বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত করেই হাতিয়ার ছাড়বাে
টাঙ্গাইলের মুক্ত এলাকার জনসভায় বীর কাদেরের ভাষণ। মুজিবনগর থেকে ফেরার পর মুক্ত এলাকার কোন এলাকার কোন এক অঞ্চলে প্রথম জনসভায় জনাব কাদের ভাষণ দিচ্ছিলেন। ২২শে অক্টোবর মাহে রমজানের প্রথম দিনে বেলা ৩-১০ মিনিটে মওলানা জয়নুল আবেদীন হাদীর কোরান তেলাওয়াতের মাধ্যমে এই জনসভার শুভ সূচনা হয়। যুদ্ধ এখনও শুরু হয়নি : জনাব সিদ্দিকী তার ভাষণে বলেন-বাংলাদেশ মুক্তি সংগ্রামের প্রায় সাত মাস অতিবাহিত হতে চলেছে। এ যুদ্ধ নয়-প্রস্তুতি মাত্র। ২৩ বৎসরের প্রস্তুতি নিয়ে ২৫শে মার্চের রাত্রে ওরা আমাদের উপর ঝাপিয়ে পড়েছে। আমরা ৭ মাসের প্রস্তুতিতে এখন যুদ্ধ করবাে। মুজিব নগরে বিভিন্ন সময় আমাকে জিজ্ঞাস করা হয়েছে যােগাযােগ এবং খাদ্য কে দেয়? আমি বলেছি যখন দূরালাপনী ছিল না, তখন জনসাধারণ যেভাবে যােগাযােগ করিয়ে দিত, আমাদের বেলাও তাই-ই হয়েছে। সাধারণ মানুষ আমার খাবার দেয়।
বাঙলার সাড়ে সাত কোটি মানুষ যাকে নেতা বলে স্বীকার করেছেন, তাকে কারাগারে রেখে জালিমের হাতে কামান রেখে কোন আপােষ হতে পারে না। বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত করেই হাতিয়ার ছাড়বাে : জনাব সিদ্দিকী বলেন, ‘৫২-র ভাষা আন্দোলনে, ‘৬২-র শিক্ষা কমিশন আন্দোলনে ‘৬৯-র গণজোয়ারে, ‘৭০-র নির্বাচনে আমরা জয়ী হয়েছি। ‘৭১-র এর এ যুদ্ধেও আমরা জয়ী হব। বঙ্গবন্ধুকে যে কোন কারাগারেই রাখা হউক না কেন, তাকে মুক্ত করেই ছাড়াবাে। এখনও সময় আছে : সাধারণ ক্ষমা ঘােষণা করে তিনি বলেন আত্মসমর্পণ হলে দালাল এবং রাজাকারদের এখনও ক্ষমা করা হবে। ধৈর্যশীল হতে হবে জনগণকে আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন আপনারা ধৈর্য্য ধরেন। দেশ স্বাধীন হতে আর বেশি বিলম্ব নেই। আপনারা পাট বিক্রি করতে পারবেন। তবে পাট ক্রেতাকে মণ প্রতি এক টাকা করে মুক্তি বাহিনীতে চাঁদা দিতে হবে। ঢাকা টাঙ্গাইল ময়মনসিংহ ও পাবনার বেসামরিক প্রধান তার জ্ঞান গম্ভীর ভাষণে বলেন-বাংলাদেশের বুক থেকে হানাদারদের খতম না করা পর্যন্ত এ যুদ্ধ চলবে। ত্যাগ তিতীক্ষা স্বীকার করেই আমরা যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছি। কারাে ধার করা স্বাধীনতা আমরা চাই না। আমরা গাজী হয়ে যুদ্ধ করেছি। গাজী হয়েই যুদ্ধ শেষ করবাে। বঙ্গবন্ধুকে হানাদার গােষ্ঠীর কারাগার থেকে ছিনিয়ে আনবই আনব।
রণাঙ্গন (১) ॥ ১: ৬ ॥ ২৪ অক্টোবর ১৯৭১
সূত্র : গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ – খন্ড – ০৪