You dont have javascript enabled! Please enable it!

 মুক্ত অঞ্চলের মুক্ত কথা

পর্যটক পাক হানাদারদের মনােবল হিমাঙ্কে নেমে এসেছে রংপুর জেলার কোন একটি মুক্তাঞ্চলে মুক্তিবাহিনীর কমান্ডান্ট জানান। তিনি আরও বলেন ওদের মনােবল যতই ভেঙ্গে পড়ছে আমাদের মনােবল ততই উদ্দীপ্ত হচ্ছে। দলে দলে বাংলাদেশের যুবকরা মুক্তিবাহিনীতে যােগদান করছে। প্রয়ােজনানুসারে ব্যাপকভাবে প্রশিক্ষণ শিবির স্থাপন করতে না পারায় কয়েক হাজার শিক্ষণ গ্রহণেচ্ছু যুবককে ওয়েটিংলিষ্টে অন্তর্ভুক্ত করে রাখা হয়েছে। গেরিলা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তি বাহিনীর সৈনিকদের তৎপর আক্রমণের ফলে রংপুর সেক্টরে বিভিন্ন সংঘর্ষে খানসেনা ও মুক্তিবাহিনী সদস্যদের তুলনামূলক আহত ও নিহতের হার যথাক্রমে ১০০-৫ জন। বাউরা ও পাটগ্রামের মুক্তাঞ্চলে কয়েকটি চিকিৎসা কেন্দ্র খােলা হয়েছে। এই সব চিকিৎসা কেন্দ্রে সর্বাপেক্ষা অভাব রয়েছে উপযুক্ত ঔষধপত্রের। মুক্তি বাহিনীর আহত সৈনিকদের প্রয়ােজনানুসারে যে রক্তের প্রয়ােজন তারও অভাব দেখলাম। জনৈক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি বলেন বাংলাদেশ তথা তার। নিপীড়িত নাগরিকদের প্রতি সহানুভূতিশীল রাষ্ট্র থেকে আমরা সাহায্যের ভিত্তিতে আরও ঔষধপত্র ও চিকিৎসার সরঞ্চম প্রভৃতির জন্য আবেদন করছি। বিনা চিকিৎসায় একটি মুক্তিবাহিনীর সৈনিকের মৃত্যু দশজন খানসেনার নিরাপত্তা লাভের কারণ হবে। কারণ দশজন খানসেনার মােকাবিলা একজন মুক্তিবাহিনীর সদস্য আজ নিতে পারে। স্বাধীন দেশের স্বেচ্ছাসেবী প্রতিটি সৈনিকের মনােবল ভাড়াটে খানসেনাদের মনােবল থেকে অনেক বেশী।

রংপুর জেলার কয়েকশত বর্গমাইল মুক্ত এলাকায় অসামরিক প্রশাসকগণ বিশেষ যােগ্যতার সাথে প্রশাসন ব্যবস্থাকে জোরদার করে তুলেছেন। থানা শহর পাটগ্রাম ও রেলবন্দর বাউড়ায় দোকানপাট যথারীতি খােলা দেখলাম। পূর্ব নির্দিষ্টবারে পাটগ্রাম, বাউড়া ও বুড়িমারীতে সপ্তাহে দুবার করে হাট বসছে। ঐসব হাটে বাজারে ভারতীয় মুদ্রা অবাধে চলছে। এমন বহু দোকানদার দেখলাম যারা পাক মুদ্রা গ্রহণ করতে চাইছে না। বুড়িমারী, ধবলসূতী, বাউড়ার বাংলাদেশ সরকার কাষ্টম চেকপােষ্ট স্থাপন করে আমদানী ও রপ্তানী। দ্রব্যের উপর কাষ্টম চার্জ নিচ্ছে। কয়েক মাসের হিসাবে দেখলাম এই সব চেকপােষ্টে মাসে গড়ে প্রায় ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকার আমদানী ও রপ্তানী কর হিসাবে পাচ্ছে। ধবলসূতী ক্যাম্প ইনচার্জ প্রাক্তন পাক-একসাইজ অফিসার-জনৈক হিন্দু ধর্মাবলম্বী মিঃ সরকার জানালেন যে আর কিছু ছােট ছােট চেক-পােষ্ট স্থাপন করলে ও আরও তৎপর হলে ট্যাক্স আদায় অনেক গুণ বেড়ে যাবে। বর্তমানে তামাকের উপর মণপ্রতি ট্যাক্স দশ টাকা, পাটের উপর দুটাকা, হাস-মুরগী প্রভৃতির উপর ঐসবের বাজার দরের দুই শতাংশ ট্যাক্স হিসাবে গ্রহণ করা হয়ে থাকে। বর্তমানে দেখলাম ৩২টি আইটেমের উপর ট্যাক্স নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।

স্বদেশ ॥ ১: ৪  ২১ অক্টোবর ১৯৭১

সূত্র : গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ – খন্ড – ০৪

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!