাছাড়া, তিস্তা নদীর তীরবর্তী রাজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও মজুতদার দালাল রহমানকে খতম করা হইয়াছে। মােগলহাটে এক অভিযানে পাক সেনাদের পর্যন্ত এবং রত্নাই নদীর রেল সেতুর দক্ষিণাংশ গভীর খাদ কাটিয়া বিচ্ছিন্ন করা হইয়াছে। লালমণির হাট শহরে অতর্কিত আক্রমণে গুন্ডা সর্দার সগীরের ১১ জনকে হত্যা করা হয়। ইহারা লুটপাট করিত। প্রতিশােধে পাক সেনারা শহরে ব্যাপক নির্যাতন চালায়। এই নির্যাতনের হাত হইতে জমাতে ইসলামীর দালাল মােশারফ হােসেনও রেহাই পায় নাই। তাহার বাড়িটিও পুড়িয়া ছাই হইয়া গিয়াছে। স্থানীয় লােকদের সহায়তায় মুক্তিফৌজ লালমণিরহাট-রইসবাগের মধ্যবর্তী এক মাইল রেলপথ নিশ্চিহ্ন করিয়াছে। আজিতমারী ও কাকিনার মধ্যবর্তী আরও এক মাইল রেলপথ অনুরূপভাবে সমতল করা হইয়াছে। এইসব অভিযানে হাজার হাজার কৃষক অংশ গ্রহণ করেন। হাতিবান্ধা রেলষ্টেশনে পাক বাহিনী দুইখানী প্যাসেঞ্জার ট্রেন সহ আটকা পড়িয়া আছে। তাহাদের যাইবার কোন পথ নাই। ৭ই অক্টোবর মুক্তিবাহিনী মােগলহাটে এক সংঘর্ষে পাক বাহিনীর কয়েকটি বাংকার নষ্ট করিয়া দিয়াছে। ১০ই অক্টোবর কালীগঞ্জ থানার ভেলাবাড়ী হাটে এক সংঘর্ষে ১৭ জন পাক সেনা খতম, ১০টি রাইফেল, ৩টি চীনা রাইফেল, ২টি স্টেনগান ও ১টি লাইট মেশিনগান হস্তগত হইয়াছে। এক কথায় রংপুর সেকটরে মুক্তিফৌজ আগাইয়া চলিয়াছে।
নতুন বাংলা ॥ ১:১১ ২৮ অক্টোবর ১৯৭১
সূত্র : গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ – খন্ড – ০৪