You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.10.10 | ব্রহ্মপুত্র নদের পূর্বতীরবর্তী বিস্তৃর্ণ এলাকা জুড়ে মুক্তাঞ্চল - সংগ্রামের নোটবুক

ব্রহ্মপুত্র নদের পূর্বতীরবর্তী বিস্তৃর্ণ এলাকা জুড়ে মুক্তাঞ্চল

(ষ্টাফ রিপাের্টার)। সিলেট, ৬ই সেপ্টেম্বর :-ব্রহ্মপুত্র নদের উভয় তীরে মুক্তিবাহিনীর তৎপরতা বর্তমানে অস্বাভাবিক রকমে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে গেরিলা যােদ্ধাদের হাতে মার খেয়ে খেয়ে পাকসেনারা রংপুর জেলার রাহুমারী ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। আসাম সীমান্ত অতিক্রম করে ব্রহ্মপুত্র নদ যেখানে দক্ষিণ দিকে মােড় নিয়ে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে, সেখান থেকে শুরু করে ব্রহ্মপুত্রের সমগ্র পূর্বতীরবর্তী এলাকা এবং দক্ষিণে প্রায় ৫০ কিলােমিটার বিস্তৃত এই বিরাট ভূখন্ড মুক্তিবাহিনী সম্পূর্ণ বর্গকিবলমুক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন। প্রসঙ্গত: উল্লেখযােগ্য যে, বহুদিন পূর্ব থেকেই তিস্তা নদীর নিয়ন্ত্রণ সম্পূর্ণরূপে মুক্তিবাহিনীর হাতে এসে যায়। বর্তমানে মুক্তিবাহিনী ব্রহ্মপুত্রের পশ্চিম তীরকে হানাদারবাহিনীর কবলমুক্ত করার জন্য ব্যাপক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। সম্ভবত: অচিরেই মুক্তিবাহিনী শক্রকবলিত গাইবান্ধা এলাকা থেকে শত্রুদের হটিয়ে দেবার জন্য হামলা চালাবেন।  এদিকে মুক্তিবাহিনীর আক্রমণের মুখে টাল সামলাতে না পেরে পাক বাহিনী সরে যেতে যেতে শেষ পর্যন্ত চিলমারীতে গিয়ে ছাউনি ফেলেছে। রাজশাহী এলাকায় মুক্তিবাহিনীর গেরিলা আক্রমণের ফলে সেখানে রাজাকারসহ অন্যূন পাকবাহিনীর ১০০ জন চমু নিহত ২৫০ জন আহত হয়েছে। ময়মনসিংহ সেক্টরের মুক্তিসেনারা হবিগঞ্জের লখাইয়ের নিকটবর্তী একটি সড়ক সেতু উড়িয়ে দিয়েছেন।  গত ১লা অক্টোবর পাকসেনারা জয়ন্তিয়াপুর থেকে অগ্রসর হতে চেষ্টা করলে মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে আবার পিছু হটে যেতে বাধ্য হয়। এখানে মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে ৭ জন খানসেনা নিহত ও অপর ২০ জন আহত হয়।

সিলেটে মুক্তিবাহিনীর তৎপরতা তীব্রতর

সিলেট সেক্টরে সম্প্রতি পাকবাহিনীর ক্ষয়ক্ষতি এমন ব্যাপক আকার ধারণ করেছে যে, আহতদেরকে দূরবর্তী কোন সামরিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য ঢাকা থেকে বিমান এম্বুলেন্সের সাহায্য চেয়ে পাঠানাে হয়, কারণ সিলেটের সবগুলি হাসপাতালই বহু পূর্ব থেকে আহত সৈনিকদের ভিড়ে গুদামে পরিণত হয়েছে।  মুক্তিবাহিনীর দুর্ধর্ষ গেরিলারা সম্প্রতি এক অভিযান চালিয়ে সিলেটের একটি বিদ্যুৎ সরবরাহকেন্দ্র ধ্বংস করে দিয়েছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া হানাদারদের ঘায়েল করার জন্য খােদ সিলেট শহরে। বিভিন্নস্থানে তারা মায়ার ফাদ পেতে রেখেছেন। প্রায় সমস্ত সড়ক পথেই গােপনে পুতে রেখেছেন। মাইন।  সিলেট সেক্টরে মুক্তিবাহিনীর তৎপরতা ব্যাপক ও নিরবচ্ছিন্ন হওয়ার ফলে রাজাকার বাহিনীর লােকেরা বিপুল সংখ্যায় মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করছে। গত একপক্ষ কালের মধ্যে কমপক্ষে ২০০ জন রাজাকার আত্মসমর্পণ করে। মুক্তিযােদ্ধারা সম্প্রতি মাইলাম ও বালাট ক্যাম্পের শরণার্থীদের মধ্যে ৫০০ টন গম বিতরণ। করেন। উল্লেখযােগ্য যে, গত মাসে পাকবাহিনীর রসদবাহী জাহাজ থেকে যে বিপুল পরিমাণ খাদ্য মুক্তিবাহিনী দখল করেন, এই গম তারই অংশ বিশেষ।

সাপ্তাহিক বাংলা ॥ ১: ৩ ॥ ১০ অক্টোবর ১৯৭১

সূত্র : গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ – খন্ড – ০৪